<p>বাড়ির পাশেই পড়েছিল অটোরিকশা। কিন্তু তার ব্যাটারিগুলো ছিল না। শুধু তা-ই নয়, ওই অটোরিকশা চালকের মুঠোফোনও বন্ধ। এতে দিশাহারা মা জেসমিন বেগম। কারণ আগের দিন বিকেলে অটোরিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন মহিন মিয়াজী (১৯) নামের এক কিশোর। আর ফেরেননি তিনি।</p> <p>মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) মহিনের হত্যারহস্য উদঘাটন করে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব। চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণে অটোরিকশা ছিনিয়ে নেওয়ার সময় তাকে হত্যা করেন যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা। এই ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। </p> <p>পুলিশ জানায়, যাত্রীবেশী ছিনতাইকারীরা ধারণা ছিল, মহিনের অটোরিকশা বিক্রি করে ভালো দাম পাবে। কিন্তু সেই ধারণা পাল্টে যায়, কারণ সেটি ছিল পুরনো। এতে দামও ভালো মিলবে না। এদিকে অটোরিকশা পুরনো হলেও তার ব্যাটারিগুলো নতুন ছিল। তাই পুরনো অটোরিকশা থেকে খুলে নেওয়া হলো ব্যাটারিগুলো। ততক্ষণে মহিনকে হত্যা করেন তারা। এর আগে তার অটোরিকশায় নিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ান এই ঠাণ্ডা মাথার খুনিরা।</p> <p>শুক্রবার বিকেলে মতলব দক্ষিণ উপজেলার ডিঙাভাঙা গ্রামের অটোরিকশাচালক কিশোর মহিন মিয়াজীকে ভাড়া নেওয়ার কথা বলে মুঠোফোনে ডেকে নেন এক যুবক। পরে অটোরিকশা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন মহিন। কিন্তু ওই রাতে আর বাড়ি ফেরেননি তিনি। পরের দিন সকালে বাড়ির অদূরে একটি জমিতে সন্ধান মেলে মহিন ও তার অটোরিকশার।</p> <p>এই ঘটনায় তার মা জেসমিন বেগম বাদী হয়ে মতলব দক্ষিণ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন।<br /> পুলিশ হত্যাকাণ্ড তদন্ত করতে গিয়ে মহিনের মুঠোফোনের সূত্র ধরে প্রথমে কালু (২৩) ও রাব্বি (২৫) নামের দুজনকে আটক করে। পরে জসিম (২৮) নামের আরো একজনকে আটক করে তারা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ইসমাইল (৪৫) নামের আরো একজনকে আটক করে পুলিশ। তিনজনের কাছ থেকে অটোরিকশার চারটি ব্যাটারি ক্রয় করেছিলেন ইসমাইল।</p> <p>পুলিশ সুপার জানান, মূলত অটোরিকশা ছিনিয়ে নিয়ে বিক্রি করার জন্য শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় মহিন মিয়াজীকে। কিন্তু অটোরিকশা পুরনো হওয়ায় তার চারটি নতুন ব্যাটারি খুলে নিয়ে মতলব দক্ষিণের নওগাঁও এলাকার দোকানি ইসমাইলে কাছে ২৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন ওই তিন যুবক। </p> <p>পুলিশ সুপার আরো জানান, হত্যাকাণ্ডের পর অপরাধীরা এলাকায় অবস্থা করেন। কিন্তু নিহতের ছিনিয়ে নেওয়া মুঠোফোনের কললিস্ট ধরে আলাদাভাবে অভিযান চালিয়ে ওই চারজনকে আটক করতে সক্ষম হন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।</p> <p>প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অকপটে হত্যার দায় এবং অটোরিকশার ব্যাটারি বিক্রির কথা স্বীকার করেন তারা। বিকেলে এই চারজনকে চাঁদপুরের আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ড নিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তারা। পরে আদালতের নির্দেশে তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।</p> <p>জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়, অতিথি পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) রাশেদুল হক চৌধুরীসহ মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা।</p> <p>হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার দাবি করে মহিননের মা জানান, তার স্বামীর মৃত্যুর পর এই ছেলে সংসারের হাল ধরে। সমিতি এবং বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতো মহিন। কিন্তু তার এমন পরিণতিতে এখন সংসার চালানোর আর কেউ থাকল না।</p>