<p>দিল্লির মাওলানা সাদকে কেন্দ্র করে তাবলিগ জামাতে যে মতবিরোধ সেটা নেতৃত্বের কোনো বিরোধ নয়, আদর্শিক কারণে বিরোধ। গতকাল বুধবার (৬ নভেম্বর) সাদপন্থীরা সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আলমি শুরা বা যোবায়েরপন্থীরা।</p> <p>আলমি শুরাপন্থী বা শুরাঈ নিজামের মিডিয়াবিষয়ক সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান কালের কণ্ঠকে জানান, মাওলানা সাদের ভ্রান্ত মতাদর্শের কারণেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ সর্বত্র আলেমরা তার বিরোধিতা করছেন এবং শুধু বাংলাদেশের আলেমরা নন, সারা বিশ্বের আলেমরাই তার বিরোধিতা করেছেন। খোদ দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজ থেকেই প্রথম সাদবিরোধিতা শুরু হয়। পরে দারুল উলুম দেওবন্দও এ ব্যাপারে ফতোয়া দেয়। সেই ফতোয়ার ভিত্তিতেই বাংলাদেশের আলেমরা সাদ সাহেবের ভ্রান্ত মতাদর্শের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।</p> <p>হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, ‘উনারা সংবাদ সম্মেলনে বারবার একটা জিনিস বোঝাতে চাচ্ছিল মাওলানা সাদ সাহেব, কোনো ভুল বয়ান করেননি। আমাদের বক্তব্য হলো, তাহলে দারুল উলুম দেওবন্দ কেন তার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিল? এখন পর্যন্ত দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদ সাহেবের বিরুদ্ধে, যে ফতোয়া দিয়েছে তার ব্যাপারে তারা পূর্বের অবস্থানেই রয়েছে। তারা যদি নিজেদের হক মনে করে, তাহলে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে তাদের পক্ষে ফতোয়া নিয়ে আসুক।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, সাদপন্থীরা সাংবাদিকদের সামনে দারুল উলুম দেওবন্দের তিনটি ফতোয়ার কথা উল্লেখ করেন যা,   ৬৯১৫৮- নিজামুদ্দিন মারকাজের জিম্মাদারদের যারা গুমরাহ বলবে, সে নিজেই গুমরাহ। নিজামুদ্দিন মারকাজের জিম্মাদাররা আহলে হক এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উলামাদের অন্তর্ভুক্ত। ১৫২৬৮৭ - নিজামুদ্দিন মারকাজের অনুসারী জামাতকে মসজিদে কোনো আমল করতে বাধা দেওয়া যাবে না। ১৫৬১৩১ -তাবলিগ জামাতের এই মতপার্থক্য হলো তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা নিয়ে। এই মতভেদ কোনো ইলমি বা ফিকহি বিষয়ের নয়। দারুল উলুম দেওবন্দ এই ঝগড়ায় কোনো পক্ষ হওয়া পচ্ছন্দ করে না। এখানে বাস্তবতা হচ্ছে, এই ফতোয়াগুলো দারুল উলুম দেওবন্দ ২০০৭, ২০০৮, ২০১১ সালে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দিয়েছিলেন। যখন তাবলিগ জামাতের সবাই একত্রেই ছিল। কোনো ভাগাভাগি ছিল না বা কোনো সাদপন্থী বা আলামি শুরাপন্থী কিছুই ছিল না। অন্য কোনো সংগঠন যখন তাবলিগের ব্যাপারে বিরোধিতা করে, তখন দারুল উলুম দেওবন্দের পক্ষ থেকে এ সমস্ত ফতোয়া তখন দেওয়া হয়।</p> <p>২০২০ সালের মার্চ মাসে দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েবসাইট হ্যাক হলে, উনারা তা পুনরুদ্ধার করেন এবং পূর্বের দেওয়া সমস্ত  ফতোয়া (শুধু তাবলিগ সংক্রান্ত না, সকল ফতোয়া) দারুল উলুম দেওবন্দ তাদের ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফের প্রকাশ করেন। সাদপন্থীরা বিষয়গুলো জানেন। কিন্তু তারা এ বিষয়গুলো গোপন করে চতুরতার আশ্রয় নেন।</p> <p>ইতিপূর্বে গতবার ইজতেমার পরে এবং অন্যান্য সময় সাদপন্থীরা সাংবাদিক ভাইদের সামনে বিভিন্ন চতুরতার আশ্রয় নিয়ে ভুল নিউজ প্রকাশ করেছেন।</p> <p>তাবলিগের সংকটের মূলে রয়েছে, যৌথ নেতৃত্ব তথা পরামর্শভিত্তিক পদ্ধতি বাদ দিয়ে একক নেতৃত্বে কাজ চালানো, মাওলানা সাদের কোরআন-হাদিসবিরোধী মনগড়া নানা মন্তব্যে অনঢ় থাকা এবং পূর্ববতী তিন হজরতজির উসুল ও কর্মপন্থা থেকে সরে যাওয়া। একজন মাওলানা সাদের সঙ্গে বিশ্বের অন্য মুরব্বিদের মতবিরোধ নেতৃত্ব নিয়ে নয়, আদর্শিক কারণে।</p>