<p>শীতের তীব্রতা একটু বাড়তেই নওগাঁর সাপাহারে ঐতিহ্যবাহী জবই বিলে অতিথি পরিযায়ী পাখিদের আগমন শুরু হওয়ায় পাখির কল কাকলিতে বিল এলাকা বেশ মুখরিত হয়ে উঠেছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও একটু আগেভাগেই এই বিলে অতিথি পাখিদের পদচারণা লক্ষ করা গেছে বলে জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহানসহ অনেকেই জানিয়েছেন</p> <p>ইতিমধ্যে সুদুর সাইবেরিয়া, ইউরোপসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পরিযায়ী পাখির মধ্যে বড় খোপা, ডুবুরি, লেজ্ঞাহাস, পিয়াং হাস, চখাচখি,পাতিসরালী, তিলি হাস, ভুতি হাসসহ প্রায় ৪০ প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে এই বিলে। বিগত কয়েক বছর যাবৎ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে পাখি প্রেমিক, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ রাজশাহীর জাহাঙ্গীর কবির পরিদর্শক, বাংলাদেশ জীববৈচিত্র সংরক্ষক ফেডারেশনের বন সংরক্ষক ও প্রধান উপদেষ্টা মোল্ল্যা রেজাউল করিম, বগুড়া শাহ সুলতান কলেজের হিসাব বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান মোখলেছুর রহমান, বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের ঢাকা বন ভবনের সানাউল্ল্যাহ পাটোয়ারি এই জবই বিল সফর ও ভ্রমণ করেছেন। সেই সাথে তারা জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে প্রতিবছর বিলে একটি করে পাখি জরিপ কার্য সমাধান করেছেন।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="নলডাঙ্গায় অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/20/1734681791-a992f07d19721dbf74df68c1ed4e7c56.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>নলডাঙ্গায় অজ্ঞাত যুবকের মরদেহ উদ্ধার</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/12/20/1459475" target="_blank"> </a></div> </div> <p>তাদের পরিস্যখ্যান অনুযায়ী বিগত ২০২৩ সালে এই বিলে অতিথি পাখিসহ সর্বমোট পাখির সংখ্যা ছিল আবাসিক পরিযায়ী পাতি সরালি প্রায় ২ হাজার ২৩টি, পরিযায়ী লাল ঝুটি ভূতিহাঁস প্রায় ৩ হাজারটি, পরিযায়ী গিরিয়া হাঁস প্রায় ৬০০টি,পরিযায়ী পাতিঁ তিলি হাঁস, ৫০০টি, পরিযায়ী টিকি হাঁস, পিয়াং হাঁস প্রায় ১২টি, পরিযায়ী কলাপাখ ঠেঙ্গি ৬০টি, গেওলা বাটান ২০০টি, চা পাখি ৪০০টি, প্রশান্ত সোন জিরিয়া ২০০টি, পাতি ভূতি হাঁস ১৫০টি সহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১১ হাজার ২৩০টি।</p> <p>অতীতে এই বিলে সুদুর সাইবেরিয়া হতে শীতকালে অতিথি পাখিদের আগমনে পুরো বিলে পর্যাপ্ত কচুরীপানা ও পাখিদের আড্ডায় সারাক্ষণ কিচিরমিচির শব্দে এলাকা মুখরিত হয়ে থাকত। সে সময় রাজধানী ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্নস্থান হতে পাখি শিকারিরা এই বিলে পাখি শিকার করতে আসত। মাঝখানে এলাকার লোকজন পুরো বিলটি কচুরিপানা মুক্ত করে সেখানে ধান চাষাবাদ শুরু ও অধিক হারে পাখি শিকার করায় পাখির আগমন কমতে শুরু করে এবং এক সময় জাল যার জলা তার নীতি অবলম্বন করায় বিল হতে অতিথি পরিযায়ী পাখি আসা একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="কাশিয়ানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় কাপড় ব্যবসায়ীসহ নিহত ২" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2024/12/20/1734681446-d910c0bfa749cd12cea822ced3c1f8b7.