<p style="text-align:justify">মৃৎশিল্পের তৈজসপত্র তৈরিতে এক সময় বাকেরগঞ্জের মহেশপুর গ্রাম উপকূলীয় জনপদের মধ্যে বিখ্যাত ছিল। প্রযুক্তির ছোঁয়া ও নতুন নতুন শিল্পসামগ্রীর প্রসারের কারণে মাটির তৈরি নান্দনিক এই শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে।</p> <p style="text-align:justify">সরেজমিনে বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতি ইউনিয়নের মহেশপুর পালপাড়া এলাকা ঘুরে জানা যায়, গ্রামটিতে ৫০ বছর আগেও ৩ হাজার পরিবার মৃৎশিল্পের কাজে নিয়োজিত ছিল। তবে এখন রয়েছে ৪০০ পরিবার।</p> <p style="text-align:justify">বাজারে এখন আর আগের মতো মাটির তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা নেই। এর প্রধান কারণ, এর স্থান দখল করে নিয়েছে দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি সামগ্রী। ফলে বিক্রেতারা মাটির জিনিসপত্র আগের মতো আগ্রহের সঙ্গে নিচ্ছেন না।</p> <p style="text-align:justify">এ কারণে পুরনো এ পেশার সঙ্গে জড়িত অনেকে পেশা বদল করে অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মাটির জিনিসপত্র তার পুরনো ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। ফলে এ পেশায় যারা জড়িত এবং যাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন মৃৎশিল্প তাদের জীবনযাপন একেবারেই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। দুঃখ-কষ্টের মাঝে দিন কাটলেও মৃৎশিল্পীরা এখনো স্বপ্ন দেখেন।</p> <p style="text-align:justify">কোনো একদিন আবারও কদর বাড়বে নান্দনিক মাটির তৈরি এসব পণ্যের। সেদিন হয়তো আবারও তাদের পরিবারে ফিরে আসবে সুখ-শান্তি। আর সেই সুদিনের অপেক্ষায় আজও দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন এ পেশার সঙ্গে জড়িতরা।</p> <p style="text-align:justify">পরিবারগুলোর নারী, পুরুষ ও শিশুরাও কাজ করছে। মাটির বিভিন্ন আকারের কলস, হাঁড়ি, বাসন, চায়ের কাপ ও প্লেট, বাটি, শরা, ফুলদানি, টপ, ব্যাংক ঘট, গামলা, চারি, টালি, বদনা, চারা ইত্যাদি তৈরি করছেন তারা। এ ছাড়া বাড়িঘরের সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য মাটি দিয়ে ফুলদানি, টপ, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, হরিণ, সাপসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি তৈরি করে থাকেন।</p> <p style="text-align:justify">এগুলো প্রথমে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়। পরে এক সপ্তাহ রোদে শুকানো হয়। এরপর পোড়ানো হয়। পোড়ানো হলে এসব পণ্যে রং করা হয়। মৃৎশিল্পের নান্দনিকতায় তৈরি এসব পণ্য বিভিন্ন হাটে, বাজার এবং মেলায় পসরা বসিয়ে বিক্রি করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">মহেশপুর পালপাড়ার শ্রীধাম চন্দ্র পাল বলেন, ‘নদী-খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন মাটি সংগ্রহে অনেক খরচ করতে হয়। কিছুদিন আগে মৃৎ পণ্যগুলো নৌকায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় কম খরচে পাঠানো যেত, কিন্তু নৌপথে যোগাযোগ ভালো না থাকায় এখন আর পাঠানো যায় না।’</p> <p style="text-align:justify">বেতাগী পৌর শহরে শনিবার ও বুধবারে সাপ্তাহিক হাটে বিভিন্ন ধরনের মৃৎশিল্পের তৈরিকৃত সামগ্রী নিয়ে বিক্রি করতে আসেন মহেশপুর গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শম্ভু পাল। এ সময় তার সঙ্গে এসব তৈরীকৃত পণ্য নিয়ে কথা হয়। শম্ভু পাল বলেন, ‘আমাদের তৈরি করা মৃৎশিল্প ঢাকা জাতীয় জাদুঘরসহ বিভিন্ন অফিসে শোভা পাচ্ছে।’</p> <p style="text-align:justify">মহেশপুর গ্রাম থেকে বেতাগী পৌর শহরের গত বুধবার হাটে তৈজসপত্র বিক্রি করতে আসা জগন্নাথ পাল (৬৮) বলেন, ‘সরকারি কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে, তাহলে মৃৎশিল্পকে বাঁচানো সম্ভব হবে।’</p> <p style="text-align:justify">বেতাগী প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও উপজেলা বসুন্ধরা শুভসংঘের সভাপতি কামাল হোসেন খান বলেন, ‘মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন।’</p>