<p>মহান বিজয় দিবসে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রস্তুত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের উচ্ছ্বাসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে আসবে লাখো জনতা। </p> <p>বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে জাতির বীর সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, রাজনীতিবিদ ও কূটনীতিকসহ বিশিষ্টজনরা। সৌধ প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করে দেওয়া হলে সর্বস্তরের জনতার শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ফুলে ফুলে ভরে উঠবে শহীদ বেদি।</p> <p>যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে তিন বাহিনীর সশস্ত্র কুচকাওয়াজসহ পুষ্পস্তবক অর্পণের প্রস্তুতিও সম্পন্ন। ইতিমধ্যে ধুয়ে-মুছে রংতুলির আঁচড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি বাহারি রঙের ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। লেক সংস্কার, সীমানাপ্রাচীর ও বিভিন্ন স্থাপনা মেরামতের মাধ্যমে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সৌধ মিনারসহ পুরো চত্বরের হাঁটার পথ, বেদি, স্থাপনা সেজেছে রংতুলির আঁচড়ে। বাগানগুলোতে শোভা পাচ্ছে রংবেরঙের বাহারি ফুল।</p> <p>সরেজমিনে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঘুরে দেখা যায়, নানা রঙের বাহারি ফুলের চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে স্মৃতিসৌধের সবুজ চত্বর। প্রতিবছরের মতো এবারও দিবসটি উদযাপন করতে জাতীয় স্মৃতিসৌধকে ধুয়ে মুছে রংতুলির আঁচড়ে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের উদ্যোগে মাসজুড়ে ধোয়া-মোছা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষে সৌধ এলাকাকে সাজিয়ে তুলেছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। সৌধের চূড়া থেকে শহীদ বেদি, পায়ে চলার সড়ক সবই ধুয়ে-মুছে চকচকে করা হয়েছে। চত্বরের সিঁড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় পড়েছে রংতুলির আঁচড়। হেরিংবন্ড, ইটের পথ, শহীদ বেদি ও গণকবরে ধোয়া-মোছার পর সাদা রঙের শুভ্র আভায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে পুরো সৌধ এলাকা। বৃক্ষরাজি প্রাঙ্গণ আর সবুজ ঘাসের গালিচা কেটে-ছেঁটে নান্দনিক করে তোলার কাজও শেষ করেছেন গণপূর্তের কর্মচারীরা। লেক সংস্কার, সিসিটিভি স্থাপনসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।</p> <p>জাতীয় স্মৃতিসৌধে আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় প্রতিবারের মতো এবারো বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা। এ ছাড়া সাদা পোশাকে কাজ করবে গোয়েন্দা সংস্থার লোক। </p> <p>আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সূত্র জানায়, স্মৃতিসৌধে আগত দর্শনার্থীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের আমিনবাজার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত এবং এর আশপাশের এলাকায় সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিসহ মোতায়েন থাকবেন প্রায় তিন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। সড়ক-মহাসড়কে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ স্মৃতিসৌধ এলাকায় পুলিশ কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুলিশ সদস্য এই মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় কাজ করবেন। </p> <p>১৬ ডিসেম্বরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে শুরু হবে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিকতা। সশস্ত্র বাহিনীর সুসজ্জিত চৌকস দলে রাষ্ট্রীয় সালামের সঙ্গে বেজে উঠবে বিউগলে করুণ সুর। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে জাতীয় স্মৃতিসৌধ। এ উপলক্ষে নেওয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর ৫৪তম বিজয় দিবসের অঙ্গীকার হোক বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক, দুর্নীতিমুক্ত সুখী ও সমৃদ্ধ স্বপ্নের দেশ।</p> <p>সাভার গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা মন্ডলী ও বিদেশি কূটনীতিকসহ লাখো জনতা সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের সম্মানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সেই লক্ষ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সকে ধুয়ে-মুছে পরিপাটি করা, ফুল দিয়ে সাজানো, রং তুলির কাজ, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।</p> <p>ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এ কে এম আওলাদ হোসেন বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে স্মৃতিসৌধে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের তদারকির কাজ পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন তিনি। </p> <p>এ সময় তিনি জানান, ঢাকা-আরিচা সড়কসহ স্মৃতিসৌধের আশপাশে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো নাশকতা বা হুমকি নেই বলে জানান তিনি।</p> <p>জাতীয় স্মৃতিসৌধ পরিদর্শনকালে অন্যান্যের মধ্যে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি আকরাম হোসেন, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আব্দুল মুঈদসহ সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাই থানা এবং গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কর্মকর্তারা। </p>