<p>তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের সেবা নিশ্চিত করে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখে স্থানীয় সরকার তথা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি)। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব হলো স্থানীয় সেবা প্রদান যেমন, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা বিতরণ। এ ছাড়া, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সেবা প্রদানেও তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দিঘলীয়া ইউপি চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি ও তাকে অপসারণের পর এই কার্যক্রমগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে। ফলে তৃণমূলের জনগণ বিভিন্ন সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। </p> <p>৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পতন এবং ক্ষমতার পালাবদলের পর থেকে দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউল আলম জুয়েল অনুপস্থিত ও সব ইউপি সদস্যর অনাস্থার কারণে তাকে অপসারণ করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমেদকে প্রশাসক হিসেবে পদায়ন করার পরও জনগণ তার নাগরিক সেবা প্রাপ্তিতে নানা ভোগান্তি এমনকি বঞ্চিত হচ্ছে। </p> <p>স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম কার্যত থমকে গেছে এবং ভাতা বিতরণ থেকে শুরু করে দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রমগুলোও স্থবির হয়ে পড়েছে। যারা ওয়ারিশ সনদ, চারিত্রিক সনদ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে ইউনিয়ন পরিষদে আসছেন, তারা দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও সেবা পেতে বিলম্ব হচ্ছে। কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হলেও তিনি যথাযথভাবে কাজ করছেন না। </p> <p>সোমবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সেবাপ্রার্থীদের জটলা দেখা যায়। জন্মসনদ, ওয়ারিশান সনদ, পরিচয়পত্র, প্রত্যয়নপত্রসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে পরিষদে আসেন তারা। কিন্তু চেয়ারম্যান না থাকায় হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে এসব সেবা গ্রহিতাদের। </p> <p>উপজেলার দিঘলীয়া ইউনিয়নের মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার জমি নামজারি ও জমা ভাগ (খারিজ) করার জন্য দ্বৈত প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন। দ্বৈত প্রত্যয়ন পত্রের জন্য দিনের পর দিন ঘুরছি। চেয়ারম্যান না থাকায় ইউনিয়নবাসী চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। এখান থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা প্রশাসন। এ কাজে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা পরিষদে ঘুরছি। প্রতিদিন যাতায়াতে অর্থ ও শ্রম ব্যয় করতে হচ্ছে।’</p> <p>দিঘলীয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা মো. আকাশ আলী, মো. জাকির হোসেন ও আলামিন জানান, আগামী ১০ নভেম্বর পুলিশের চাকরির জন্য প্রত্যয়ন পত্রের প্রয়োজন। প্রত্যয়ন পত্র না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। </p> <p>উপজেলার দিঘলীয়া ইউনিয়নের দিঘলীয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. ফরমান আলী জানান, ‘আমার মেয়ে তাসলিমা আক্তারের জন্ম নিবন্ধনের ভুল সংশোধন করার জন্য গত দুই মাস ধরে চেয়ারম্যান না থাকায় হয়রানির শিকার হচ্ছি। এ কাজে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলা পরিষদে ঘুরছি।’</p> <p>হতাশ হয়ে চাচিতারা গ্রামের মো. শরিফুল ইসলাম জানান, ‘আমার মায়ের মৃত্যু সনদের জন্য গত দুই মাসে উপজেলা প্রায় ১৫ দিন যাতায়াতের করেছি। এতে প্রায় আমার ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত মৃত্যু সনদ পায়নি।’</p> <p>ভুয়া গ্রামের জাকির মাহম্মুদ জানান, ‘আমার ছেলে ও মেয়ে জন্ম নিবন্ধনে স্বাক্ষরে জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে একাধিকবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও এসিল্যান্ড সারের স্বাক্ষর নিতে পারিনি। আজও প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে বসে আছি।’</p> <p>দিঘলীয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হানিফ আলী বলেন, পরিষদের চেয়ারম্যান না থাকলে একটু জটিলতা হবেই। তবে ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর আহমেদ। জরুরি প্রয়োজনে ভূমি অফিসে গিয়ে স্যারের সঙ্গে দেখা করে পরিষদের কার্যক্রম চলমান রাখতে হচ্ছে। সব ধরনের কার্যক্রম চলমান আছে। তবে জন্মনিবন্ধন বিষয়ে একটু সমস্যা হচ্ছে।</p> <p>উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শান্তা রহমান বলেন, এই ইউনিয়নে সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দায়িত্ব পালন করছে।</p>