<p style="text-align:justify">ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মানুষের মূল পেশা পানের ব্যবসা। এই গ্রামের বাসিন্দা নগেন্দ্রনাথ সাহা ওরফে নগেন সাহারও ছিল একই ব্যবসা। ১৯৬০ সালের কিছু আগে নগেন ভাগ্যের সন্ধানে পাড়ি জমান পাশের বাঘারপাড়া উপজেলার ব্যবসাকেন্দ্র খাজুরায়। সেখানে ফুটপাতে বসে পান বেচতেন।</p> <p style="text-align:justify">বেচাবিক্রি ভালো হওয়ায় পানের পাশাপাশি অন্যান্য পসরাও বেচা শুরু করেন। এক পর্যায়ে পাশে চিত্রা নদীর ধারে একটি টিনের ঘর তোলেন। ফুটপাতের দোকান স্থানান্তরিত হয় এই ঘরে। নগেন সাহা এখন পৃথিবীতে নেই।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="১৪১৬ ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক, বসছে প্রশাসক" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/31/1730337021-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>১৪১৬ ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক, বসছে প্রশাসক</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/31/1441076" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">তাঁর সন্তান রণজিৎ কুমার সাহা (অজ্ঞাত কারণে রণজিৎ রায় নাম ধারণকারী) এখন কত শত কোটি টাকার মালিক, সেই হিসাব করা দুরূহ। যুবলীগের রাজনীতি, ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে শেষে সংসদ সদস্য হয়ে তিনি গড়েছেন টাকার পাহাড়।</p> <p style="text-align:justify">যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর-সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য এখন পলাতক। দুদক তাঁর সম্পদের অনুসন্ধান করছে। এই ব্যক্তি এবং তাঁর স্ত্রী-পুত্র যাতে দেশ ছাড়তে না পারেন, সম্প্রতি সেই আদেশও দিয়েছেন আদালত।</p> <p style="text-align:justify">রণজিৎ রায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত তাঁর স্থাবর সম্পত্তি নিয়ে। সূত্র জানায়, খাজুরা, বাঘারপাড়া, যশোর শহর, নওয়াপাড়া, চৌগাছা, ঢাকায় এমনকি পাশের দেশ ভারতেও রয়েছে তাঁর বাড়ি ও জমি। কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানে খোঁজ মিলেছে এমন ১০টি বাড়ি, চারটি ফ্ল্যাট; যেগুলো হয় রণজিৎ অথবা তাঁর নিকটজনদের নামে কেনা। এর বাইরেও তাঁর সম্পত্তি ছড়িয়ে আছে দেশে-বিদেশে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="প্রভাবশালী ২২ জন কর গোয়েন্দাজালে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/31/1730331536-0ce8ff209e25e39f7dcf9911365cdeeb.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>প্রভাবশালী ২২ জন কর গোয়েন্দাজালে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/31/1441075" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">বিশেষ করে বাঘারপাড়া উপজেলাজুড়ে তাঁর শত শত বিঘা জমি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে তাঁর বাড়িবিলাস বিশেষভাবে বেশ আলোচিত।</p> <p style="text-align:justify">যশোর শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক রেল রোডে রণজিতের রয়েছে দুটি বাড়ি। একটি তিনতলা, অন্যটি পাঁচতলা। শহরের কেন্দ্রস্থলে লোহাপট্টিতেও তাঁর সমসংখ্যক বাড়ি রয়েছে। যশোর নতুন উপশহরে বহুতল ভবনে তাঁর রয়েছে দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। বাঘারপাড়ায় আছে অনেক সম্পত্তি। বাঘারপাড়ার দোহাকুলা মন্দিরের সামনে রয়েছে রণজিতের বাড়ি। </p> <p style="text-align:justify">খাজুরাবাজারে বাবা নগেন সাহার সেই টিনের চালার পাশে এখন চারতলা ভবন, যার একটি ফ্লোর আন্ডারগ্রাউন্ডে। খাজুরাবাজার জামে মসজিদের পাশে বিশাল জায়গাজুড়ে নির্মাণ করছিলেন মার্কেট, কিন্তু কাজ শেষ হওয়ার আগেই পালিয়ে যেতে বাধ্য হন তিনি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="কোনো হত্যাকাণ্ডের দায়মুক্তির সুযোগ নেই, তদন্ত হতে হবে : ভলকার তুর্ক" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/31/1730330012-4f19eb6fb667a6ffd9a382b33421b49d.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>কোনো হত্যাকাণ্ডের দায়মুক্তির সুযোগ নেই, তদন্ত হতে হবে : ভলকার তুর্ক</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/31/1441074" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">শিল্পশহর নওয়াপাড়ার প্রধান সড়কে কালীবাড়ির কাছে পাশাপাশি দুটি ভবন রণজিতের। একটি দোতলা এবং বাকিটি তিনতলা। এখানকার চারতলা ভবনেই রণজিৎ রায়ের ছেলে বাঘারপাড়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রাজিব রায়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিয়তি ট্রেডার্স। ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালায় এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে।