<p>ভালো ফলাফল করার পরেও শুধু বৈষম্যের কারণে প্রতিষ্ঠার ২৪ বছরেও বরগুনার আমতলীর টিয়াখালী কলেজটি এমপিওভুক্ত হয়নি। এতে হতাশ কলেজটির ৩০ জন শিক্ষক ও ৮ জন কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা। দীর্ঘদিন ধরে কোনো বেতনভাতা না পেয়ে বর্তমানে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।</p> <p>সংশ্লিষ্টরা জানায়, ২০০০ সালে আমতলী সদর ইউনিয়নের টিয়াখালী গ্রামের শিক্ষানুরাগী মো. দেলোয়ার হোসেন প্রায় সোয়া দুই একর জমির ওপর কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০১ সালে কলেজটি বোর্ডের স্বীকৃতি লাভ করে। স্বীকৃতি লাভের পর কলেজ থেকে প্রতিবছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল করে আসছেন। ২০০২-২০২৪ পর্যন্ত ২১ বছরের গড় পাসের হার ৭২ শতাংশ। ২০১৯ সালে কলেজ থেকে শতভাগ পাস করারও রেকর্ড রয়েছে। চলতি বছরও ২০ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৫ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। বর্তমানে কলেজটিতে ৩২২ শিক্ষার্থী রয়েছেন। বোর্ডের এবং মন্ত্রণালয়ের সব নিয়মকানুন সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করলেও শুধু রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে কলেজটি এমপিওভুক্ত করা হয়নি। </p> <p>কলেজেটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মো. দেলোয়ার হোসেন উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদকের পদে ছিলেন। কলেজটি প্রতিষ্ঠার সময় বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও এর যাবতীয় কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার মধ্যেই সরকার পরিবর্তন হয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় চলে আসে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর চারবার দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে। কিন্তু রাজনৈতিক রোষানলের কারণে ২৪ বছরে টিয়াখালী কলেজটি এমপিওভুক্ত হতে পারেনি। আওয়ামী লীগ সরকার কলেজটি এমপিওভুক্ত না করলেও ২০১৭ সালে একটি চার তলা ভবন করে দিয়েছে। ওটাই এখন শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের সান্ত্বনা। </p> <p>ইতোমধ্যে দেলোয়ার হোসেন অবসরে চলে গেছেন। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কৃষি শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক কে এম সোহেল নামের একজন দায়িত্ব পালন করছেন। কলেজটিতে বর্তমানে ৩০ জন শিক্ষক ও ৮ জন কর্মচারী রয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে কোনো বেতন ভাতা না পেয়ে এখন হতাশ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। </p> <p>কলেজের একাদশ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া ও বনি আমিনসহ একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, এখানে লেখাপড়ার মান খুবই ভালো। অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন। স্যারেরা অনেক যত্নসহকারে লেখাপড়া শিখান। কলেজটি এমপিওভুক্ত হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে।</p> <p>কলেজের পিওন মো. শাহানুর ফকির জানান, 'কলেজে চাকুরি করি কিন্তু কোনো বেতন ভাতা পাই না। এ্যাহন আর সংসার চালাইতে পারি না। বাহের জমিজমা যা পাইছিলাম আর স্ত্রী স্বর্ণালংকার বিক্রি কইর‌্যা সংসার চালাইয়া সব শ্যাষ হরছি। হেইয়ার পর ধার কর্জ কইর‌্যা খাইছি। এ্যাহন আর কেউ টাহা ধারও দ্যায় না। কোনো রহম গুরাগারা লইয়া খাইয়া না খাইয়া দিন কাডাইতেছি।' </p> <p>চোখ মুছতে মুছতে কলেজের দপ্তরি নাসির মৃধা বলেন, এই হানে চাকুরি নিয়া ব্যামালা বিপদে আছি। বয়স থাকতে চাকুরি নিছি এ্যাহন আর সরকারি চাকুরির বয়স নাই। কুম্মে যাইয়া চাকুরি লমু। চাকুরি লইয়া এ্যাহন আর অন্য কোনো কামও করতে পারি না। আরেক দিকে বেতনও পাই না। </p> <p>কলেজের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন বিভাগের প্রভাষক মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, এই কলেজে চাকুরি করে জীবনের মূল্যবান সময় দিয়েছি। কিন্তু এখন শেষ সময়ে এসে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরে যেতে হবে, এটাই জীবনের বড় কষ্ট। </p> <p>কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, 'এলাকার মানুষের কথা বিবেচনা করে ২০০০ সালে সোয়া দুই একর জমির ওপর টিয়াখালী কলেজটি প্রতিষ্ঠা করি। বরগুনা জেলার সব কলেজের মধ্যে আমার কলেজের শিক্ষার গুণগত মান এবং ভালো ফলাফল থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমপিওভুক্ত করেনি। এতে শিক্ষক, কর্মচারী এবং এলাকার হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। বর্তমানে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন হয়েছে। আশা করি, বর্তমান সরকার টিয়াখালী কলেজটি এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগ নেবেন। </p> <p>ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, কলেজটিতে বর্তমানে ৩০ জন শিক্ষক ৮ জন কর্মচারী এবং ৩২২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। অন্যান্য কলেজের তুলনায় এখানের লেখাপড়ার মান এবং পরিবেশ অত্যন্ত ভাল। কলেজটি এমপিওভুক্ত করা হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পাবে।</p>