<p style="text-align:justify">ছেলে রুহুল আমিনের প্রসঙ্গ তুলতেই রোজিনা খাতুন ডুকরে কেঁদে উঠলেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘সুস্থ সন্তান জন্ম দিইছি আমি। খাইয়ে না খাইয়ে মানুষ করিছি। পুলিশ গুলি কইরে ছেলেডারে খুঁড়া বানায়ে দেছে।’</p> <p style="text-align:justify">আর বেশি কথা বলতে পারলেন না মধ্যবয়সী এই কৃষকবধূ। ফোন পেয়ে তার ছেলে রুহুল আমিন কৃত্রিম পায়ে ভর দিয়ে এসেছিলেন কালের কণ্ঠ যশোর অফিসে। প্রায় আট বছর আগে কেটে ফেলা পায়ের চিকিৎসা চলছে এখনো। স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না।</p> <p style="text-align:justify">তার ভাষ্য, ‘খুনি এসপি আনিস আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। তার বিচারের দাবি করেছি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আশা করি ন্যায়বিচার পাব।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="৩ ঝুঁকিতে অর্থনীতি, ১৭ বাধা ব্যবসায়" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/18/1731899365-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>৩ ঝুঁকিতে অর্থনীতি, ১৭ বাধা ব্যবসায়</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/18/1447919" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">সেদিন ছিল ২০১৬ সালের ৩ আগস্ট। সন্ধ্যার দিকে যশোরের চৌগাছা থানার এসআই মোখলেস, এএসআই মাজেদসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য উপজেলার বুন্দলিতলায় একটি মোটরসাইকেল থামিয়ে আটক করেন রুহুল আমিন ও তার সঙ্গী ইসরাফিল হোসেনকে। তারা তল্লাশি করে ওই দুজনের কাছ থেকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের চাঁদা আদায়ের রশিদ ও মাসিক সাংগঠনিক রিপোর্ট উদ্ধার করেন। একদিন পর একই স্থানে তথাকথিত ক্রসফায়ারে রুহুল ও ইসরাফিল গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাদের একটি করে পা কেটে ফেলতে হয়।<br /> সম্প্রতি এই ঘটনার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) শরণাপন্ন হয়েছেন রুহুল ও ইসরাফিল।</p> <p style="text-align:justify">তারা আইসিটির চিফ প্রসিকিউটর বরাবর যে আবেদন করেছেন সেখানে ঘটনাটিকে সাজানো হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ঠাণ্ডামাথায় গুলি করে দুই ছাত্রের পা খোঁড়া করে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে যশোরের তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) আনিসুর রহমান, চৌগাছা থানার তৎকালীন এসআই আকিকুল ইসলামসহ ছয়-সাতজনকে।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="দেড় দশকে কৃষিতে ভর্তুকি দেড় লাখ কোটি, সিংহভাগই হয়েছে লুটপাট" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/18/1731898484-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>দেড় দশকে কৃষিতে ভর্তুকি দেড় লাখ কোটি, সিংহভাগই হয়েছে লুটপাট</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/18/1447916" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">রুহুল আমিন ও ইসরাফিল হোসেনের ভাষ্য, বাড়ি ফেরার পথে পুলিশ তাদের ৩ আগস্ট আটক করে প্রথমে চৌগাছা থানায় নিয়ে যায়। সেখানে এক রাত তাদের ওপর নৃশংস অত্যাচার করা হয়। পরদিন ৪ আগস্ট সকালে বাড়ি থেকে পাঠানো নাশতা খান তারা। স্থানীয় সাংবাদিক রহিদুল ইসলাম খান পেশাগত কাজে থানায় গিয়ে তাদের দুজনকে দেখতে পান এবং কথা বলেন। দুপুর ১২টার দিকে থানার এসআই আকিকুল ইসলাম আটক দুজনকে আদালতে হাজির করার কথা বলে যশোর ডিবি অফিসে নিয়ে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যায় ফের চৌগাছার উদ্দেশে নেওয়া হয় দুজনকে। যশোর-চৌগাছা সড়কের কয়ারপাড়া এলাকায় দুজনের চোখ বেঁধে হাত পিছমোড়া করে হাতকড়া পরানো হয়। এর কিছু সময় পর সেই বুন্দলিতলায় নির্জন মাঠে নিয়ে তাদের দুজনের একটি করে পায়ে গুলি করে পুলিশ। এরপর চোখ থেকে কাপড় খুলে তা পায়ের হাঁটুতে বেঁধে দেওয়া হয়। গুলি করার পর পুলিশ সদস্যরা চিৎকার করে মুখ খিস্তি করতে থাকেন। এতে আশপাশের কিছু লোক জুটলে এসআই আকিকুল আহত দুজনকে না চেনার ভান করে তাদের নাম জিজ্ঞাসা করতে থাকেন।</p> <p style="text-align:justify">রুহুল ও ইসরাফিলের বর্ণনায়, এরপর তাদের আনা হয় প্রথমে চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে। তৃতীয় দিন তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে। সেখানে সাত দিনের মাথায় তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পা দুটি কেটে ফেলেন চিকিৎসকরা। এরপর দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে রুজু করা অস্ত্র মামলায় আদালতের মাধ্যমে তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে। ওই বছরের ৩১ অক্টোবর দুজনকে জামিনে মুক্তি দেন আদালত।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বিরক্তিকর বিষয় আছে, তবে সেগুলো বাধা হবে না: ভারতীয় হাইকমিশনার" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/18/1731897437-994df35b01f69a73cacd0f483b57bda7.