<p style="text-align:justify">আওয়ামী লীগ নেতা ও গাজীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলা ফের তদন্তের দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ মামলায় কারাবন্দি বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিও জানানো হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">শনিবার (১১ জানুয়ারি) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত টঙ্গীর কলেজ গেট এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">স্থানীয়রা জানায়, আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় কারাবন্দি যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা নূরুল ইসলাম সরকারের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। নূরুল ইসলাম সরকার মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনটি রূপ নেয় বিশাল সমাবেশে। এক পর্যায়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মহাসড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।</p> <p style="text-align:justify">সমাবেশে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, ‘এই মামলায় নূরুল ইসলাম সরকারকে সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে আহসানউল্লাহ মাস্টার খুন হন। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে।’</p> <p style="text-align:justify">নূরুল ইসলাম সরকার মুক্তি সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজির আহমেদের সভাপতিত্বে ও প্রভাষক বশির উদ্দিন ও আব্দুর রহিম খান কালার সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি সালাহ উদ্দিন সরকার, আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় দীর্ঘ ১৩ বছর কারাভোগের পর সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে খালাস পাওয়া বিএনপি নেতা রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আইয়ুব আলী, নূরুল ইসলাম সরকারের ছেলে সরকার শাহনুর ইসলাম রনি।</p> <p style="text-align:justify">অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন কায়সার, মহানগর বিএনপি নেতা বশির আহমেদ বাচ্চু, হুমায়ুন কবির রাজু, রাশেদুল ইসলাম কিরণ, ইসমাইল শিকদার বসু, শেখ মো. আলেক, নূর মোহাম্মদ, গাজীপুর মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক সাজেদুল ইসলাম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন শাহীন, সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন ভাট, যুবদল নেতা সৌমিক সরকার প্রমুখ।</p> <p style="text-align:justify">এ ছাড়া টঙ্গী ও গাজীপুর মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ কর্মসূচিতে টঙ্গীর সাধারণ মানুষও অংশ নেন।</p> <p style="text-align:justify">২০০৪ সালের ৭ মে টঙ্গী নোয়াগাঁও স্কুল মাঠে স্বোচ্ছাসেবক লীগের এক সম্মেলনে কমিটি ঘোষণার পরপরই গুলিতে নিহত হন আহসান উল্লাহ মাস্টার। এ ঘটনায় আহসান উল্লাহ মাস্টারের ছোট ভাই মতিউর রহমান মতি বাদী হয়ে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ১০-১২ জনকে আসামি করে সাবেক টঙ্গী থানায় একটি মামলা করেন।</p> <p style="text-align:justify">মামলায় আওয়ামী লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের আসামি করা হলেও তৎকালীন যুবদলের কেন্দ্রীয় শ্রম ও শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সরকারসহ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের ৫ জনকে আসামি করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">তদন্ত শেষে ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল বিচারিক আদালত নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুইজনকে খালাস দেন।</p> <p style="text-align:justify">পরে বিচারিক আদালতের রায়ের বিষয়ে হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স আসে। পাশাপাশি আসামিদের পক্ষ থেকে জেল আপিল করা হয়। বাদীপক্ষের কালক্ষেপণ ও বারবার অনাস্থায় মোট ৮টি বেঞ্চ পরিবর্তনের পর ২০১৬ সালের ১৫ জুন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ছয়জনের ফাঁসি বহাল রাখা হয় এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত একজন ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জনসহ মোট ১১ জনকে খালাস এবং সাতজনের ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় নূরুল ইসলাম সরকারকে হুকুমের আসামি করা হলে তিনি উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন জানান।</p> <p style="text-align:justify">উচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন শেষে তিনি নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে স্থায়ী জামিনের আবেদন করেন। পরে আদালত তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠান। প্রায় ২০ বছর যাবৎ তিনি এ মামলায় কারাগারে আটক আছেন।</p>