<p>অপহরণের পর তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে ধর্ষণ ও নির্যাতনের পর এক মাদরাসাছাত্রীকে (১৪) বাড়ির সামনে ফেলে রেখে গেছে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. হোসাইন। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হলেও তার বয়স ১৯ বছর। পরীক্ষায় বার বার ফেল করে একই শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সে। জীবন নিয়ে বাড়িতে ফেরা হলেও এখন মৃত্যু যন্ত্রণায় দিন কাটে ওই ছাত্রীর। এই অবস্থায় সংকটাপন্ন অসহায় তার পরিবার। মেয়েটির ডান চোখে মারাত্মক আঘাত। চোখটি তুলে ফেলে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পরিবারের কাছে দিয়েছেন চিকিৎসক। চোখটি বাড়ির ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়েছে।</p> <p>এমন মর্মান্তিক এক ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরুল ইউনিয়নের বাকচান্দার এক গ্রামে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা হলেও এখনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি ময়মনসিংহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।</p> <p>স্থানীয় সূত্র ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ওই কিশোরী নান্দাইল উপজেলার স্থানীয় এক মাদরাসার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। পাশেই বাকচান্দা আব্দুস সামাদ উচ্চবিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে স্থানীয় কচুরী গ্রামের মো. হানিফ মিয়ার ছেলে হোসাইন। সে ওই ছাত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া ছাড়াও মাদরাসা ও প্রাইভেটে যাওয়া-আসার পথে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। এ নিয়ে গ্রামে সালিশ হলেও দমে থাকেনি হোসাইন। </p> <p>স্থানীয়রা জানান, গত ১ জুন প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় ছাত্রীটিকে দলবলসহ উঠিয়ে নিয়ে যায় হোসাইন। পরে অনেক জায়গায় খোঁজ করেও মেয়েটির সন্ধান পায়নি পরিবার। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে থানায় গিয়ে কোনো ধরনের আইনি সহায়তা নিতে পারেনি পরিবার। </p> <p>তিন মাস পর গত ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরে অপহৃত ছাত্রীটিকে বাড়ির সামনে নান্দাইল-হোসেনপুর সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায় হোসাইন। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখান থেকে ময়মনসিংহ এবং পরে ঢাকার আগারগাঁও চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করানো হয় মেয়েটিকে। সেখানে ১৫ দিন চিকিৎসার সময় বাম চোখ বাঁচাতে আঘাতপ্রাপ্ত ডান চোখটি ওঠিয়ে ফেলা হয়। পরে ওই চোখসহ বাড়িতে রেখে চিকিৎসা চালানোর কথা বলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। </p> <p>নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর বাবা জানান, বাড়িতে আনার পর তার মেয়ের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে আবারো নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। কিন্তু অর্থাভাবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করাতে পারছেন না তারা। অন্যদিকে আদালতে মামলা করলে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে। একজন কর্মকর্তা একদিন বাড়িতে এলেও এরপর আর কোনো খোঁজ-খবর নেননি।</p> <p>শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) ওই ছাত্রীর বাড়িতে গেলে দেখা যায়, ঘরের বারান্দায় একটি চেয়ারে মায়ের সহায়তায় বসে রয়েছে মেয়েটি। ডান চোখ অসম্ভব ফুলে রয়েছে। চোখের নিচে ও নাক দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। টিস্যু  পেপার দিয়ে রক্ত মুছছে আর যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে মেয়েটি। নির্যাতনের পর থেকে সে কানেও কম শুনছে। </p> <p>আহত ওই ছাত্রী জানায়, তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে নারায়ণঞ্জের একটি এলাকায় রাখা হয়। সেখানে চার মাস আটকা ছিল। প্রতিদিনই চলত ধর্ষণ। বাধা দিলে চালানো হতো শারীরিক নির্যাতন। একসময় পালিয়ে বাড়িতে আসার চেষ্টা করলে ওইদিন আঙুল দিয়ে ডান চোখ উঠিয়ে ফেলার চেষ্টা চালায় হোসাইন। এভাবে প্রতিদিনই অত্যাচার চালানো হতো। এরপর চোখ থেকে রক্ত ঝরা শুরু করলে চিকিৎসা না করে বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায় হোসাইন। আহত ছাত্রী কান্নাও করতে পারছে না। </p> <p>মেয়েটি বলে, ‘স্যার, হের (অভিযুক্ত হোসাইন) চোখ তুইল্যা আমার কাছে দেন। আমি তো মাইর‌্যাই যাইয়াম তার পরও আমি মরেও শান্তি পাইয়াম।'</p> <p>ময়মনসিংহ পিবিআইয়ের পরিদর্শক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মোসলেহ উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, পুরো ঘটনা সত্য। তবে এই মামলায় (সিআর) আসামি ধরার কোনো বিধান নেই। এক মাস আগে হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন চেয়ে আবেদন করেছেন তিনি। এখনো প্রতিবেদন না পাওয়ায় আদালতে প্রতিবেদন দিতে পারছেন না বলে জানান তিনি।</p>