<p>অনিয়ম ও দুর্নীতির বরপুত্র ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে বরিশাল সিটির সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে একতরফা জয় পান তিনি। ক্ষমতায় থাকাকালে বরিশালে লুটপাট ও দুর্নীতির এক অন্ধকার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। </p> <p>সাদিক আব্দুল্লাহর বাবা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ছেলে। আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="পুলিশ থেকে এমপি হাবিবর, সম্পদ বাড়িয়েছেন সাড়ে ৩০০ গুণ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/25/1729852675-d61fe35c068d519894b6e91aaa14608c.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>পুলিশ থেকে এমপি হাবিবর, সম্পদ বাড়িয়েছেন সাড়ে ৩০০ গুণ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/25/1439048" target="_blank"> </a></div> </div> <p>স্থানীয়রা জানায়, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর নকশাবহির্ভূত নির্মাণের কারণ দেখিয়ে বাড়ি ভেঙে দেওয়া, জরিমানার নামে টাকা আদায়, ব্যবসায়ীদের কাছে কমিশন দাবি, ভবন নির্মাতাদের কাছে ফ্ল্যাট দাবি, রাজনৈতিক বিরোধীদের মারধর, কথায় কথায় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করাসহ বহু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে সাদিকের বিরুদ্ধে। তার নির্দেশে না চললে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় জেল পর্যন্ত খাটাতে হয়েছে অনেককে। পূজা উদযাপন পরিষদের কমিটি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি, বরিশাল ক্লাবও দখল করেছেন তিনি। কিন্তু এত কিছুর পরেও কেউ টুঁ শব্দ করতে পারেনি তার বিরুদ্ধে। তবে তিনি ক্ষমতা হারানোর পর তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত হতে শুরু করেছে বরিশালবাসী দীর্ঘদিন ধরে চাপা ক্ষোভ।</p> <p>স্থানীয় এক ব্যবসায়ী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘যদি তার নির্দেশ অনুযায়ী না চলা হতো, তাহলে বুলডোজার দিয়ে আমাদের ভবন ভেঙে দেওয়া হতো। বরিশালে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পেত না।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="নিখোঁজের পর জঙ্গলে মিলল আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/25/1729851763-2f16dc3c92e768bceb82988e3aea32dc.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>নিখোঁজের পর জঙ্গলে মিলল আওয়ামী লীগ নেতার মরদেহ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/25/1439043" target="_blank"> </a></div> </div> <p>সাদিক আব্দুল্লাহ নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ছয়জন অনুসারী দিয়ে পুরো নগরী পরিচালনা করতেন। নগরের সব হাটবাজার, লঞ্চঘাট, খেয়াঘাট নিয়ন্ত্রণ করতেন তার অন্যতম অনুসারী নগর আওয়ামী লীগের শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল। তিনি সাদিকের চাঁদাবাজির টাকা তুলতেন। বর্তমানে টুটুল ভারতে অবস্থান করছেন।</p> <p>শ্রমিক লীগ নেতা রঈজ আহমেদ মান্না বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি করতেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, চাঁদা না দিলে কাউন্টার বন্ধ করে দেওয়া হতো। এ ছাড়া ছাত্রলীগ নেতা সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত সিটি করপোরেশনের প্ল্যান পাস করানোর বিনিময়ে ঘুষ নিতেন।</p> <p>সাদিকের ক্ষমতা ব্যবহারের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে বরিশাল বিএম কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মঈন তুষার। তিনি অভিযোগ করেন, মহানগর আওয়ামী লীগ একতরফা গঠিত হয়েছে। সাদিক নিজের বলয় দিয়ে একতরফা দল চালাতেন, যেখানে ব্যক্তির স্বার্থের জন্য সংগঠনকে ব্যবহার করা হয়েছে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="খান ইউনিসে ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ২০" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/25/1729850763-440decaaa5ab1405377945c4ee02dbeb.gif" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>খান ইউনিসে ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ২০</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/world/2024/10/25/1439039" target="_blank"> </a></div> </div> <p>বরিশাল নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি রেজাউল হক হারুন বলেছেন, এখানে ব্যক্তি রাজনীতি হয়েছে। হাসানাত পরিবার এই রাজনীতিকে শো করে ব্যবসা করেছে।</p> <p>এদিকে মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন সম্প্রতি একটি জাতীয় গণমাধ্যমে বলেন, নেতারা দল করেননি, ক্যাডার দিয়ে লুটপাট করছেন।</p> <p>গত বরিশাল সিটি নির্বাচনে সাদিককে সরিয়ে তার আপন চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে (খোকন সেরনিয়াবাত) মনোনয়ন দেওয়া হয়। এ সময় তার পক্ষ হয়ে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় ছিলেন সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম। সে সময় বরিশালে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছিলেন, বরিশাল মুক্ত হয়েছে। বরিশালের মানুষ অনেক কষ্টে দিন পার করেছে। সাদিকের মতো ব্যক্তিদের কারণে বরিশালের জনগণ ভয় এবং শোষণের মধ্যে ছিল।’</p> <p>সাদিকের বিরুদ্ধে বরিশাল ক্লাব দখলের অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ক্লাবের সভাপতি হতে হলে ১০ বছরের সদস্যপদ প্রয়োজন, অথচ মাত্র তিন বছরের সদস্য থাকাকালীনই তিনি ক্লাবের সভাপতি হন। তিনি নিজের দলীয় লোকজনকে সদস্যপদ দিয়ে পুরো ক্লাবকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন।</p> <p>সাদিকের বিরুদ্ধে আরো একটি বড় অভিযোগ হলো, তার দ্বৈত নাগরিকত্ব এবং বিদেশে সম্পত্তি গোপন করা। তার মনোনয়নপত্রে যুক্ত আমেরিকার সম্পত্তির তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠেছে। সাদিক এবং তার স্ত্রী উভয়েই আমেরিকার নাগরিক এবং তাদের সেখানে বাড়ি রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিউ ইয়র্কের কুইন্স ভিলেজে তার একটি বাড়ি রয়েছে, যার ঠিকানা ৮৯-৬৮, ২১৬ স্ট্রিট, কুইন্স ভিলেজ, নিউ ইয়র্ক সিটি, ১১৪২৭।</p> <p>৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সাদিক আব্দুল্লাহর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তবে এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগের কোনো চেষ্টা সফল হয়নি।</p>