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বিরক্তিকর বিষয় আছে, তবে সেগুলো বাধা হবে না: ভারতীয় হাইকমিশনার</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/18/1447913" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">‘ক্রসফায়ার নাটকের’ শিকার ইসরাফিল হোসেন ও রুহুল আমিন পরস্পর বন্ধু। সেই সময় ইসরাফিল যশোর মাইকেল মধুসূদন কলেজে অর্থনীতি এবং রুহুল একই প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা প্রথম বর্ষে পড়তেন। তারা ছাত্রশিবির চৌগাছা উপজেলা শাখার যথাক্রমে সাধারণ সম্পাদক ও সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন।</p> <p style="text-align:justify">ইসরাফিল কালের কণ্ঠকে বলেন, আওয়ামী দুঃশাসনে ন্যায়বিচার পাবেন না আশঙ্কায় তারা আইনের আশ্রয় নেননি। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা বিচার চান। সে কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">আরেক ক্ষতিগ্রস্ত রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের দুই বন্ধুর জীবন শেষ করে দিয়েছে যশোরের তৎকালীন কুখ্যাত এসপি আনিস ও তার খুনি বাহিনীর সদস্যরা। আমরা দুজনই গরিব ঘরের সন্তান। আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়ায় আনিস ও তার সহযোগীদের বিচার চাই।’</p> <p style="text-align:justify">কথা হয় এই ঘটনায় অভিযুক্ত চৌগাছা থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আকিকুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ বেমালুম অস্বীকার করেন। বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ পিবিআইতে কর্মরত পুলিশ ইন্সপেক্টর আকিকুল টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনা ঘটেছিল বলে মনে করতে পারছি না। আইসিটিতে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ হয়েছে কি না তা-ও জানি না।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ক্রসফায়ারে হত্যার মামলায় বেনজীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/30/1730253447-6fe58cd8aeff84f72ba0d4ed956a62a1.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ক্রসফায়ারে হত্যার মামলায় বেনজীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/Court/2024/10/30/1440723" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">পা হারানো ইসরাফিল চৌগাছা উপজেলার চুটারহুদা গ্রামের গরিব কৃষক আবদুর রহমানের ছেলে। তার এক ভাই কৃষক, এক ভাই রাজমিস্ত্রি, আরেক ভাই বাসের সুপারভাইজার। সবচেয়ে ছোট ইসরাফিল যশোর এমএম কলেজ থেকে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভের পর এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।</p> <p style="text-align:justify">রুহুল আমিন একই উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের ইমদাদুল হকের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় রুহুল। ছোট ভাই ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর রুহুল অনার্স শেষ করতে পারেননি। নিম্ন কৃষক পরিবারের এই সন্তান পরে স্থানীয় একটি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">ইসরাফিলের ভাই বাসের সুপারভাইজার শাহ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের যে দিন গেছে তা বর্ণনা করা যাবে না। ভাইকে গুলি করে পা খোঁড়া করে দিয়েও পুলিশ ক্ষ্যান্ত হয়নি। প্রায়ই বাড়িতে এসে হাঙ্গামা করত। টাকা দাবি করত। আমরা গরিব মানুষ। মাঠের জমি সামান্য। ভিটাও ছিল না। টাকার অভাবে ভাইয়ের চিকিৎসা খরচও ঠিকমতো জোগাতে পারিনি।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বেনজীরের ক্যাশিয়ার মিজানের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/09/20/1726828633-c9fd6fdf6a48d3cd44e325e95e7cf0b5.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বেনজীরের ক্যাশিয়ার মিজানের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ</p> </div> </div> </div> <p><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/dhaka/2024/09/20/1427227" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">ইসরাফিল ও রুহুল দুজনেরই একটি করে কৃত্রিম পা লাগানো হয়েছে। দুজন কালের কণ্ঠকে তাদের কষ্টের কথা তুলে ধরেন। জানান, পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় বিদেশে চিকিৎসা নিতে পারেননি। এখনো চিকিৎসা শেষ হয়নি তাদের। তবু জীবনের তাগিদে চাকরি করতে হচ্ছে। পা হারানোর পর আগের সেই আনন্দময় জীবন নেই তাদের। এখন খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়। যেখানে ইচ্ছা যেতে পারেন না।</p> <p style="text-align:justify">বন্দুকযুদ্ধের নামে ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে দুই তরুণের পা নষ্ট করে দেওয়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত যশোরের তৎকালীন পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান আওয়ামী লীগের শাসনামলের শেষ দিকে রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ছিলেন। সরকার পতনের পর গোপালগঞ্জের এই বিতর্কিত অফিসারকে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে সংযুক্ত করা হয়। অনেক খুঁজেও তার বর্তমান অবস্থান জানা যায়নি।</p> <p style="text-align:justify">আনিসুর যশোরের এসপি থাকাকালে বহু ক্রসফায়ার ও জঙ্গি নাটক হয়েছে। পুলিশ বিভাগে বলাবলি আছে, তার আগে-পরে যশোরে এত নৃশংস, দুর্নীতিবাজ, বেপরোয়া পুলিশ কর্মকর্তার দেখা মেলেনি। হাসিনা সরকারের পতনের পর এসপি আনিসুরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।</p>