বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলের জনগণকে দ্রুততম সময়ে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা ও দ্রুত ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে ব্রহ্মপুত্র-জামালপুর ১ নামে মাল্টিপারপাস এক্সেসিবল রেসকিউ বোটটি এখন অবহেলায় অযত্নে নষ্ট হচ্ছে। শুকনো মৌসুমে নদের পাড়ে কংক্রিটের উপরে পড়ে থাকে, আবার বর্ষা মৌসুমে অযত্নে পানিতে ভেসে থেকে নষ্ট হচ্ছে বোটটি। এরইমধ্যে অনেকটাই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। দায়িত্বহীনতার কারণে নষ্ট হচ্ছে সরকারের অর্ধকোটি টাকার সম্পদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, 'দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বন্যা কবলিত ও উপকূলীয় জেলাগুলোর জন্য ৬০টি মাল্টিপারপাস এক্সেসিবল রেসকিউ বোট তৈরি করে। ২০২১ সালে ৮ টি বোট বিভিন্ন জেলায় হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তী বছর ২০২২ সালে আরো ৫২টি বোট বিভিন্ন জেলায় হস্তান্তর করা হয়। সে সময় জামালপুরে বোট হস্তান্তর করে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
রেসকিউ বোটের দৈর্ঘ্য ৫৪ ফুট ও প্রস্থ ১২.৫০ ফুট এবং ঘন্টায় ৭ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম। রেসকিউ বোটে ৮০ জন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন যার মাধ্যমে বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত অঞ্চলের জনগণকে দ্রুততম সময়ে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে পারে। জামালপুর জিলা স্কুলের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ে মাল্টিপারপাস এক্সেসিবল রেসকিউ বোটটি অবহেলায় অযত্নে নষ্ট হচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বোটটির বিশাল ছাউনি থাকলেও ছাউনির এখন কোনো অস্তিত্বই নেই।
ইঞ্জিনসহ মূল বডির ভেতরে পানি জমে রয়েছে। দীর্ঘদিন পানি থাকার কারণে বোটের বিভিন্ন অংশে জং ধরেছে।
স্থানীয়রা বলছেন, 'বোটটি কয়েক বছর ধরে এভাবে পড়ে রয়েছে। নদের পানি বাড়লে করে তখন পানিতে ভেসে থাকে। কখন বোটটি ব্যবহার হয়েছে বলে তাও বলা যাচ্ছে না কারণ সব সময় এই জায়গায় পড়ে থাকে।
বর্তমানে প্রায় সবকিছুই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ইঞ্জিনের ভেতরে পানি জমা রয়েছে।'
স্থানীয় সুজন মিয়া নামে একজন বলেন, 'তিন-চার বছরের মধ্যেই বোটটি প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। যদি একটু ব্যবহার বা যত্নে রাখা হতো তাহলে এত টাকার বোটটি নষ্ট হয়তো না।'
সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, 'জামালপুর জেলা বন্যা কবলিত। প্রতি বছরের ছোট বড় বন্যা হয়ে থাকে। সবচেয়ে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে এ জেলার মানুষ। প্রতিবছর বন্যায় মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে। রেসকিউ বোট খুবই প্রয়োজন তবে এমন একটি বোট পেয়েও অবহেলায় অযত্নে নষ্ট হয়ে যাওয়া কখনোই কাম্য না।'
জামালপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, 'বোটটির অবস্থা এখন ভালো না, মেরামতের অভাবে ও পানি না থাকার কারণে এ অবস্থা। কর্মকর্তার অবহেলায় বোটটি নষ্ট হচ্ছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরো বলেন, 'অবহেলা বলার সুযোগ নেই, আমাদের নজরেই রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে এই অবস্থায় রয়েছে। বরাদ্দ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
জামালপুরের জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, 'এ বিষয়ের জানা নেই আমার। ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার থেকে শুনে এ বিষয়ে বলতে পারব।'