<p>এসআই মো. সাইফুল ইসলাম (৩৭) গোপালগঞ্জ ডিএসবিতে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি তার বদলি হয় ডিএমপিতে। তবে এখনো তাকে অবমুক্ত দেওয়া হয়নি। কখন চলে যেতে হয় এই জন্য স্থানীয় বন্ধু ও শুভানুধায়ীদের শনিবার দুপুরে গোপালগঞ্জের বাসায় দাওয়াত দেওয়া হয়। রান্না প্রস্তুত। কিন্তু সাইফুল ফেরেনি। সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম দুপুর ২টার দিকে ছেলেকে ফোন করেন। সাইফুল মাকে জানায়, ‘মা তোমরা একটু অপেক্ষা কর, আমি আসছি। কিন্তু সাইফুল আর ফিরে আসেনি। মায়ের সঙ্গে কথা বলার তিন মিনিট পর একটি ফোন থেকে বাসায় জানানো হয় সাইফুল আর বেঁচে নেই। এসব কথাগুলো জানান নিহত সাইফুলের বড় ভাই রাসেল মাহমুদ।</p> <p>সাইফুল ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের নকুলহাটি গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নান মিয়ার ছেলে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট। সে বিবাহিত এবং তার সাবিহা নামে চার বছর বয়সি এক মেয়ে ও সেজাত নামে আড়াই মাস বয়সি এক ছেলে সন্তান রয়েছে।</p> <p>গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে দায়িত্ব পালনকালে গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট আঞ্চলিক সড়ের আড়পাড়া এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যান চাপায় নিহত হন এসআই সাইফুল ইসলাম। ময়না তদন্ত মেষে শনিবার রাত ৯টার দিকে সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের নকুলহাটি গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। রবিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে নকুলহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানের রুবেলের লাশ দাফন করা হয়।</p> <p>রুবেলের বড় ভাই স্থানীয় বিভাগদী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রাসেল মাহমুদ কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার বাবাও শিক্ষক ছিলেন। তিনি আমাদের তিন ভাই-বোনকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলেন। ২০১৩ সালে অনার্স-মাস্টার্স শেষে সরাসরি পুলিশের এসআই পদে যোগ দেয় সাইফুল। ইতিমধ্যে ওসি হওয়ার জন্য পরীক্ষা ও ট্রেনিং শেষ করেছিল। আমার ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল ওসি হওয়ার এবং ছেলে-মেয়েকে মানুষের মতো মানুষ করার। তবে তার স্বপ্ন সড়কে পিষ্ট হয়ে শেষ হয়ে গেল।</p> <p>রবিবার দুপুর ১২টার দিকে সাইফলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক বেদনা বিধুর পরিবেশ। অকালে পরিবারের ছোট সন্তান হারিয়ে পাগলের মতো বিলাপ করছেন তার মা। আর চার বছরের মেয়ে সাবিহা বুঝতেই পারছেন না তার বাবা আর নেই। স্বামী হারানোর বেদনায় কাতর হয়ে শিশু ছেলে কোলে নিয়ে বসে আছেন স্ত্রী তাহমিনা আক্তার। বাড়িতে আত্মীয়স্বজন যারা আসছে, তাদের জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদছেন সাইফুলের বড় ভাই শিক্ষক রাসেল মাহমুদ ও বোন নাজমা সুলতানা। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে বাড়ির পরিবেশ।</p> <p>সাইফুলের চার বছর বয়সী মেয়ে সাবিহা কালের কণ্ঠকে বলে, আব্বু প্রতিদিন রাতে আমার জন্য চকলেট কিনে নিয়ে বাসায় আসতো। আব্বু আমাকে অনেক আদর করত। আজকে আমার আব্বুকে মসজিদের পাশে কবর দিয়ে রাখছে। এখন আর কেউ আমাকে খেলনা বা চকলেট কিনে দেবে না।</p> <p>সাইফুলের মা সুফিয়া বেগম (৬৩) কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা ছেলের সঙ্গে গোপালগঞ্জে থাকতাম। তবে সেখান থেকে বদলি হওয়ার কারণে দুই চার দিনের মধ্যে রুবেলের ঢাকার কর্মস্থলে যোগদানের কথা ছিল। তাই শনিবার দুপুরে বাসায় আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হয়। সেই জন্য সকালে সাইফুল ৬ কেজি খাসি, ৬ কেজি মুরগির মাংস ও ৬ কেজি দুধসহ বাজার করে আনে। দুপুরে রান্না-বান্নার কাজ শেষে রুবেলকে নিয়ে একসঙ্গে খাবো বলে অপেক্ষায় ছিলাম। এরই মধ্যে খবর পাই, আমার ছেলে আর নেই। একটি আয়োজনের দিন এভাবে মৃত্যু সহ্য করতে পারছি না। তাকে হারাতে হবে জানা ছিল না।</p> <p>ছয় বছর আগে সাইফুলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তাহমিনা আক্তার। তিনি ফরিদপুর শহরের কোদাবক্স সড়ক এলাকার বাসিন্দা। সদ্য স্বামী হারা তাহমিনার চোখে মুখে বিষাদের অন্ধকার। এরপরও কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মেয়ের পর ছেলে হওয়ায় অনেক খুশি হয়েছিল সাইফুল। নিজে পছন্দ করে ছেলের নাম রেখেছিল সেজাত। সেজাত মানে সফল বা বিজয়ী। এক বুক স্বপ্ন ছিল তার বুকে। সে স্বপ্ন ডানা মেলতে মেলতে শেষ হয়ে গেল। এখন আমার কি হবে? কি হবে ছেলে-মেয়ের। ওদের কিভাবে মানুষ করব। </p>