<p>গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ঢাকার আদাবর এলাকায় আনন্দ মিছিলে যান ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার সাচরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইউনুস মালের ছেলে মো. জাকির হোসেন (২৬)। </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে যা বললেন আইন উপদেষ্টা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/10/1731227729-de2d631cf64ae96008bc39b9fe6bc5f9.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর বিষয়ে যা বললেন আইন উপদেষ্টা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/10/1444949" target="_blank"> </a></div> </div> <p>ওই দিন বিকেল ৩টার দিকে আদাবর থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর হন তিনি। পরে সঙ্গে থাকা বন্ধুরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর তিন মাস অতিবাহিত হলেও এখনো ছেলের কথা ভুলতে পারছেন না তার বাবা-মা। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ শয্যাশায়ী বাবা মো. ইউনুস মাল ও মা ইয়ানুর বেগম। কিছুতেই থামছে না তাদের ছেলে হারানোর কান্না। শহীদ জাকির হোসেন ঢাকার আদাবর ১০ নম্বর সড়ক এলাকায় পোশাক কারখানায় কাজ করতেন।</p> <p>শহীদ জাকিরে হোসেনের মা ইয়ানুর বেগম জানান, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে দ্বিতীয় নাম্বারে ছিলেন জাকির হোসেন। দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট ছেলের বয়স ১৫ বছর। সে-ও জাকিরের সঙ্গে ঢাকায় অ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ করতেন। সংসারের অভাবের কারণে জাকির হোসেন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে বন্ধ করে দেন। অভাবের কারণে গত প্রায় ২০ বছর আগে ছেলে সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় পুরো পরিবার। বাবা ইউনুস দিনমজুরি কাজ করতেন এবং মা ইয়ানুর বেগম মানুষের বাসায় কাজ করতেন। দুইজনের কঠোর পরিশ্রমের ওপর দিয়ে ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন। গত ছয় বছর আগে পারিবারিক সিদ্ধান্তে লিপি নামের ঢাকার এক মেয়েকে বিয়ে করেছেন। তাদের সংসারে দুইজন ছেলেসন্তান রয়েছে। এর মধ্যে জাবেদের বয়স পাঁচ বছর  ও ইলিয়াছের বয়স আট মাস।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়েত কর্মসূচি চলছে" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/10/1731227130-ee065679a0f52e01af079a1d88b4db0c.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণজমায়েত কর্মসূচি চলছে</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Politics/2024/11/10/1444948" target="_blank"> </a></div> </div> <p>  <br /> তিনি আরো জানান, দুই-তিন বছর বছর আগে বাবা ইউনুস শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থতার কারণে কাজেও যেতে পারেন না। শয্যাশায়ী হয়ে বিছানায় পড়ে যান বাবা ইউনুস। তাই ছেলে জাকির বাবা-মা দুইজনকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। দুই ভাই মিলে কাজ করে যা আয় করতেন, তা দিয়ে নিজেদের সংসারে খরচের পাশাপাশি বাবা-মায়ের জন্য টাকা পাঠাতেন। ছেলে জাকির ও জাহিদের আয়ের টাকাই ছিল তাদের চলার একমাত্র অবলম্বন।</p> <p>কিন্তু গত ৩ আগস্ট সকালে মায়ের জন্য বিকাশের মাধ্যমে এক হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। সেদিন মাকে বলেছিলেন, ‘মা এক হাজার টাকা পাঠাইছি। ২০ তারিখে আবার টাকা পাঠাব। এখন এই টাকা দিয়ে চলো।’ এটিই ছিল মায়ের সঙ্গে ছেলে জাকিরের শেষ কথা। এরপর ৫ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে খবর আসে- জাকির আনন্দ মিছিলে গিয়ে আদাবর থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। তার বুকে দুইটি গুলি লাগে। পরে তার সঙ্গের বন্ধুরা অ্যাম্বুল্যান্সে করে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসে। মরদেহ বাড়িতে আনার পর গোসল করানোর সময় দেখা গেছে তার বাঁ হাত ও বাঁ পায়ে পোড়া চিহ্ন। ৬ আগস্ট সকালের দিকে তাকে বাড়ির সামনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।</p> <p>মা ইয়ানুর বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবা বলছে ২০ তারিখ টাকা পাঠাবে। ২০ তারিখের আগেই বাবায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এখন আমাদের কী হবে। মা ইয়ানুর বেগম সরকারের কাছে ছেলে হত্যার বিচারের পাশাপাশি তাদের সংসার চলার মতো নিশ্চয়তা দাবি করেন।</p>