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>কাশিয়ানীতে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় কাপড় ব্যবসায়ীসহ নিহত ২</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/12/20/1459471" target="_blank"> </a></div> </div> <p>পরবর্তী সময়ে বিলটি মৎস্য চাষের আওয়তায় এনে মৎস্য প্রকল্পের মাধ্যমে বিলে মাছ চাষ শুরু হলে আবারও বিলে অতিথি পাখিদের দেখা মিলতে শুরু করে। এমন সময় বিলে পাখি শিকার বন্ধ করতে স্থানীয় কতিপয় যুবক জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজকল্যাণ নামে একটি সংগঠন তৈরি করে পাখিদের নিরাপত্তা বিধানে সরকারের সহযোগী হিসেবে ভলেন্টিয়ারের মাধ্যমে পাখি শিকার বন্ধে ঝটিাকা অভিযান শুরু করে যার ফলে একসময় জবই বিল হতে যেকোনো ধরনের পাখি শিকার চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে বিলটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে মাছ ধরার কাজ শুরু হয় এ সময় বিলে অসংখ্য মানুষের উপস্থিতি ও যন্ত্রচালিত নৌকার বিকট শব্দে বিল হতে পাখিগুলো প্রাণভয়ে যত্র তত্র পালিয়ে যায়। এরই জন্য জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সদস্যরা সারা বছর বিলটিতে পাখিদের বসবাসের জন্য বিলটির কোনো একাংশে একটি পাখির অভয়াশ্রম তৈরির জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবর আবেদন করে থাকেন। ফলশ্রুতিতে প্রত্যেক নির্বাহী অফিসারগণ পাখির অভয়াশ্রম তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও কালক্রমে তা ফাইল বন্দি হয়েই পড়ে থাকে যার ফলে বিল হতে একসময় অতিথি পাখিরা বিদায় নিতে শুরু করে।</p> <p>আর দু-চার দিনের মধ্যেই আবারও জবই বিলে মাছ ধরার মহোৎসব শুরু হবে, তার আগেই জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ হতে বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবারও একটি আবেদনপত্র দাখিল করলে তিনি অচিরেই বিলের কোনো এক অংশে পাখির অভয়াশ্রম তৈরির জন্য লাল পতাকা দ্বার চিহ্নিত করা জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ প্রদান করেন কিন্তু মাছ ধরার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি থাকলেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাখির অভয়াশ্রমের জন্য কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি ফলে ঐতিহ্যবাহী এই বিলে অতিথি পাখির আগমনের সাথে সাথে আবারো হয়তো পাখিদের বিদায় শুরু হতে পারে বলে জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির লোকজনসহ সচেতন মহল মানে করেন।</p> <p>সাপাহার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ পাখিদের জন্য নিরাপদ অভয়াশ্রম নির্মাণের জন্য বিলের কোনো এক অংশে লাল পতাকা দ্বারা চিহ্নিতকরণ করার জন্য উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে বিষয়টি তিনিই দেখবেন।’</p> <p>উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসা রোজিনা খাতুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। নির্বাহী অফিসার স্যার আমাকে মৌখিকভাবে লাল পতাকা দিয়ে পাখিদের অভয়াশ্রমের এলাকা চিহ্নিত করার জন্য বলেছেন কিন্তু এর জন্য লিখিত কোনো আদেশ প্রদান করেননি। মাছ ধরার আর মাত্র দু-একদিন বাকি রয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে আমার বদলির আদেশ এসেছে, হয়ত দু-চার দিনের মধ্যে অন্যত্র চলে যাব। পাখির অভয়াশ্রমের জন্য এলাকা চিহ্নিত করতে পারলে আমারও ভালো লাগত। এর পরেও আমি আজ-ই নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে কথা বলব এবং কাজটি করার চেষ্টা করব। তবে নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না কাজটি করতে পারব কিনা।’</p> <p>এলাকার পাখি প্রেমিক ও জবই বিল জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও সমাজ কল্যাণ সংস্থার সদস্যসহ পুরো এলাকাবাসী অচীরেই সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এই জবই বিলের কোন এক অংশে পাখির অভয়াশ্রম তৈরি করে বিলের জীববৈচিত্রকে সংরক্ষণ ও সারা বছর পাখিদের আগমনে পাখপাখালির কলতানে এলাকা মুখরিত হয়ে থাকার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।</p>