<p style="text-align:justify">সমুদ্র শহর কক্সবাজারের জনপ্রিয় পাহাড়ি ফল ‘আনারকলি’। কক্সবাজারে এই ফলটির নাম আনারকলি হলেও দেশ-বিদেশে এটি ‘প্যাশন ফ্রুটস’ নামে পরিচিত। লবণ, মরিচ ও চিনি মিশিয়ে পরিবেশন করা হয় টক এই ফল। টক-ঝাল-মিষ্টির এক অসাধারণ স্বাদ আনারকলির। যার কারণে কক্সবাজারে আগত পর্যটকদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় সুস্বাদু এই ফলটি। কক্সবাজার সাগর পাড়ে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয়তার কারণে স্থানীয়দের অনেকেরই কাছে এটি ‘পর্যটক ফল’ হিসাবেও পরিচিত।</p> <p style="text-align:justify">কক্সবাজার ও বান্দরবানের পাহাড়ি এবং ভিটেবাড়ির আঙ্গিনায় ফল গাছটির আধিক্য। এককালে আনারকলি নামের এ ফলটির তেমন কোনো কদরই ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সাগর পাড়ে আনারকলি এক বড় চাহিদার ফল হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে। </p> <p style="text-align:justify">বিক্রেতারা জানান, কক্সবাজারের পাহাড়ি জনপদ সহ গ্রামগঞ্জ থেকে পাইকারি কিনে আনা হয়। এখন বলতে গেলে আনারকলির ভরা মৌসুম চলছে। ছোট আকারের একটি আনারকলির পাইকারি মূল্য ১০ থেকে ২০ টাকা ও বড় সাইজের বিক্রি করা হয় ২০/ ২৫ টাকা। <br /> পর্যটকদের কাছে ব্যাপক চাহিদার কারণে কক্সবাজার সাগর পাড়ে আনারকলির দাম যেন আগুন। সেই যা খুচরা বিক্রেতারা শত কিংবা হাজার হিসেবে ক্রয় করে এনে লবণ, মরিচ ও চিনি মিশিয়ে পর্যটক ক্রেতাদের কাছে প্রতিটির দাম উঠে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। </p> <p style="text-align:justify">সৈকতের হকাররা আবার কখনো কখনো বড় আকারের একটি ফল পর্যটকদের কাছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়ও বিক্রি করে। বিক্রেতা হকাররা জানান, চাহিদার কারণে ফলটি গাছের গোড়া থেকে সাগর পাড়ে আসা পর্যন্ত কয়েকবার হাত বদল হওয়ায় দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে।</p> <p style="text-align:justify">সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে বিক্রি করে সংসার চালান ফাতেমা বেগম। তিনি জানান, পর্যটন মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ৩ থেকে ৫ হাজার টাকার ফল বিক্রি হয়। অফসিজনে বিক্রি হয় ১৫০০ থেকে ২৫০০ হাজার টাকা, খরচ বাদ দিয়ে যা আয় হয় তাতে বেশ ভালোভাবেই পরিবারের ভরণপোষণ হয়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify">হকার কুদ্দুস ও তার স্ত্রী সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টের প্রবেশ মুখেই বড় থালাতে করে আনারকলি ফল বিক্রি করেন। স্বামী কুদ্দুস ছুরি দিয়ে  ফলটির মুখ কেটে দেন। আর স্ত্রী তাতে চামচ দিয়ে লবণ-মরিচ মিশিয়ে তুলে দেন পর্যটকের হাতে। কুদ্দুস বলেন, তারা দুইজনেই সৈকতে এই ফল বিক্রি করে ভালোই চলছেন। আনারকলির রোজগারেই কুদ্দুস দম্পতির এক ছেলে কলেজে এবং অন্য দুই ছেলে স্কুলে লেখাপড়া করছে বলেও জানান তিনি।</p> <p style="text-align:justify">নরসিংদী থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক হৃদয় হাসান বলেন ‘ আগে কক্সবাজারে বেড়াতে এসে একবার এই ফল খেয়েছি। এই ফলের স্বাদ চমৎকার হওয়ায় এবার আবারো খাচ্ছি।’ </p> <p style="text-align:justify">গত শুক্রুবার রাজবাড়ী থেকে আসা ৪ বন্ধু সুগন্ধা পয়েন্টে আনারকলি ফল খাচ্ছিলেন। খাওয়ার ফাঁকে তারা জানালেন-‘এই ফল আগে কখনো খাওয়া হয়নি। কক্সবাজারে এসে খাওয়া হলো। প্রথমে দ্বিধা থাকলেও একটি খাওয়ার পর অতুলনীয় স্বাদে তাই বাড়ির অন্য সদস্যের জন্য আরো কয়েকটি লুফে নিলাম।’</p> <p style="text-align:justify">চিকিৎসকদের মতে, আনারকলি বা প্যাশন ফ্রুট স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। কক্সবাজার ডায়াবেটিক হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোহাম্মদ মুসা কালের কণ্ঠকে জানান, আনার কলি ফল বা ট্যাং ফল একটি সুস্বাদু বিদেশি ফল যা কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ফেরিওয়ালাদের বিক্রি করতে দেখা যায়। বাইরের দেশে ফলটির সবচেয়ে পরিচিত নাম ‘প্যাশন’। তবে অঞ্চলভেদে এর ভিন্ন নামও আছে। যেমন দক্ষিণ আফ্রিকায় পরিচিত ‘পারপেল গ্রানাডিলা’ নামে। ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্যাসিফ্লোরা ইডিউলাস’। মিষ্টি স্বাদ ও উপকারিতার কারণে অনেক দেশেই ফলটি বেশ জনপ্রিয়। গাছে বছরে দুবার ফল ধরে। পূর্ণাঙ্গ ফল গোলাকার বা ডিম্বাকার। কাঁচা অবস্থায় এটি সবুজ হয়। তবে পরিণত অবস্থায় হলুদ বা গাঢ় বেগুনি রং ধারণ করে।</p> <p style="text-align:justify">তিনি বলেন, ফলটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসম্পন্ন। এতে প্রচুর পরিমাণ প্রো-ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন সি ও আয়রন রয়েছে। এ ফলের জুস পটাশিয়ামের একটি বড় উৎস। ১০০ গ্রাম ফল খেলে ৯৭ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে ক্যালসিয়াম রয়েছে ১২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেশিয়াম ২৯ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২৮ মিলিগ্রাম ও জিংক ০.১ মিলিগ্রাম। </p> <p style="text-align:justify">এ ফলটি উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। হাঁপানি ও ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যও এই ফল বিশেষ উপকারী। ফলটি মিষ্টি স্বাদের হলেও বাংলাদেশের মাটিতে যে ফল জন্মেছে, তা কিছুটা টক।</p>