<p style="text-align:justify">নাটোরের বাগাতিপাড়ার মাড়িয়া এলাকার একটি অংশ তাঁত শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে তাঁতীদের পরিবারে দুর্দশা। উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি, কাপড়ের চাহিদা কমা ও সরকারি সাহায্যের অভাবে অনেকটা পথে বসার উপক্রম তাদের। এমন পরিস্থিতিতে অনেকে পেশা বদলাচ্ছেন। ফলে একরকম হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প।</p> <p style="text-align:justify">উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ১ নম্বর পাঁকা ইউনিয়ন। সেখানকার মাড়িয়া এলাকার কারিগরপাড়ায় ঢুকতেই কানে আসে তাঁতের খট-খট শব্দ। বর্তমানে ওই এলাকায় প্রায় ৩০টি পরিবার তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত। কয়েক বছর আগে আরো অনেক পরিবার তাঁতে কাপড় বানিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তবে সংখ্যাটি ক্রমেই কমছে।</p> <p style="text-align:justify">তাঁতীদের প্রায় সবাই এই পেশাকে অলাভজনক বলছেন। ধারাবাহিক লোকসানে তারা হতাশ। তারা বলছেন, সারা দেশেই তাঁতের কাপড়ের কদর কমেছে। আধুনিক কারখানায় তৈরি কাপড়ের কারণে তাঁতের কাপড়ের চাহিদা নেই বললেই চলে। কেউ কেউ শখ করে পরছে এ কাপড়। তাঁতশিল্প এখন অনেকটা বিলুপ্তির পথে।</p> <p style="text-align:justify">তাঁতীরা জানান, তাদের কেউ কেউ ঋণ নিয়ে তাঁতের কাজ চালিয়ে গেছেন। তবে সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় এলাকাছাড়া হয়েছেন। তারপরও বাপ-দাদার পেশা ধরে রাখতে রয়ে গেছেন কেউ কেউ।</p> <p style="text-align:justify">মাড়িয়া এলাকায় একসময় দুই শতাধিক বাড়িতে তাঁতের কাজ হতো। সারা দিন বাহারি রঙের গামছা, লুঙ্গি, শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত থাকতেন তারা। সেসব বিক্রি করতে বিভিন্ন গ্রামের হাটবাজারে যেতেন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। এখানকার তৈরি কাপড় কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা আসতেন। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ৩০টি বাড়িতে চলে তাঁতের কাজ, তাও শুধু গামছা বানানো হয়।</p> <p style="text-align:justify">তাঁতশিল্পী বেলী বেগম জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি এ শিল্পের সাথে জড়িত। বাবার বাড়িতেও করতেন, এখন স্বামীর বাড়িতে এসেও এ কাজ করছেন।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ‘আমাদের সকল দিক থেকেই লোকসান গুণতে হয়। কাজের নায্য মজুরি আমরা কখনোই পাই না। প্রায় ১০-১২ বছর হলো সরকারিভাবে কোনো রকম সাহায্য সহযোগিতাও তারা পাচ্ছেন না। জিনিসপত্রের দাম বাড়লেও তাদের কর্মের দাম এখনও বাড়েনি।’</p> <p style="text-align:justify">তিনি জানান, তাদের খোঁজ-খবর এখন আর কেউ রাখেন না। প্রতিটি গামছা পাইকারদের কাছে তারা গড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি করেন। এতে তাদের লাভ থাকে সামান্য, মাঝে মাঝে লোকসানও হয়। সরকারিভাবে সাহায্য-সহযোগিতা পেলেই কেবল এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব।</p> <p style="text-align:justify">আরেক তাঁতী ইউসুফ আলী জানান, তিনি আগে তাঁতের কাজ করতেন, এখন ভ্যানগাড়ি চালান। বাড়িতে তার স্ত্রী তাঁতের কাজ করেন। তার স্ত্রী দিনে ৮ থেকে ৯টি গামছা বুনতে পারেন। তার বাড়িতে আগে চারটি তাঁত ছিল। এখন আছে একটি। বাইরে থেকে পাইকাররা এসে এগুলো কিনে নিয়ে যান। বাজারের দামের চেয়ে তাদের অনেক কম মূল্যে এগুলো বিক্রি করতে হয়। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই আয় দিয়ে চলা যায় না।</p> <p style="text-align:justify">পাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তাঁতীদের সাহায্য করার মতো কিছু ইউনিয়ন পরিষদে ব্যবস্থা নেই।’ এ বিষয়ে তাঁতীদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হা-মিম তাবাসসুম প্রভা বলেন, ‘এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে তাঁতীদের উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।’</p>