<p>উপদেষ্টার নির্দেশের পরও মির্জাপুরের অবৈধ ইটভাটাগুলো অপসারণে কার্যক্রম শুরু করেনি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ৯ দিন আগে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।</p> <p>টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে গত বছর পর্যন্ত ১০১টি ইটভাটায় ইট তৈরি ও পোড়ানো হয়েছে। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই এ বছর আবাদি জমিতে আরও সাতটি নতুন ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এসব ভাটায় ইতিমধ্যেই ইট তৈরি ও পোড়ানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে এবং জ্বালানি হিসেবে বিপুল পরিমাণ কাঠ মজুদ রাখা হয়েছে।</p> <p>নিয়ম না মেনে এসব অবৈধ ইটভাটায় বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ২ থেকে ৫টি খুঁটির মাধ্যমে ১৫ কেভির ট্রান্সফরমার স্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।</p> <p>তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, আইনের তোয়াক্কা না করে পরিবেশ ছাড়পত্র ও লাইসেন্স ছাড়াই ভাটা মালিকরা নতুন সাতটি ইটভাটা তৈরি করেছেন। অবৈধ এসব ভাটা হলো বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া গ্রামে আরবিসি ব্রিকস, এমএসবি ব্রিকস, বাটা ব্রিকস; চান্দুলিয়া গ্রামে এইচইউবি ব্রিকস; গোড়াই ইউনিয়নের দেওহাটা মল্লিকপাড়া গ্রামে সনি ব্রিকস; দেওহাটা পাথালিয়াপাড়া গ্রামে বিএন্ডবি ব্রিকস এবং দেওহাটা ও বাইমহাটী গ্রামে রান ব্রিকস।</p> <p>প্রত্যেক ইটভাটায় ১৪ থেকে ২০ একর আবাদি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া এসব ভাটার অধিকাংশের বৈধ কাগজপত্র নেই। অনেক ভাটার নেই ট্রেড লাইসেন্স, ডিসি অফিসের লাইসেন্স, এবং পরিবেশ ছাড়পত্র। এছাড়া সংরক্ষিত বনের পাশে এবং ফসলি জমি ও বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি ইটভাটা। অধিকাংশ ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নবায়ন না হলেও ইট পোড়ানো অব্যাহত রয়েছে।</p> <p>এসব ভাটায় ইট তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চল থেকে কাটা টিলা ও আবাদি জমির মাটি, যা পরিবেশ ও ফসলি জমির ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রভাবশালী একটি মহল নদীর পার কেটে মাটিও সংগ্রহ করছে।</p> <p>বৃহস্পতিবার, অবৈধ ওই সাত ইটভাটায় গিয়ে দেখা গেছে, ইট পোড়ানোর জন্য বিপুল পরিমাণ কাঠ মজুদ রাখা হয়েছে। এসব ইটভাটা পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি আবাদি জমির পরিমাণ কমিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে মাটি পরিবহনের ফলে কাঁচা-পাকা রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। এক কথায়, ভাটা মালিকরা কোনো আইন মানছেন না।</p> <p>গত ৬ নভেম্বর, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান মির্জাপুরে একটি প্রকল্প পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'নতুন করে ইটভাটা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য হোল্ডিং নম্বর থাকা আবশ্যক।' তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দ্রুত অভিযান চালানোর নির্দেশ দেন।</p> <p>অভিযোগ রয়েছে, ভাটা মালিকরা জমির শ্রেণি পরিবর্তনের অনুমতি না নিয়ে বিভিন্ন পন্থায় আবাদি জমিকে ভাটা স্থাপনের উপযোগী হিসেবে উপস্থাপন করছেন। মির্জাপুর পৌরসভা ও গোড়াই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় উপজেলাকেন্দ্রের মাত্র এক কোয়ার্টার কিলোমিটার দূরে শামীম নামে এক ব্যক্তি আবাদি জমিতে দ্বিতীয় ইটভাটা স্থাপন করেছেন, যেখানে তার একটি পুরোনো ভাটা ইতিমধ্যে রয়েছে।</p>