<p>বেনাপোলে দৃষ্টিনন্দন পৌরবাস টার্মিনালটি উদ্বোধনের এক বছর সাত মাস পার হলেও চালু হয়নি কোনো কার্যক্রম। পড়ে আছে অকেজো হয়ে। ফলে দিনকে দিন বেনাপোল বন্দরে বাড়ছে ভয়াবহ যানজট। যশোর-বেনাপোল হাইওয়ে বেনাপোল বাজার ও বন্দরের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোকাল বাস ও দূরপাল্লার পরিবহন দাঁড়িয়ে থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভারতগামী পাসপোর্ট যাত্রী ও বেনাপোল পৌরবাসীদের। ব্যাহত হচ্ছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য।</p> <p>বেনাপোল পৌরসভার তথ্য মতে, নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী বাস টার্মিনালটি দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়েও দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক বাস টার্মিনাল। এ ছাড়া টার্মিনালটিতে বিশ্রামাগার, টয়লেট, পুলিশ বক্স যাত্রীদের জন্য বসার ব্যবস্থাসহ নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।</p> <p>বেনাপোল পৌরসভা ও বন্দর এলাকায় যানজট নিরসনে বেনাপোলের আমড়াখালীতে পাঁচ একর জমিতে ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় দৃষ্টিনন্দন একটি বাস টার্মিনাল। টার্মিনালটিতে ২০২৩ সালের ৪ মার্চ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেও অজ্ঞাত কারণে কার্যক্রম চালু হয়নি এত দিন পার হলেও। এখন ভবনটি অবহেলায় পড়ে থাকায় নষ্ট ও অকেজো হতে চলেছে ভাবনের নানান অংশ। গ্লাসগুলো ভেঙে ভেঙে পড়েছে। দিন দিন ব্যয়বহুল এ টার্মিনালটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। <br /> তথ্য মতে, বেনাপোল পৌর বাস টার্মিনাল নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের মে মাসে। এক বছরের মাথায় অর্থের অভাবে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। সাড়ে তিন বছর নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার পর পরবর্তী সময়ে তা ২০২৩ সালে নির্মাণকাজ শেষ হয় ও ওই বছরের ৪ মার্চে উদ্বোধন হয়।</p> <p>এদিকে বাস টার্মিনালের অভাবে মহাসড়কের ওপর পার্কিং করা হচ্ছে বাস। এতে যানজট ও দুর্ঘটনা ঘটছে। সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটের দেশ-বিদেশের যাত্রীরা। যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে বাস টার্মিনালটি দ্রুত চালুর আহ্বান ভুক্তভোগীদের।</p> <p>পাসপোর্টধারী যাত্রী অরুণ কুমার জানান, পৌর বাস টার্মিনাল ব্যবহার না হওয়ায় সেবাবঞ্চিত হচ্ছি। ভোর ৪টায় ঢাকা থেকে বাস পৌঁছয় বেনাপোল বন্দরে। কিন্তু বিশ্রামের কোনো জায়গা নেই। নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কায় থাকতে হয়।</p> <p>বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির সেক্রেটারি আজিম উদ্দীন গাজি জানান, ভারতগামী যাত্রীদের কাছ থেকে বছরে সরকারের প্রায় ২০০ কোটি টাকা ভ্রমণ খাতে আয় হয়। আমদানি বাণিজ্য থেকে আসে ছয় হাজার কোটি টাকা। সরকার ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পৌর বাস টার্মিনালটি উদ্বোধন হওয়া সত্ত্বেও আজও চালু হয়নি টার্মিনালটি।</p> <p>সাবেক বেনাপোল পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ভারতগামী যাত্রীদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন দুই শতাধিক দূরপাল্লার বাস আসে বেনাপোল বন্দরে। তারা বেনাপোল চেকপোস্ট সীমান্তে জড়ো হওয়াতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। বাস টার্মিনাল ব্যবহার না হওয়ায় যাত্রী ভোগান্তিও হচ্ছেই, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।’</p> <p>যশোর মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দীন পাপ্পু বলেন, ‘এই টার্মিনালটি কেন চালু হচ্ছে না তা আমাদের অজানা। বিশেষ একটি মহলের অদৃশ্য শক্তির কারণে অত্যাধুনিক পৌর বাস টার্মিনালটি চালু হচ্ছে না। বাস টার্মিনাল চালু হলে সেখানে পাঁচ শতাধিক পরিবহন ও লোকাল বাস রাখবে চালকরা। এতে বেনাপোল বন্দরের যানজট কমে আসবে।’</p> <p>দ্রুত টার্মিনালটি চালু করার আশ্বাস দিয়ে শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. কাজী নাজিব হাসান জানান, এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর বেশ কয়েকবার চিঠি দিয়েছে বেনাপোল স্থলবন্দর কতৃপক্ষ। দ্রুত টার্মিনালটি চালু করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি (জেলা প্রশাসক)।</p>