<p style="text-align:justify">হাসি বেগমের বয়স তখন ৫ বছরের মতো। তখন নিখোঁজ হন তার মা জাহানার বেগম। ২৫ বছর ধরে মাকে খুঁজে চলেছেন তিনি। কল্পনাতেও ভাবেননি মাকে খুঁজে পাবেন। সেই মাকে ফিরে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হাসি বেগম। </p> <p style="text-align:justify">শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) দুপুরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া এলাকায় ২৫ বছর পর তার ছোট মেয়ে হাসি বেগমসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হয় জাহানারা বেগমের। জাহানারা বেগম (৬০) বরগুনা সদর উপজেলার ঘটবাড়িয়া গ্রামের আবদুল লতিফ ফরায়েজীর স্ত্রী এবং ৫ সন্তানের জননী। এর আগে ১৯৯৯ সালে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে তিনি নিখোঁজ হয়েছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">জাহানারা বেগমের বোন জামাই মোস্তফা মির্জা বলেন, আজ থেকে ২৫ বছর আগে জাহানারা বেগম তার ৩ বছরের ছোট ছেলে ছায়দুলকে সঙ্গে নিয়ে নিজ বাড়ি থেকে লঞ্চযোগে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছিলেন। ভোরে সদরঘাটে লঞ্চ থেকে নেমে তিনি ছেলেকে রেখে টয়লেটে যান। টয়লেট থেকে বের হয়ে আর ছেলেকে পাননি। এর পর থেকে তাকেও আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আত্মীয়-স্বজনের বাসাসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। হারিয়ে যাওয়া ছোট ছেলে ছায়দুলকেও ১০ বছর আগে খুঁজে পেয়েছে তার পরিবার। </p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, গত ১৫-২০ দিন ধরে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া বাজারে জাহানারা বেগমকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছিল। পরে জাঙ্গালিয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপন তাকে তার বাড়িতে নিয়ে রাখেন। বাড়িতে নিয়ে তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয়। মানসিকভাবে ভেঙে পড়ায় ঠিকমতো পরিবারের নাম-ঠিকানাও বলতে পারছিলেন না তিনি। শুধু বোঝা যাচ্ছিল ‘বরগুনা এবং ঘটবাড়িয়া’ শব্দগুলো। সেই কথাগুলো দিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ছবিসহ পোস্ট দেওয়া হয়। এর পরই বরগুনা থেকে তার স্বজনরা যোগাযোগ করেন রিপন মিয়ার সঙ্গে। আজ শুক্রবার দুপুরে পরিবারের কাছে জাহানারা বেগমকে হস্তান্তর করা হয়। </p> <p style="text-align:justify">দীর্ঘদিন পর মাকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ছোট মেয়ে হাসি বেগম। তিনি বলেন, ‘মাকে খুঁজে পেয়ে যেন আমার পৃথিবী খুঁজে পেয়েছি। আমাদের ছোট রেখেই মা হারিয়ে যান। এখন আমরা সংসার করছি। ধরেই নিয়েছিলাম মায়ের মুখটি আর কখনো দেখতে পাব না।’ এত বছর পর মাকে খুঁজে পাওয়ায় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">জাঙ্গালিয়া বাজার কমিটির সভাপতি আশরাফুল আলম রিপন বলেন, ‘১৫-২০ দিন ধরে এই মহিলা আমার দোকানের সামনে অবস্থান করছিলেন। পরে তাকে ৫-৬ দিন আগে আমার বাড়িতে নিয়ে রাখি। এত বছর পর জাহানারা বেগমকে তার মেয়ের হাতে তুলে দিতে পেরে আমরা আনন্দিত।’</p>