<p>৫ আগস্ট সরকার পতনের পর সবার সঙ্গে আনন্দ মিছিলে যোগ দেন মনির। বাড়িতে থাকা স্ত্রীকে ভিডিও কলে দেখান সেই চিত্র। কে জানতো এটাই হবে তাদের শেষ কথা। রাত ২টায় স্ত্রী রোজিনা বেগমের মোবাইল ফোনে অচেনা এক নম্বর থেকে কল আসে। জানানো হয় মনির বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আধা ঘণ্টা পর জানানো হয় মনিরের মৃত্যুর কথা। সে সংবাদ শুনে মুহূর্তেই উলোট পালোট হয়ে যায় রোজিনার সাজানো সংসার।</p> <p>সেই রাতে ঢাকায় থাকা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেও হাসপাতালে পাঠানো যায়নি। পরদিন মনিরের বাবা-মা গিয়ে হাসপাতাল থেকে মরদেহ নিয়ে আসেন। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে গ্রামের বাড়িতে এনে বাড়ির কাছের মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এরপর থেকে রোজিনার সঙ্গে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের খারাপ সম্পর্ক শুরু হয়। ১০দিন পর দুই সন্তানকেসহ রোজিনা পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাবার বাড়ি। স্বামীর টাকায় তৈরি ঘর হলেও সে ঘরে থাকার সুযোগ পাননি রোজিনা।</p> <p>রোজিনা জানান, ছোটবেলা থেকেই জীবিকার তাগিদে ঢাকায় চলে যান মনির। ২০১৫ সালে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পর তারা একসঙ্গে পুরান ঢাকার ইসলামপুরে থাকতেন। ভাইদের সঙ্গে বাড়িতে একতলা একটি পাকা ঘর নির্মাণ করেন। সেই ঘরের ব্যয়ে আট লাখ টাকা দেন মনির। বিভিন্ন কারণে এক বছর আগে স্ত্রী সন্তানকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মনির। এরপর একা বংশালে মেস নিয়ে থাকতেন তিনি। অপরদিকে ছেলেকে গ্রামের একটি মাদরাসায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করান। মনিরের আয়ে সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু তার মৃত্যুর পর রোজিনা ও তার সন্তানদের সে ঘরে থাকতে দেননি শ্বশুর-শাশুড়ি। উপায় না পেয়ে পেশায় দোকানি বাবার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন রোজিনা।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="আন্দোলনে আহত ২৫ জনকে বিদেশে পাঠানো হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/04/1730730777-c8b390461c8197ec74d646aa7ae62e81.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>আন্দোলনে আহত ২৫ জনকে বিদেশে পাঠানো হবে : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/04/1442741" target="_blank"> </a></div> </div> <p>মনিরের স্ত্রী বলেন, স্বামী মারা যাওয়ার পর ৯ বছর বয়সী ছেলে মো. আবিদ ও ৫ বছর বয়সী মেয়ে জুনহাকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী থেকে দুই লাখ, জেলা প্রশাসক থেকে ১০ হাজারসহ বিভিন্ন সংগঠন থেকে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছে। এখন ওই টাকার সমান ভাগ দাবি করছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশ বসানো হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার। বাকি টাকা সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য ব্যাংকে রাখা হয়েছে।</p> <p>কান্না জড়িত কণ্ঠে রোজিনা বেগম বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর শোক না কাটতেই আমার ছোট ছোট ছেলে মেয়েদেরকেসহ আমাকে স্বামীর টাকায় নির্মাণ করা ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন শ্বশুর-শাশুড়ি। একদিকে স্বামীর শোক অন্যদিকে নিজের ও ছেলে-মেয়ের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে বাবার বাড়িতেই আশ্রয় নিই। সবাই ফেলে দিতে পারলেও বাবা-মা তো ফেলে দিতে পারে না। তাই চা দোকানি বাবার ঘরেই কষ্টে দিন কাটে আমাদের।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ভোলায় আরো ১৯টি গ্যাসকূপ খনন করা হবে : জ্বালানি উপদেষ্টা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/01/1730457395-d792b8b490aef953d009f0fbd3211c80.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ভোলায় আরো ১৯টি গ্যাসকূপ খনন করা হবে : জ্বালানি উপদেষ্টা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/11/01/1441542" target="_blank"> </a></div> </div> <p>সরকারের কাছে স্বামী হত্যার বিচারের পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তা ও একটু থাকার জায়গার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন শহীদ মো. মনিরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম।</p>