<p>শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় চার মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে আন্দোলন করার সময় পুলিশের গুলিতে আহত চম্পা খাতুন (২৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। রবিবার (২৭ অক্টোবর) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে মারা যান তিনি। একই ঘটনায় আহত মোরশেদা বেগম (৩৫) হাসপাতালে ভর্তি আছেন।</p> <p>বুধবার সকাল ১১টার দিকে আশুলিয়ার নরসিংহপুর-কাশিমপুর সড়কের বাংলাবাজার এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড কারখানার তৈরি পোশাক শ্রমিক চম্পা। <br /> তিনি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার আহমেদপুর গ্রামের চান্দু মিয়ার মেয়ে। স্বামী মো. মিঠু ও এক মেয়েকে নিয়ে আশুলিয়ার দিয়াখালী এলাকায় ভাড়া থেকে জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন তিনি।</p> <p>চম্পার বোন শম্পা বলেন, ‘আমার বোন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড কারখানায় সেলাই মেশিন অপারেটর হিসেবে কাজ করত। চার মাস ধরে তাদের বেতন দেয় না। এ নিয়ে তারা আন্দোলন করতে গেলে পুলিশ গুলি করে।’</p> <p>বেতন চাওয়া কি অপরাধ- এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, ‘আমার বোনের পেটে ও বাঁ হাতে গুলি লাগলে প্রথমে তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি করাই। রবিবার সকালের দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার বোন মারা যায়। কেন পুলিশ আমার বোনকে গুলি করে হত্যা করল।’ </p> <p>ওই দিন আহত শ্রমিকরা জানান, দেড় মাস আগে হঠাৎ করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এতে বিপাকে পড়েন কয়েক হাজার শ্রমিক। এ জন্য তিন দিন ধরে ওই কারখানাসহ আশপাশের আরো কয়েকটি কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা আন্দোলন করছিলেন। শ্রমিকদের দাবি ছিল, তিন মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু তাতে কর্তৃপক্ষ সাড়া দিচ্ছিল না।</p> <p>আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, ২৩ অক্টোবর সকালে আন্দোলনকারী শ্রমিকরা আশুলিয়ার নরসিংহপুর-কাশিমপুর সড়কের বাংলাবাজার এলাকায় রাস্তায় অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিতে চায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে শ্রমিকদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শটগানের গুলিতে আহত হন চম্পাসহ তিনজন।</p> <p>আহতদের মধ্যে রয়েছেন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেডের প্রিন্টিং অপারেটর মোর্শেদা বেগম (৩৫), সুইং অপারেটর চম্পা খাতুন (২২), শ্রমিক ববিতা আক্তার এবং সুসুকা গার্মেন্টসের শ্রমিক হালিমা খাতুন। তাদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ মোরশেদা ও চম্পাকে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। </p> <p>চম্পার লাশ রংপুরে দাফন করা হবে জানিয়ে তার খালা রাশেদা খাতুন বলেন, ‘বুকে গুলি লাগার কারণে চম্পা মারা গেছে। তার বাঁ হাতে গুলি লাইগা মাংস ছিঁড়ে গেছে। চম্পার দেড় বছরের মেয়েটা অকালে মা হারিয়ে এতিম হলো।</p> <p>আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘রবিবার সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নারী শ্রমিক চম্পা মারা গেছে বলে জেনেছি।’ </p> <p>তবে ঘটনার দিন তিনি বলেছিলেন, শ্রমিক বিক্ষোভের সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। কোনো ধরনের গুলি ছোড়া হয়নি। দৌড়াদৌড়ির সময় ইটের টুকরোর আঘাতে কেউ আহত হয়ে থাকতে পারেন।</p>