<p>৫৭ বছর বয়সী মো. আলাউদ্দিন মল্লিক দীর্ঘ ১৬-১৭ বছর ধরে ঢাকার মধ্য বাড্ডা বৈশাখী সরনী এলাকায় একটি বাসায় দারোয়ানের কাজ করতেন। এর আগে গ্রামের বাড়ি ভোলা সদর উপজেলায় দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের দক্ষিণ বালিয়া এলাকার তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ শিকার করেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। এতে যে টাকা আয় হত তা দিয়ে স্ত্রী ও দুই ছেলে এক মেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণ হয়ে যায় আলাউদ্দিনের। তাই সুখের আসায় গত ১৬-১৭ বছর আগে পাড়ি জমান ঢাকায়। ঢাকায় গিয়ে সামান্য বেতনে একটি বাসায় দারোয়ানের চাকরি নেন। বাড়ির মালিকের দেওয়া ওই ভবনের নিচতলায় একটি রুমে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করতেন।</p> <p>সংসারে অভাবের কারণে মো. আলাউদ্দিন মল্লিকের বড় ছেলে আল আমিন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে কাজে যোগ দেন। রাজ মিস্ত্রিসহ বিভিন্ন দিনমজুরী কাজ করে টাকা জোগাড় করে প্রাইভেটকার চালানো শিখেন আল আমিন। গত এক বছর ধরে ঢাকার একটি পত্রিকা অফিসে প্রাইভেটকার চালানোর চাকরি নেয় সে। বাবা-ছেলের মাসিক বেতন দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছোট ছেলে ও মেয়ের পড়ালেখা চলছিল খুব ভালোভাবেই। কয়েকমাস আগে বড় ছেলে আল আমিনকে বিয়ে করিয়েছেন আলাউদ্দিন। গত ৫ আগস্ট হঠাৎ ঢাকার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আলাউদ্দিন মল্লিক শহীদ হন। পুলিশের ছোড়া বুলেটে নিমিষেই তার সুখের সংসার এলোমেলো হয়ে যায়। বাবার মৃত্যুর পর বড় ছেলে আল আমিন প্রাইভেটকার চালানো বাদ দিয়ে বাবার দারোয়ানের চাকরিতে যোগ দেন। স্বামীর মৃত্যুতে সন্তানদের নিয়ে দুঃখের সাগরে ভাসছেন স্ত্রী রাজিয়া বেগম।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ব্যারিস্টার সুমনের জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে প্রেরণ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/27/1730003654-d99119ca42e35bfa7fbc7fba9ab1d88a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ব্যারিস্টার সুমনের জামিন নামঞ্জুর, কারাগারে প্রেরণ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Court/2024/10/27/1439628" target="_blank"> </a></div> </div> <p>শহীদ আলাউদ্দিন মল্লিকের স্ত্রী রাজিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, স্বামী ও বড় ছেলের মাসিক বেতন দিয়ে তাদের সংসার ভালোই চলছিল। মেয়ে কুলছুম ভোলার চরফ্যাশন কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। আর ছোট ছেলে ইয়ামিন ২৬ পাড়ার কুরআনে হাফেজ। তার স্বামী আলাউদ্দিন নিজে কষ্ট করলেও তাকে দিয়ে জীবনে কোনো কাজ তো দূরের কথা বাজার থেকে কোনো কিছু কিনতেও পাঠাননি। স্বামীর মৃত্যুতে তিনি নিজেও এখন অন্যের বাসায় কাজ করেন। নিজের থাকার বাসাটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয়ে বড় ছেলেকে প্রাইভেটকার চালানো বাদ দিয়ে দারোয়ানিতে দিয়েছেন। বর্তমানে স্বামীর রেখে যাওয়া প্রায় চার লাখ টাকার মতো ঋণ রয়েছে। ছোট ছেলে-মেয়ের পড়ালেখা ও মানুষের ঋণসহ সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।</p> <p>আলাউদ্দিনের বড় ছেলে আল আমিন জানান, তার বাবা পছন্দ করে তাকে বিয়ে করিয়েছেন। এখনো বউ তুলে আনা হয়নি। গত ৫ আগস্ট বিকেলে তার বাবা আসরের নামাজ পড়তে বাসা থেকে বের হয়ে মসজিদে যায়। কিন্তু মাগরিবের নামাজের সময় হলেও সে বাসায় ফিরেনি। হঠাৎ সন্ধ্যার পর তার মোবাইল থেকে বাসার নাম্বারে ফোন আসে সে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে রয়েছে। এ খবর পেয়ে দ্রুত বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে চলে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পান তার বাবার মাথায় বামপাশে গুলি লেগেছে। পরে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হলে চিকিৎসক জানান, তাকে আইসিইউতে রাখতে হবে। কিন্তু ঢাকা মেডিক্যালে আইসিইউ খালি নেই। পরে সেখান থেকে রাতে শ্যামলী সিটি কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে আইসিইউতে রাখা হয়। পরদিন ৬ আগস্ট ভোর ৬টার দিকে তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার পর ৬ তারিখ ঢাকা থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে গ্রামের বাড়িতে এনে রাতেই অন্যের যায়গায় দাফন করা হয়।</p> <p>আল আমিন আরো জানান, তার বাবার চিকিৎসা খরচসহ প্রায় চার লাখ টাকা দেনা রয়েছে। এ ছাড়াও ছোট ভাই ও বোন পড়ালেখা করেন। বাবা মারা যাওয়ার পর নিজের প্রাইভেটকার চালানো চাকরি ছেড়ে দিয়ে বাবার চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে খুব কষ্টে দিন কাটে তাদের। সংসারের খরচ জোগাতে তার মা এই বয়সে এসে নিজেও অন্যের বাসায় কাজ করেন। তার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচারের পাশাপাশি সরকারের কাছে তার এবং বোনের জন্য একটি চাকরির দাবি করেন।</p>