<p style="text-align:justify">শীতের মৌসুমে হবিগঞ্জে পাখি শিকারিরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাওর এলাকায় চলছে অবাধে অতিথি পাখি শিকার। পরে পাখিগুলো ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ বিভিন্ন লোকালয়ে বিক্রি করছে শিকারিরা। এছাড়াও পাখি শিকারের পর মোবাইলে ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিক্রি করা হয় এসব পাখি।</p> <p style="text-align:justify">জেলার ঘুঙ্গিয়াজুরি, মকা, বড় হাওর ও হাইল হাওরে অবাধে অতিথি পাখি শিকার করা হচ্ছে। শিকারিরা রাতের আঁধারে ফাঁদ পেতে পাখি ধরে প্রকাশ্যে বাজারে বিক্রি করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। জেলার নবীগঞ্জ শহর, ইনাতগঞ্জ বাজার, আউশকান্দি, বালিদ্বারা ও ইমামবাড়ি বাজারে প্রকাশ্যে পাখি বিক্রয় করতে দেখা যায়।</p> <p style="text-align:justify">নবীগঞ্জ শহরের পাখি বিক্রেতা আব্দুর রউফের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনিসহ আরও কয়েকজন লোক বালিহাঁস, বক, ঘুঘু, পানকৌড়ি ও শামুকখোল বিক্রি করে থাকেন। একজন শিকারি দিনে ২০ থেকে ২৫ জোড়া পাখি বিক্রি করেন। প্রতিজোড়া বাঁলিহাস ৮০০ টাকা, বক ৩০০ টাকা, ঘুঘু ৩০০ টাকা, পানকৌড়ি ৫০০ টাকা এবং শামুক খোল ২০০০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।</p> <p style="text-align:justify">গুঙ্গিয়াজুরী হাওরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুয়াশায় ভিজে থাকা ধান গাছের মাঝ দিয়ে অনেক পাখি বিচরণ করছে। হাওরে লতাপাতা দিয়ে তৈরি দুটি ঘরদিয়ে শিকারিরা বক শিকার করছে। ঘরের ভেতর থেকে শিকারি তার পোষ মানানো একটি বককে উড়াতে থাকে। তখন হাওরের মাঝে থাকা বক উড়ে এসে তার পাশে বসলেই ঘরের ভেতর থাকা শিকারি তা ধরে পিঞ্জিরার মাঝে আটকে রাখে।</p> <p style="text-align:justify">হাওর ও পাহাড়বেষ্টিত জেলা হবিগঞ্জ। এখানে বিশাল হাওরের ভেতর বিল ও নদীনালা। এসব জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয় নানা প্রজাতির মাছ। পাহাড়ে রয়েছে নানা ধরনের ফলের গাছ। দিনে হাওরের মাছ খেয়ে, রাতে পাহাড়ি গাছে আশ্রয় নেয় পাখিরা। এ সময় পাখি নিধনে নেমে পড়ে শিকারিরা। </p> <p style="text-align:justify">শিকারিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানায়, পাখি শিকার করে আকর্ষণীয় মূল্যে সেগুলো বিক্রি করে তারা। শীতকালে জেলার বিভিন্ন লেক ও বিলে অতিথি পাখি আসে। শিকারিরা তাদেরও ছাড় দেয় না। বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ, বিষটোপ, নেশাজাতীয় ট্যাবলেট ব্যবহার করে পাখি শিকার করে শিকারিরা।</p> <p style="text-align:justify">তারা পাখি শিকারে এয়ারগান ব্যবহারেও কুণ্ঠিত হয় না। সাদা বক, হলদে কুটুম, খয়েরি ঘুঘু, বাঁশঘুঘু, ফোড়েল ঘুঘু, কুলি, ঝুটকুলি, মাছরাঙা, আমতোতাসহ দেশি প্রজাতির সব ধরনের পাখিই এখন শিকারিদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পাখি শিকার করলে কোনো ঝামেলায় পড়তে হয় না। দিনে শিকার করলে লোকজনকে ভাগ দিতে হয়, জানান তারা। </p> <p style="text-align:justify">পাখি শিকারিরা পাখি বিক্রির নতুন কৌশল বেছে নিয়েছেন। এখন তারা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে শিকার করে মহাসড়কে দাঁড়িয়ে পাখি বিক্রি করছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নির্জন এলাকায় গাছের আড়ালে বসে থাকেন পাখি বিক্রেতারা। বাস, মাইক্রোবাস, কার ও জিপ গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাইভেট গাড়ি আসলেই সামনে হাত বাড়িয়ে একঝাঁক পাখি ধরে রাখেন তারা। চোখের সামনে পাখি দেখে লোভ সামলাতে না পেরে গাড়ি থেকে নেমে পড়েন লোকজন। মিনিটের মধ্যেই চট করে কেনা-বেচা শেষে দুপক্ষ চলে যাচ্ছেন দুদিকে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতেই এই কৌশল অবলম্বন করছেন তারা।</p> <p style="text-align:justify">ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নবীগঞ্জের বালিধারা বাজার এলাকায় পাখি বিক্রি করতে আশা বাচ্চু মিয়া বলেন, আগে তারা পাখি শিকারের পর বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। কিন্তু বর্তমানে বাজারে পাখি বিক্রি তাদের জন্য একটু ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ, খবর পেলেই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শাস্তি দেওয়া হয়। মহাসড়কে পাখি বিক্রিতে লাভ বেশি। বিশেষ করে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে পর্যটকরা বেশি দামে তাদের কাছ থেকে পাখি কিনেন। অনেকে আবার শখের বসে দুই থেকে ৫০০ টাকা বকসিসও দিয়ে যান।</p> <p style="text-align:justify">তিনি জানান, বর্তমানে বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির পাখি শিকার করে বিক্রি করছেন। তবে শীতকাল আসলে বিদেশি পাখিও পাওয়া যায়। তখন তাদের আয়-রোজগার বেড়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify">এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, জেলার অনেক জায়গায় অবাধে দেশি এবং অতিথি পাখি শিকার ও বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু শিকারিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে দেশের প্রাণপ্রকৃতি ধ্বংস হবে।</p> <p style="text-align:justify">সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভিসি ও বাপার আজীবন সদস্য ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলা ভূমি হবিগঞ্জে রয়েছে পাখির অভয়ারণ্য। কিন্তু শিকারিদের আক্রমণে এখন পাখির অবস্থা বিপন্ন। পরিবেশের স্বার্থে পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে। শুধু শিকারিদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। এই পাখির ক্রেতারাও সমান অপরাধী।</p> <p style="text-align:justify">জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ফরিদুর রহমান জানান, পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করা হবে।<br />  </p>