<p>ফরিদপুরের ভাঙ্গায় কয়েক দশক ধরে চলে আসছে জন (কৃষাণ) বিক্রির হাট। ভাঙ্গা বিশ্বরোড মোড়ে এই হাটটি শুরু হয় ভোর পাঁচটা থেকে। সকাল ৭টা পর্যন্ত চলে এই হাট। দূর-দূরান্ত থেকে নিম্নআয়ের মানুষ ছুটে আসে এ হাটে। কেউ কেউ আগের দিন রাতে এসে ভাঙ্গার বিভিন্ন অফিস, আদালতের বারান্দায় কিংবা অন্য কোনো স্থানে আশ্রয় নেন। অনেকে আবার বাড়ি থেকে রাত ৩টায় বের হয়ে হাটের উদ্দেশে আসেন। উত্তরবঙ্গের নিম্নআয়ের অনেক লোকও এখানে কাজের জন্য স্থায়ীভাবে থাকে। সবার লক্ষ্য ‘বিক্রি’ হওয়া অর্থাৎ কোনো মালিকপক্ষের সঙ্গে দরাদরি করে কাজ পাওয়া।</p> <p>বর্তমানে চলছে পেঁয়াজ রোপণের কাজ। জমির মালিক ও কৃষাণদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, কৃষাণদের বর্তমানে বাজার দর দুপুর দুইটা পর্যন্ত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। অতিরিক্ত সময়ের জন্য আরো ১০০ থেকে ২০০ টাকা বেশি পাওয়া যায়। কৃষাণের সংখ্যা বেশি হওয়ায় অনেকেই কাজ পান না। যারা কাজ পান, তারা হাসিমুখে মালিকপক্ষের সঙ্গে গন্তব্যে চলে যান। কিন্তু যারা কাজ পান না, তারা বিমর্ষ বদনে মাথায় হাত দিয়ে হাটের কিনারে বসে থাকেন। চোখে মুখে থাকে হতাশা। বাড়ি ফিরে পরিবারের কাছে কী জবাব দেবেন? কিভাবে চলবে তাদের ওইদিনের সংসার? অনেকেরই আবার বাড়ি ফিরে যাওয়ার ভাড়ার টাকা থাকে না।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ চেষ্টা, বিজিবির বাধায় বন্ধ" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/08/1736310269-e06d061a77a7bde916b8a91163029d41.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ চেষ্টা, বিজিবির বাধায় বন্ধ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2025/01/08/1466364" target="_blank"> </a></div> </div> <p>আজ বুধবার (৮ জানুয়ারি) সকালে ভাঙ্গা বিশ্বরোড সংলগ্ন ভাঙ্গা রেল স্টেশনের প্রবেশপথের রাস্তায় গড়ে ওঠা হাটে বেশ কয়েকজন কৃষাণের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা। এমন একজন কৃষক ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার দুলাল মিয়া (৪৫)। তিনি জানান, চার বছর ধরে তিনি এই হাটে কাজের জন্য আসেন। রাত তিনটার দিকে সকালের খাবার প্রস্তুত করে নিয়ে আসেন। কাজ পেলে কাজের স্থানে গিয়ে ওই খাবার খান। দুপুরে মালিকপক্ষ কিছু খাওয়ালে তার খাওয়া জোটে। নইলে রুটি, কলা ও চা দিয়েই চলে তার দুপুরের খাবার। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছয় জন। একার আয়ে চলে তার সংসার‌। কাজ পেলে ঘরে খাবার জোটে। প্রতিদিন অনিশ্চয়তা নিয়ে আসতে হয়।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="চকরিয়ায় ধর্ষণের শিকার মুসলিম তরুণীকে হিন্দু বলে প্রচার" height="66" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/2025/01/08/1736317258-794cdb9c73f8c687c66ee249c67e263a.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>চকরিয়ায় ধর্ষণের শিকার মুসলিম তরুণীকে হিন্দু বলে প্রচার</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2025/01/08/1466390" target="_blank"> </a></div> </div> <p>হাটে আসা কৃষাণ পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা উপজেলার শাওন কাজী (৩৫) জানান, বর্তমানে পেঁয়াজ রোপণের কাজ চলছে। কাজ পেলে সকাল থেকে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। যদিও বর্তমানে এ টাকায় সংসার চালানো কষ্ট। তারপর ও কাজ পেলে কষ্ট থাকে না। এ হাটে বিগত ১০ বছর থেকে আসেন তিনি।</p> <p>ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদী ইউনিয়নের মনসুরাবাদ থেকে এ হাটে এসেছেন বয়োবৃদ্ধ কৃষাণ বাসেদ আকন। তিনি জানান, তার বর্তমান বয়স ৬৬। শরীর দুর্বল হয়ে পড়েছে। কাজ করতে কষ্ট হয়। তবুও তিনি এসেছেন, কারণ তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৯ জন‌। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তার ছেলেকে। মালিকপক্ষ বৃদ্ধকে একা নিতে চান না। সঙ্গে ছেলে থাকে বলে তিনি মাঝে মাঝে কাজ পান। শীত এবং বর্ষা কালে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়াতে অনেক কষ্ট হয়। কখনো বৃষ্টিতে ভিজি, কখনো কনকনে শীতে দাঁড়িয়ে থাকি। </p> <p>তিনি বলেন, ‘ফ্লাইওভারের নিচে আমাদের দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করলে কষ্ট কম হত। এ হাটের পাশে কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। ফলে আমাদের অনেক সময় সমস্যায় পড়তে হয়।’</p> <p>জমির মালিকেরা তাদের ক্ষেতের কাজ করানোর জন্য এ হাটে আসেন কৃষাণ নিতে। ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তারা আসেন। ভাঙ্গার জন হাটে আসা জমির মালিক তুজারপুরের বাসিন্দা আখতার হোসেন জানান, আমরা কখনো একদিনের জন্য আবার কখনো এক সপ্তাহের জন্য কৃষাণ নিয়ে থাকি। বর্তমানে শস্য উৎপাদনের খরচ অনেক বেশি। পক্ষান্তরে কৃষাণেরা ৭০০-৮০০ টাকার নিচে কাজে যেতে চায় না।</p> <p>তিনি আরো জানান, আমাদের অনেক সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ফলে ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। অন্যদিকে, কৃষাণ হাটকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু দোকান। এই হাটের কারণে তাদের জীবিকা অর্জনের ব্যবস্থা  হয়েছে। প্রতিদিন সকালে এখানে ৫০০ থেকে ৭০০ কৃষাণ আসে। তাদের সুখ-দুঃখের সঙ্গী আমরা।</p>