<p style="text-align:justify">স্বপ্নে পাওয়া পানিপড়া দেওয়ার নামে অভিনব প্রতারণা করে চলেছেন কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ হোসেন। বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নের ফাইতং বাজারসংলগ্ন হেডম্যানপাড়া এলাকায় সৌদিয়া ক্লথ স্টোর নামের দোকান থেকে দেওয়া হয় পানিপড়া। বিনিময়ে হাদিয়া হিসেবে নেওয়া হয় হাজার হাজার টাকা। যদিও সেই পানিপড়া দিয়ে হয় না কোনো শেফা।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, স্বপ্নে পাওয়া সেই পানিপড়া নিতে সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে মানুষজন ভিড় জমায়। এতে ফাইতং-গজালিয়া সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিঘ্নিত হয় জনসাধারণের স্বাভাবিক চলাচল। এ বিষয়ে কথা হয় ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুকের সঙ্গে। তবে এসব কর্মকাণ্ডের বিষয়ে তার বক্তব্য সুস্পষ্ট নয়।</p> <p style="text-align:justify">অনুসন্ধানে জানা যায়, কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ হোসেন পার্শ্ববর্তী উপজেলা চকরিয়ার পহর চাঁদা এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। দীর্ঘ ১৭ বছর সৌদি আরবে ছিলেন তিনি। সৌদি থেকে এসে প্রথমে লামার ফাইতং বাজারে মুদির দোকানের ব্যবসা শুরু করেন। তারপর তিনি সুকৌশলে প্রচার চালাতে থাকেন যে, সে স্বপ্নের মধ্যে আল্লাহর কাছে মানুষের সমস্যা সমাধান করার জন্য বিশেষ মর্তবা পেয়েছেন। </p> <p style="text-align:justify">এরপর স্থানীয় কিছু লোভী মানুষকে হাত করে তাদের মাধ্যমে ভণ্ডামির প্রচারণা চালিয়ে যান তিনি। এমনকি তার নিজ গ্রামের বিবিরখিল জামে মসজিদের নামে প্রথমে ৮টি দানবাক্স বানিয়ে প্রতি শনি-মঙ্গলবারে পানিপড়া ও কবিরাজি চিকিৎসার জন্য আসা মানুষের কাছে কৌশলে হাতিয়ে নেন হাদিয়া। এভাবেই চলতে থাকে তার ব্যবসা। এ যে লালসালু উপন্যাসের হুবহু কোনো ঘটনা। </p> <p style="text-align:justify">পানিপড়া মানুষের কাছ থেকে সরাসরি হাদিয়া নেন কি না, জানতে চাইলে কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ হোসেনের সঙ্গে থাকা ৩০-৩৫ জনের সিন্ডিকেট প্রতারকরা তখন চিৎকার করে বলেন, ‘উনি কোনো হাদিয়া নেন না। তবে যার যা ইচ্ছা মসজিদের দানবাক্সে দান করেন। সেখানে তারা ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দেন বলে আমরা খবর পেয়েছি।’</p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে মোহাম্মদ হোসেনের এলাকার চাঁদার মোর্শেদ নামের এক ব্যক্তি জানান, সপ্তাহের প্রতি দুই দিনে ২ থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো দানবাক্স থেকে তোলা হয়। দানবাক্সগুলো তার নিজস্ব লোকের কাছে থাকে।</p> <p style="text-align:justify">মোর্শেদ আরো জানান, পহর চাঁদার বিবিরখিল জামে মসজিদের দানবাক্সগুলো থেকে আনুমানিক ৩০ লাখ টাকা থেকে শুধু ৫০ হাজার ৭০০ টাকা মসজিদ কমিটিকে দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকার কথা মসজিদ কমিটি জানতে চাইলে টাকাগুলো পরে দেওয়া হবে বলে কৌশলে এড়িয়ে যান কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ হোসেন। পাশাপাশি ফাইতং জামে মসজিদের নামে ও অন্যান্য মসজিদের দানবাক্স দিয়ে টাকা তোলা হয়।</p> <p style="text-align:justify">ফাইতং ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাসির উদ্দিন বলেন, কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ হোসেনের পানিপড়া পান করে ফাইতং বাজারের বাসিন্দা বেলাল নামের বাকপ্রতিবন্ধী যুবক কথা বলতে পারে বলে গুজব ছড়ানো হয়। তবে ধর্মান্ধ মানুষের বিশ্বাস নিয়ে তিনি ছিনিমিনি খেলছেন প্রতিনিয়ত।</p> <p style="text-align:justify">সরেজমিনে গিয়ে বাকপ্রতিবন্ধী বেলালের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, সে কথা বলতে পারে না, আগের মতোই আছে। ইশারা-ইঙ্গিতে বেলাল বোঝাতে চায় মোহাম্মদ হোসেন একজন ভণ্ড। বাকপ্রতিবন্ধী বেলালকে টাকা দিয়ে কৌশলে তার পাশে রেখে প্রচারণার স্বার্থে লোক দেখানো নাটক করতেন দিনের পর দিন।</p> <p style="text-align:justify">কথিত কবিরাজ মোহাম্মদ হোসেন জানান, আল্লাহ তাআলা স্বপ্নের মধ্যে এসে তাকে বলেন, তুমি পানিপড়া ও বিশেষ গাছের রসের মাধ্যমে মানুষের চিকিৎসা করো। </p> <p style="text-align:justify">তিনি আরো জানান, তার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ও মেয়ে ডাক্তার। তার কোনো অভাব নেই। দানবাক্সের উত্তোলিত টাকার প্রতি তার কোনো লোভ নেই।</p> <p style="text-align:justify">তার নিজ এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন জানান, মোহাম্মদ হোসেনের প্রথম স্ত্রীর বড় ছেলে সুহেল ইয়াবা মামলার আসামি। বর্তমানে তিনি মালয়েশিয়া থাকেন। দ্বিতীয় ছেলে ছোটনও ইয়াবা মামলার পলাতক আসামি। তার কোনো ছেলে-মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার নন। তাদের ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার পরিচয় দেওয়া তার প্রতারণার আরেকটি অভিনব কৌশল।</p> <p style="text-align:justify">পানিপড়ার জন্য আসা পার্শ্ববর্তী উপজেলার লক্ষ্মারচরের বাসিন্দা মো. আকবর ও আসাফ উদ্দিন জানান, মানুষের কাছে শুনে ফাইতং গিয়ে পানিপড়া পান করেন। তবে কোনো উপকার পাননি তারা। </p> <p style="text-align:justify">এ বিষয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পানিপড়া পান করে তারা কোনো উপকার পাননি। অনেকেই জানান, এসব নিছক ভণ্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়।</p> <p style="text-align:justify">লামা উপজেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান চৌধুরী জানান, অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। </p> <p style="text-align:justify">লামার সুশীল সমাজের পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি লামার কোর্ট অফিসার অ্যাডভোকেট আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই ধর্মান্ধতার কারণে আবেগের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করায়। ধর্মীয় গোঁড়ামিকে অন্ধবিশ্বাস করে অনেকের শোনা কথায় এখনো মানুষ কুসংস্কারের পথে দৌড়ায়।’</p> <p style="text-align:justify">এসব প্রতারণা বন্ধের জন্য প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে জানিয়েছেন তিনি।</p>