</p> <p style="text-align:justify">সূত্র মতে, রাজধানীর মিরপুরে দারুসসালাম রোডে রণজিতের রয়েছে দুটি ফ্ল্যাট। দুই ছেলের নামে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে দুটি বাড়ি। একটি কলকাতার সবচেয়ে অভিজাত এলাকা সল্টলেকে, অন্যটি বারাসাতে। ঢাকার আজিজ সুপার মার্কেটে দুটি দোকানের মালিকানাও আছে বলে শোনা যায়।</p> <p style="text-align:justify">যশোর, বাঘারপাড়া, অভয়নগর, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রণজিৎ রায়ের নামে কত বিঘা জমি আছে, তার হিসাব মেলানো ভার। বাঘারপাড়ার বাসিন্দা যশোর জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার ভাষ্য, এই উপজেলায় সম্ভবত এমন কোনো মৌজা খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে রণজিৎ রায়ের জমি নেই। আর পাশের জেলা খুলনার ফুলতলা উপজেলায় রয়েছে তাঁর বিশাল মাছের ঘের। চৌগাছায় রয়েছে কয়েক শ বিঘা জমি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সিগন্যাল বাতির গচ্চা ২০০ কোটি" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/31/1730327462-fab8a02bed96fb51c8193af655cded69.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সিগন্যাল বাতির গচ্চা ২০০ কোটি</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/dhaka/2024/10/31/1441072" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">গেল নির্বাচনে রণজিৎ রায় নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা দেন, সেখানে রাজধানীর পূর্বাচলে তাঁর ১০ কাঠার প্লট রয়েছে বলে জানান। যশোরের বেজপাড়া পিয়ারীমোহন সড়কে কিনেছেন জমি। নওয়াপাড়ার প্রধান সড়কে এলবি টাওয়ারের সামনে দুই ব্যক্তির কাছ থেকে দুই দফায় কিনেছেন দামি জমি।</p> <p style="text-align:justify">২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে রণজিৎ রায় তাঁর যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেন, সাকল্যে তার দাম ছিল পাঁচ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামায় তাঁর সম্পত্তি বেড়ে চার কোটি ৫০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যবসা, বাড়িভাড়া, কৃষি ও সংসদ সদস্যের বেতন হিসেবে তাঁর বার্ষিক আয় সাড়ে ৪৩ লাখ টাকা। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রণজিতের রয়েছে শত শত কোটি টাকার স্থাবর সম্পত্তি। এর বাইরে নগদ টাকা ও সোনার গহনা কী পরিমাণ আছে তার হিসাব নেই কারো কাছে।</p> <p style="text-align:justify">সংসদ সদস্য থাকাকালে নির্বাচনী এলাকার কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচিতে গেলে রণজিৎকে হয় সোনার নৌকা অথবা তাঁর স্ত্রী নিয়তিকে সোনার চেইন দেওয়া একপ্রকার বাধ্যতামূলক ছিল। রণজিতের স্ত্রী নিয়তি রায় এবং ছেলে রাজিব রায়ের নামে জনতা ব্যাংক যশোরের প্রধান শাখায় দুটি লকার ভাড়া নেওয়া আছে। কিছুদিন আগে সেখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রণজিতের বিতণ্ডাও হয়। সেদিন রণজিতের ছেলে রাজিব জানিয়েছিলেন, তাঁর লকারে ৩০০ থেকে ৪০০ ভরি সোনার গহনা আছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার মতে, লকারে রক্ষিত ওই পরিবারের সোনার গহনা ৫০০ ভরিরও বেশি।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="দুর্নীতি-ঘুষে সম্পদের পাহাড়, দিব্যি বহাল প্রকৌশলী মাসুদ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/31/1730324277-55bde9c89207a99246afb3de19ea1a0f.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>দুর্নীতি-ঘুষে সম্পদের পাহাড়, দিব্যি বহাল প্রকৌশলী মাসুদ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/31/1441071" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">২০২৪ সালের নির্বাচনে রণজিৎ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা রণজিৎ শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে থাকেননি। অভিযোগের বিষয়ে রণজিৎ রায় বা তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের বক্তব্য জানা যায়নি। তাঁরা ফোন বন্ধ করে পলাতক।</p> <p style="text-align:justify">দুদক সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আল আমীন তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী বিপুল ফারাজী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দলের সুসময়ে দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে অনেক কথা বলেছি। এখন দুঃসময়ে তেমনভাবে বলা উচিত নয়।’ তবে ‘বাঘারপাড়া, অভয়নগর, যশোর, ঢাকা এমনকি পাশের দেশে রণজিৎ রায়ের প্রচুর সম্পদ-সম্পত্তি আছে—এ কথা সবাই জানে’, মন্তব্য করেন বিপুল।</p> <p style="text-align:justify">যশোর-৪ আসনে রণজিতের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা প্রকৌশলী টি এস আইয়ুব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আপনাদের কাছে যে হিসাব আছে তা রণজিতের সম্পত্তির সামান্য অংশ মাত্র। বেপরোয়া লুটপাটের টাকার বড় অংশই ভারতে পাচার হয়ে গেছে। ভারতে তাঁর সুপারমার্কেট পর্যন্ত আছে।’</p>