<p>সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নিহত তিনজনের মরদেহ উত্তোলন ও ময়নাতদন্তে অনীহা প্রকাশ করেছে নিহতদের পরিবার। নিহতের ঘটনায় করা মামলায় আদালত পুলিশকে এ নির্দেশ দিলেও পরিবার জানায় তারা মামলা করেনি। যিনি মামলা করেছেন তাকেও চেনেন না।</p> <p>রবিবার (৩ নভেম্বর) সকালে নিজ নিজ বাড়িতে পৃথক সংবাদ সম্মেলনে নিহতদের স্বজনরা এসব কথা বলেন।</p> <p>নিহতরা হলেন, বেলকুচি উপজেলার গোপরেখী গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মাদরাসা ছাত্র সিয়াম হোসেন ও একই উপজেলার মাধবপুর গ্রামের প্রবাসী শফি উদ্দিনের ছেলে কলেজ ছাত্র শিহাব উদ্দিন ও পার্শ্ববর্তী শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইয়াহিয়া।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="এনায়েতপুর থানার ১৫ পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় মামলা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/27/1724746947-668e5112cd089c01ba31de5cc4250ca6.jfif" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>এনায়েতপুর থানার ১৫ পুলিশ সদস্য হত্যার ঘটনায় মামলা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/08/27/1419279" target="_blank"> </a></div> </div> <p>জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে দুই শিক্ষার্থী ও এক ব্যবসায়ী নিহত হন। সে দিন রাতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই স্বজনরা নিহতদের মরদেহ দাফন করেন। পরবর্তীতে এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এনায়েতপুর থানায় পৃথক ৩টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ অবস্থায় আদালত ময়নাতদন্তের জন্য নির্দেশ দিলেও স্বজনরা অনীহা প্রকাশ করছেন। স্বজনদের দাবি তিনজনই মিছিলে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। অথচ মামলায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে। মামলা পরিচালনার নামে প্রতিহিংসায় জড়াতে চান না তারা।</p> <p>সংবাদ সম্মেলনে করে কলেজ ছাত্র শিহাব হোসেনের মা শাহনাজ বেগম বলেন, ‘শিহাব হোসেন পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। ময়নাতদন্ত ছাড়াই ছেলের মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা পুরো পরিবার চরম ভাবে কষ্ট পাচ্ছি। এ অবস্থায় মামলা করে আমরা কোনো নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করতে চাই না। ছেলে হত্যার ঘটনায় থানায় বাদী হয়ে যে ব্যক্তি মামলা করেছে তাকে আমরা চিনি না। আমরা কাউকে মামলা করার অনুমতিও দেইনি। পুলিশ যেন মামলা প্রত্যাহার করে নেয়। অহেতুক নিরপরাধ লোকদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে শহীদ সন্তানের আত্মাকে কষ্ট দিতে চাই না।’  </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সিরাজগঞ্জে ২ থানার লুট হওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধারে নেই গতি" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/28/1730106742-0fe2139b6f9163c35648cb82bdd0a4d0.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সিরাজগঞ্জে ২ থানার লুট হওয়া অস্ত্র-গুলি উদ্ধারে নেই গতি</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/28/1440054" target="_blank"> </a></div> </div> <p>যারা উদ্দেশ্যমূলক ভাবে রাজনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য তার সন্তানের মরদেহকে ব্যবহার করে ব্যবসা করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।</p> <p>মাদরাসা ছাত্র সিয়াম হোসেনের বাবা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘সিয়াম থানার সামনে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। খবর পেয়ে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ছেলের মৃতদেহ এনে দাফন করেছি। কে বা কারা এ বিষয়ে থানায় মামলা করেছে, বাদী কে, তাকেও আমরা চিনি না। মামলা করতে আমাদের অনুমতি নেওয়া হয়নি। পুলিশ এসে বলে গিয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য আমার ছেলের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করতে হবে। আমরা তো মামলা করি নাই, মরদেহ কেন তুলবে। পুলিশের গুলিতে আমার ছেলে মরেছে, পুলিশও মরেছে। এই বিচার সরকারের কাছে চাই, কিন্তু আমার হাফেজ ছেলের লাশ কবর থেকে তুলতে দেব না।’  </p> <p>সংবাদ সম্মেলনে নিহত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইয়াহিয়ার স্ত্রী শাহানা খাতুন বলেন, কিছু লোক বাড়িতে এসে পুরো পরিবার ও সংসারের দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলে একটা সই নেয়। এরপর লোকমুখে জানতে পারি তারা ওই সই দিয়ে থানায় এজাহার দিয়েছে। মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কয়েকদিন আগে পুলিশ জানিয়েছে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে উত্তোলন করতে হবে। আমি মৃতদেহ কবর থেকে উত্তোলন করতে দেব না। নতুন করে আর শোক নিতে পারবো না। আমার চাওয়া একটাই আমার স্বামীর যেন শহীদের মর্যাদা পায় এবং খুনি হাসিনার নির্দেশে পুলিশ আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের যেন বিচার হয়।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সিরাজগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৩" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/19/1729344296-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সিরাজগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১৩</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/19/1436837" target="_blank"> </a></div> </div> <p>এ বিষয়ে শিহাব হত্যা মামলার বাদী এনায়েতপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সোলায়মান হোসেন বলেন, ‘শিহাবের বাবা বিদেশে থাকেন। মানসিক চাপের কারণে স্বজনরা মামলা করতে সাহস পাননি। হত্যা মামলায় যে কেউ বাদী হতে পারে, তাই আমি নিজে বাদী হয়ে মামলাটি করেছি।’ </p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘আমি ঢাকাতে থাকি, তারপরও অতীতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। আমি তো সত্য মামলা করেছি।’</p> <p>এদিকে মাদরাসা ছাত্র সিয়াম হত্যা মামলার বাদী এনায়েতপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক হযরত আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাই তার বক্তব্যও পাওয়া যায়নি।  </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আন্দোলনে নিহত রিফাতের মরদেহ উত্তোলন" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/26/1729941726-fb653291b7b904b34b0d39988c7f542e.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আন্দোলনে নিহত রিফাতের মরদেহ উত্তোলন</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/26/1439368" target="_blank"> </a></div> </div> <p>এনায়েতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন ইয়াজদানি বলেন, ৪ আগস্ট এনায়েতপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কলেজ ছাত্র শিহাব, মাদরাসা ছাত্র সিয়াম ও ব্যবসায়ী ইয়াহিয়া গুলিতে মারা গেছে। তাদের মৃতদেহ স্বজনরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করেছেন। এ ঘটনায় থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। আদালতে ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। ১০/১২ দিন আগে আদালত লাশ উত্তোলনের অনুমতি এবং পৃথক তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করেছেন। কিন্তু পরিবারগুলো লাশ উত্তোলন না করে মামলা নিস্পত্তির পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি আদালতকে অবগত করব। পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’</p> <p>প্রসঙ্গত, ৪ আগস্ট উপরোল্লিখিত তিনজন নিহতের ঘটনায় এনায়েতপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সোলায়মান হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক হযরত আলী এবং শাহানা খাতুন বাদী হয়ে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মমিন মণ্ডলসহ আওয়ামী লীগের ২০৯জন নেতাকর্মীকে এজাহারভুক্ত এবং প্রতিটি মামলায় ৫০০ থেকে ৭০০জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।</p>