<p>মা জোসনা আক্তারের (৫২) দেওয়া একটি কিডনিতে নতুন জীবন পেলেন ছেলে অপূর্ব মিয়া (২৭)। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) মায়ের দেওয়া একটি কিডনি অপূর্বের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। </p> <p>অপূর্ব নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার দলপা ইউনিয়নের বাহাগুন্দ গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। শনিবার বিকেলে ঢাকার মিরপুরের কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয় বলে নিশ্চিত করেন অপূর্বর চাচাতো ভাই জামিল হোসেন কাজল। </p> <p>সবার কাছে মা-ছেলের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে অপূর্বর চাচাতো ভাই বলেন, বর্তমানে অপূর্ব ও তার মা দুজনই ঢাকার কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তিনি জানান, কিডনি প্রতিস্থাপন সফল হয়েছে এবং দুজনই আশঙ্কামুক্ত আছেন। তবে তাদের স্বাভাবিক হতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। তার মায়ের দেওয়া একটি কিডনির কারণেই অপূর্ব নতুন জীবন পেয়েছে। </p> <p>অপূর্ব ও তার মায়ের জন্য অশেষ প্রার্থনা এবং শুভকামনা জানিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান তমাল বলেন, ‘অপূর্ব খুব ভালো একটা ছেলে। গ্রামের ছোট ভাই। অত্যন্ত মিশুক ও বন্ধুবৎসল। এলাকার যেকোনো সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি থাকত। সে কিডনি রোগে আক্রান্ত। এটা জানার পর আমিসহ তার পরিচিত সব শুভাকাঙ্ক্ষী ব্যথিত হই। তার আম্মা তাকে একটি কিডনি দান করে নতুন জীবন দান করেছেন। মা যে মমতাময়ী, তার মতো আর কেউ সন্তানকে ভালোবাসতে পারেন না। এটা অপূর্বর আম্মা আবারও প্রমাণ করলেন।’</p> <p>অপূর্বর পরিবারের বরাতে জানা গেছে, আব্দুল মালেক ও জোসনা আক্তার দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে সবার বড় অপূর্ব মিয়া। এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করা অপূর্ব স্থানীয় বেখৈরহাটি বাজারে পোল্ট্রি মুরগির ব্যবসা করতেন। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করেন তিনি। এর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চরক্তচাপে ভুগছিলেন অপূর্ব। গত চার মাস আগে হঠাৎ করে তার সেই রক্তচাপ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যায়। এ অবস্থায় পরিবারের লোকজন তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেন। </p> <p>কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, অপূর্বর দুটি কিডনিই বিকল হয়ে গেছে। তাই তাকে বাঁচাতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্তত তার একটি কিডনি হলেও প্রতিস্থাপন করতে হবে।</p> <p>এ অবস্থায় চরম হাতাশায় পড়ে যায় অপূর্ব মিয়ার বৃদ্ধ মা জোসনা আক্তার ও বাবা আব্দুল মালেকসহ পরিবারের সদস্যরা। তাদের মাথায় যেন হঠাৎই আকাশ ভেঙে পড়ে। সুস্থ, সবল ও টগবগে যুবক ছেলের এ রকম সমস্যার কথা শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন অপূর্বর মা-বাবা। কিভাবে আদরের সন্তানের জীবন রক্ষা করবেন, কোথায় পাবেন কিডনি, তারা ভেবে পাচ্ছিলেন না। </p> <p>প্রিয় ছেলের জীবন বাঁচাতে কিডনি খুঁজতে শুরু করেন পরিবারের লোকজনসহ স্বজনরা। অপূর্বর চাচাতো ভাই জামিল হোসেন কাজল। তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। তার সঙ্গে কথা বলে অবশেষে অপূর্বকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতাল এবং ঢাকার শ্যামলীর সিকেডি হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকরাও অপূর্বর ডায়ালাইসিস করাতে বলেন এবং দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। পরে পরিবারের লোকজন সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢাকার কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতালে মায়ের কিডনি ছেলের শরীরে প্রতিস্থাপন করেন।</p> <p>মায়ের কিডনি বরাতে ছেলে অপূর্ব নতুন জীবন পেল। এ থেকেই মায়ের সঙ্গে সন্তানের নাড়ির টান কত যে শক্ত, তা আবারও প্রতীয়মান হলো।</p>