<p>প্রতিবছরই বোরো মৌসুমে ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে বসতঘর ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ পিছু না ছাড়ায় চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকা ও হাওরাঞ্চলের কৃষকরা। এতে তাদের মন ভেঙে গেলেও উঁচু জমিতে নতুন স্বপ্ন নিয়ে রোপা আমনের চারা রোপণ করেছেন তারা। সেই জমিতে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক এলাকায় পাকা আমন ধান কেটে মাড়াই করেছেন কৃষকরা। এই কাজে সহযোগিতা করতে সঙ্গে যোগ দিয়েছেন পরিবারের অন্য সদস্যরাও। </p> <p>কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর সুনামগঞ্জে ৮৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর ধানের উৎপাদন হবে দুই লাখ ১৪ হাজার মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য এক হাজার ২৫ কোটি টাকা।</p> <p>কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে সংগ্রাম করে চলতে গিয়ে প্রতিবছরই কৃষি ও অর্থনীতি বারবার বন্যার ধাক্কা খেলেও পিছু হটেননি কৃষক বরং সব ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে মাঠে নেমে পড়েন তারা। কারণ কৃষির বিকল্প নেই। আর চলতি বছরে তিন দফা বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি কাটিয়ে এবারও রোপা আমন চাষে মাঠে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করেছেন কৃষকরা। এখন পাকা ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। </p> <p>জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, দোয়ারাবাজার, ছাতক, মধ্যনগর, শান্তিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিকূল আবহাওয়ায় বোরো ধানের চেয়ে ঝুঁকি কম হওয়া ও ধানের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় আমন চাষে আগ্রহী হন কৃষকরা। লাভের আশায় গত মৌসুমের চেয়ে এবার অতিরিক্ত ১০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করেছে ১২টি উপজেলার প্রায় তিন লাখ কৃষক। জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় আমনের ভাল ফলনও পেয়েছেন তারা। ধান কেটে মাড়াই ও শুকানোর কাজ করেছেন তারা। </p> <p>তারা বলছেন, 'আমন ধানের আবাদে বাড়তি দামে সার বীজ কিনতে হয়েছে। এ ছাড়া শ্রমিক খরচও আর জালার (চারা) দামও অনেক বেশি ছিল। ধানের দাম বেশি পেলে লাভবান হব। তবে কৃষি অফিস থেকে বিনা মূল্যে বীজ ও সার সময় মত পেলে লাভবান হব।' </p> <p>বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের বাগগাও গ্রামের হাওরে আমন ধান চাষ করা দিদার আলম বলেন, 'তিন কিয়ার জমিতে আমনের চারা রোপণ করেছিলাম। তিন কিয়ারে ৪৫ মণ ধান পেয়েছি। ফলন ভালা হয়েছে। ছেলে-মেয়ে নিয়া ভাল থাকব।' </p> <p>বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ নয়ন মিয়া জানান, এবার উপজেলায় রোপা আমন আট হাজার ৭৭০ হেক্টর জমিতে ১৫ হাজার ৬৫০ জন কৃষক চাষাবাদ করেছেন। চাষকৃত জমিতে ৩৬ হাজার ৫৪১ টন ধান উৎপাদন হবে। এর আনুমানিক মূল্য চার কোটি ৬৭ লাখ ৭৩ হাজার ৩৩৩ টাকা।</p> <p>সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দিয়েছি। কৃষি বিভাগ বলছে, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা যাতে ন্যায্য মূল্যে সার ও বীজ কিনতে পারেন সেজন্য বাজারে নজরদারি ছিল। আমাদের মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তা সব সময় কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন। যাতে তারা কষ্টে ফলানো ধান গোলায় তুলতে পারেন। এবার লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে বেশি আমনের চাষ হবে আর ধানও উৎপাদন হবে।</p>