<p style="text-align:justify">দিনের আলো ফুটতেই শুরু হয় কর্মব্যস্ততা। কেউ ঠেলা জাল নিয়ে, কেউ-বা বিশেষ এক ধরনের গোলাকৃতির চালুনি নিয়ে নেমে পড়ে নদীতে। দিনভর রোদে পুড়ে সন্ধ্যা অবধি ভাসমান কয়লা কুড়াতে নদীর পানি আর বালুচর চষে বেড়ায় তারা। শেষ বেলায় ঠেলা জালে তুলে ধুয়ে কয়লা আলাদা করে। আর এসব কয়লা বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের মুখে দুই বেলা আহারের  জোগান দেয় নেত্রকোনার দুর্গাপুরের কয়েক হাজার বাসিন্দা।</p> <p style="text-align:justify">কয়লা উত্তোলনের এই কাজে নারীদের পাশাপাশি শিশু-কিশোরাও অংশ নেয়। সেই সঙ্গে বিভিন্ন বয়সী কয়েক হাজার মানুষ নদী থেকে প্রতিদিন কয়লা তোলে। যুগ যুগ ধরে এই পেশায় ভর করে চলছে তাদের পরিবার।</p> <p style="text-align:justify">কয়লা উত্তোলনের এই কর্মযজ্ঞ চলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরী নদীর বুকে। সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় কয়লা উত্তোলনকারী বড়ইকান্দি গ্রামের হালিমা খাতুনের সঙ্গে।</p> <p style="text-align:justify">হালিমা জানান, ভোরে খাবার খেয়ে নৌকা, জাল, বেলচা-কোদাল নিয়ে কয়লা তুলতে নদীতে চলে যান। নদী থেকে কয়লা তোলার পরপরই পরিষ্কার করতে হয়। পরে প্রতি মণ কয়লা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার ভালোভাবে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার ও শুকালে তখন বেশি টাকায় বিক্রি করা যায়। </p> <p style="text-align:justify">রহিমা খাতুন নামে আরেক নারী জানান, সারা দিন কয়লা তুলে একেকজন দিনে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। উত্তোলিত কয়লা নদীর চর থেকেই কিনে নেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘১৫ বছরের বেশি সময় হইবো কয়লা তুলে আইতেছি। এই কয়লা তুলেই হাট-বাজার করি, পোলাপাইন লইয়া চলি। এইডার ওপর ভরসা কইরা বাঁইচা আছি।’</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘এলাকায় কোনো কাজকাম নাই। আমাদের জীবন-জীবিকার একমাত্র ভরসা এই সোমেশ্বরী নদী। আগে বালুর ঘাট থাকতে বালুর কাজ করেছি, কিন্তু এখন কয়লা তুলি।’</p> <p style="text-align:justify">কয়লা ব্যবসায়ী টুকন সরকার বলেন, ‘শ্রমিকরা সারা দিন নদীতে কয়লা তুলে নিয়ে এসে আমাদের কাছে বিক্রি করে। আমরা সবার কাছ থেকে কিনে জমিয়ে তারপর অন্যত্র বিক্রি করি।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘সারা দিন রোদ-বৃষ্টিতে কষ্ট করে এই কয়লা তুলছে তারা। আর আমাদের কাছে বিক্রি করে সবাই সংসারের খরচ জোগান দিচ্ছেন।’</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয় বাসিন্দা ও সোমেশ্বরী নদীঘেঁষা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রায় ২০-২৫ বছর ধরে পাহাড়ি ঢালের পানিতে সোমেশ্বরী নদীতে ভেসে আসা গুঁড়া কয়লা তুলে সংসার চালাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি জানান, বর্তমানে বালুঘাট, সাদামাটি কোয়ারি বন্ধ থাকায় হাজার হাজার শ্রমিক আর্থিক সমস্যায় ভুগছে। কিন্তু কয়লা তুলে অনেকেরই আর্থিক সমস্যা কিছুটা হলেও লাঘব হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">সোমেশ্বরী নদী যুগের পর যুগ ধরে মানুষের জীবিকার জোগান দিয়ে আসছে। শুধু কয়লা নয়, বালু-পাথরের মতো খনিজসম্পদে ভরপুর এই নদী। তা ছাড়া, পর্যটনশিল্পের অপার সম্ভাবনার এই উপজেলায় ঘুরতে আসা পর্যটকদের নৌকায় করে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই উপার্জন করে আসছেন অনেক মাঝি।</p>