সরকার ঘোষিত পাঁচটি গ্রেডে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে কর্মবিরতি এবং বিক্ষোভ করেছেন সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে কর্মরত বিভিন্ন ট্যানারির শ্রমিকরা। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের ব্যানারে সাভারের হরিণধরা এলাকায় অবস্থিত বিসিক চামড়া শিল্প নগরীর প্রধান সড়কে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টাব্যাপী আন্দোলনকারী শ্রমিকরা জানান, 'দীর্ঘ ১৩ মাস ধরে আমরা অপেক্ষা করছি, এখন আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছি।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।'
বাধ্য হয়ে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলেন, অন্যান্য সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পরপরই তা বাস্তবায়ন হলেও ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত ন্যূনতম মজুরি এখনও বাস্তবায়ন করেননি মালিকরা। বিভিন্ন টাল বাহানায় মালিকপক্ষ শুধু কালক্ষেপণই করছে।
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সদস্য ও শিল্পনগরীর এপেক্স ট্যানারিতে কর্মরত নারী শ্রমিক নিলুফা আক্তার বলেন, 'সরকার আমাদের জন্য মোট পাঁচটি গ্রেডে মজুরি বোর্ডের মাধ্যমে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে।
যেখানে সর্বনিম্ন মজুরি ১৮ হাজার এক টাকা এবং সব পক্ষের সম্মতিতেই এ নতুন মজুরি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মালিকরা এখন এসে বলে এ মজুরি তাদের জন্য বেশি হয়ে গেছে।'
ফারুক হোসেন নামের আরেক শ্রমিক বলেন, 'গত বছরের ২১ নভেম্বর সরকার আমাদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে। কিন্তু এখনও সেই মজুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি।
আমাদের পেটে ক্ষুধা, দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আগের বেতনে আর সংসার চলে না। সেইজন্য ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের দাবিতে আমাদের আন্দোলন শুরু হয়েছে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এটি চলবে।'
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, ‘গত নভেম্বরে ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করার পর থেকে বিভিন্ন সময় মালিকপক্ষের সঙ্গে বহুবার আলোচনা করেছি। কিন্তু কোনোভাবেই মালিকপক্ষ সরকার ঘোষিত নতুন মজুরি বাস্তবায়ন করেনি।
ফলে শ্রমিকরা এখন কর্মবিরতিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে, আন্দোলন করছে। আজকের কর্মসূচি চলমান আন্দোলনেরই অংশ।'
ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরির যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এটি এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে। এখন কোনটি মানা হবে, কোনটি মানা হবে না এমন আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। মালিকপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব না দেওয়ায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করছেন। এরপরও মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করলে ওভারটাইম না করার যে সিদ্ধান্ত আছে, সেটি কার্যকর করা হবে।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক মো. সাখাওয়াত উল্লা বলেন, মজুরি সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা চলছে। রবিবার লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) উপদেষ্টা অসুস্থ থাকায় সবার সম্মতিতে পরবর্তী একটি তারিখ নির্ধারণ করে আলোচনা করে বিষয়টির সমাধান করা হবে।
গত বছরের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী ট্যানারি শিল্পের শ্রমিক ও কর্মচারীদের জন্য ন্যূনতম মজুরিসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ট্যানারি শিল্পের নতুন মজুরি কাঠামোতে সর্বোচ্চ বা প্রথম গ্রেডে আছেন স্কিন সিলেক্টর বা হ্যান্ড মেজারার, বৈদ্যুতিক ও মেশিন মেরামত মিস্ত্রি, হ্যান্ড ফ্রেশার ম্যান ও বয়লার অপারেটরসহ ১৩ ধরনের শ্রমিক।
প্রথম গ্রেডের শ্রমিকের জন্য ন্যূনতম মজুরি ধরা হয়েছে হয়েছে ৩৪ হাজার ১৬৮ টাকা, দ্বিতীয় গ্রেডে ২৮ হাজার ৩৮৮ টাকা, তৃতীয় গ্রেডে ২৪ হাজার দুই টাকা এবং চতুর্থ গ্রেডে ২০ হাজার ৯৯৩ টাকা। এই চার গ্রেডের বাইরে অদক্ষ সাধারণ ও অন্য শ্রমিকদের পঞ্চম গ্রেডে ১৮ হাজার এক টাকা নির্ধারণ করা হয়।