<p style="text-align:justify">দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত আনিসুর রহমান লিটন ওরফে ফিঙে লিটন কারামুক্ত হয়েছেন। সোমবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তিনি মুক্তিলাভ করেন। লিটন প্রায় দুই দশক দেশের বাইরে থেকে যশোরসহ বিভিন্ন এলাকার অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন।</p> <p style="text-align:justify">এর আগে ক্ষমতার পালাবদলের পর গত ৪ সেপ্টেম্বর যশোরের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে লিটনকে কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল রবিবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাকে মুক্তির আদেশ দেন।</p> <p style="text-align:justify">যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, বেলা সোয়া ২টার দিকে লিটন কারাগার থেকে বেরিয়েছেন। এর পরপরই একটি গাড়িতে চেপে তিনি অজ্ঞাত স্থানে চলে যান।</p> <p style="text-align:justify">১৯৯৯ সালে রুজু হওয়া অস্ত্র আইনের একটি মামলায় লিটনের ১০ বছর কারাদণ্ড হয়েছিল। গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফারজানা ইয়াসমিনের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর কারাগারে থাকাবস্থায় তিনি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। </p> <p style="text-align:justify">গতকাল রবিবার বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ লিটনকে জামিনের আদেশ দেন। এই আদেশের কপি যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছালে আজ তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, ২০-২২টি মামলা মাথায় নিয়ে ২০০০ সালের দিকে ফিঙে লিটন ফেরারি হন। ২০০৪ সালের দিক থেকে তিনি ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে থাকতেন। বিদেশে অবস্থান করেই তিনি অপরাধ সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">গত ৪ সেপ্টেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করার দিন যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, লিটনের বিরুদ্ধে তার থানায় অন্তত তিনটি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে। আজ তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, সব মামলায় জামিন নেওয়ার পর লিটন কারামুক্ত হয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শরিফুল ইসলাম জানান, জামিননামা ও ছাড়পত্র যাচাই-বাছার করে লিটনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify"><strong>কে এই ফিঙে লিটন?</strong></p> <p style="text-align:justify">আনিসুর রহমান লিটন যশোর শহরের বারান্দী মোল্লাপাড়া এলাকার বদর উদ্দিনের ছেলে। অপরাধজগতে তিনি ‘ফিঙে লিটন’ নামে পরিচিত। কৈশোরেই তিনি জড়িয়ে পড়েন নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে।</p> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালের আগে কিশোর বয়সে এক বিডিআর সদস্যকে হত্যার মধ্যে দিয়ে অপরাধজগতে লিটনের উত্থান। এরপর নজরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নান, মনোয়ার হোসেন ইমন হত্যা ছাড়াও নানা অপরাধে তার নাম আসতে থাকে। তখনও তিনি দেশেই আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু ২০০৪ সালে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গঠনের পর দেশে কথিত ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটতে থাকে। সেই সময় জীবন বাঁচাতে লিটন দেশ ছাড়েন।</p> <p style="text-align:justify">এর পর থেকে তিনি ভারত, নেপাল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে থাকতেন। গোয়েন্দা সূত্র মতে, দেশের বাইরে থাকাবস্থায় তিনি অন্য একটি দেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে সমর্থ হন। ফলে বিভিন্ন দেশে তার যাতায়াতে সমস্যা হয়নি।</p> <p style="text-align:justify">দেশের বাইরে থাকলেও যশোরে তার নামে চলতো একটি অপরাধী চক্র। এই চক্রের সদস্যরা স্কাইপে যোগাযোগ রাখতেন লিটনের সঙ্গে। তার নির্দেশনা অনুযায়ী যশোরের রবীন্দ্রনাথ সড়ক, মণিহার, সিটি কলেজ, বকচর, ঢাকা রোড এলাকার ব্যবসায়ীরা নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হতেন লিটনের অনুসারী সন্ত্রাসীদের। এই সময়কালে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এসেছে লিটনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে।</p> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত কয়েকবছর লিটন আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। ছাত্রজীবনে লিটন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু কয়েক বছর আগে স্ত্রী ফাতেমা আনোয়ার ও ভাই রিপন ওরফে ডিম রিপন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তারা যশোর সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।</p> <p style="text-align:justify">যুব মহিলা লীগের নেত্রী ফাতেমা আনোয়ার গত ইউপি নির্বাচনে যশোর সদরের ফতেপুর ইউনিয়নে কাজী নাবিল আহমেদ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তবে লিটনের ভাই রিপন ওরফে ডিম রিপন গেল পৌরসভা নির্বাচনে এক নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হন।</p> <p style="text-align:justify">২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় আসার পর অনুষ্ঠিত হয় উপজেলা পরিষদের ভোট। এই নির্বাচনে ফাতেমা আনোয়ার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি। পরে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে সবাইকে চমকে দেন। উপজেলা নির্বাচনের আগেই অবশ্য তাকে আওয়ামী লীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটূক্তি করার অভিযোগে।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র জানায়, লিটন বিদেশে থাকাবস্থায় তার আয়ের প্রধান উৎস ছিল চাঁদাবাজি। একপর্যায়ে তিনি বেশ কিছু ব্যবসা-বাণিজ্যে অর্থলগ্নি করেন। তার মালিকানায় চলছে ‘লিটন ট্রাভেলস’ নামে পরিবহন ব্যবসা। লিটন ও তার স্বজনদের মালিকানায় তৈরি পোশাকের ব্যবসা আছে। যশোর শহরের পূর্বাংশে তাদের বহু জমি, ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।</p>