তাহলে আমরা কেনো এটাকে বিপ্লব বলবো না? সুতরাং আমরা এটাকে অবশ্যই বিপ্লব বলব। প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে ৩৬ জুলাই, সামনে কিন্তু আরো বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখা এবং এই বিপ্লবকে সংহত করা। এর সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।’
বাংলাদেশকে সম্মান করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে কুলাউড়ায় সীমান্তে একটি প্রাণ ঝড়েছে। আমরা সীমান্তে কোনো রক্তপাত চাই না, পরিষ্কার কথা। আমরা কাঁটাতারে কোনো ফেলানীর লাশ দেখতে চাই না। ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে, তাদের অনেক সৈন্য প্রাণ দিয়েছে সেজন্য তাদের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ, তাই বলে আমাদের মাথা বিক্রি করে দিতে পারি না। আমরা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে বিশ্বাস করি না।’
তিনি বলেন, ‘রক্তপাতের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আমাদের বন্ধুত্ব হবে সমতা, সমঝোতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধাশীলতার ভিত্তিতে। ভারতে থেকে উসকানি দিচ্ছেন শেখ হাসিনা । একটার পর একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপনারা অভিনব সব ষড়যন্ত্র দেখেছেন। জুডিশিয়াল কু, পুলিশ বিদ্রোহ, আনসার বিদ্রোহ, আমলাতান্ত্রিক বিদ্রোহ দেখেছে সবাই। এ সব রোধ করতে ছাত্ররা রাস্তা মাঠে নেমে যাচ্ছেন।’
অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তরিকতা, দেশপ্রেম ও সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, কিন্তু তাদের মধ্যে বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার অভাব আছে বলে মন্তব্য করে কবি বলেন, ‘পাঁচ মাসের বেশি সময়েও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি তারা। এখন নিত্যপণ্যের জন্য সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। ছাত্র-জনতার যে আকাঙ্ক্ষা, সংস্কারে যে প্রত্যাশা সেই ভাষা পাঠ করে সংস্কার করতে হবে।’
তারেক রহমানের নেতৃত্বে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাব বাস্তবে দেখতে চেয়ে হাসান হাফিজ বলেন, ‘কোনো চাঁদাবাজির হাত বদল দেখতে চাই না। তাহলে আমাদের মুক্তি হাত ছাড়া হয়ে যাবে, বিপ্লব ব্যাহত হয়ে যাবে।’
‘সাঁঝবেলা’ উপন্যাস নিয়ে কবি হাসান হাফিজ বলেন, ‘বইটি আমি পড়েছি। এটার মধ্যে আন্তর্জাতিকতা আছে। এটার মধ্যে করোনাকালীন সময়ের অনিশ্চয়তা আছে, কষ্ট ও মানুষের নিঃসঙ্গতা আছে। এই বইটি থেকে ভালো নাটক কিংবা ছবি হতে পারে।’
রুদ্রবীণা সংগীত বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে ও কবি ইব্রাহিম খলিল ও শহীদুল ইসলাম তনয়ের যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ও বরিশাল-১ আসনের সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে হবে বলে জানিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘রাজনীতি সমাজে অক্সিজেনের মতো কাজ করে। যে সবচেয়ে বেশি রাজনীতিকে ঘৃণা করে সেও রাজনীতির মধ্যে বাস করে। সেটিরই প্রমাণ ৫ আগস্ট। যারা বলেছে, আমরা কোটা চাই কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোটার দাবি আর কোটাতে থাকেনি। এটা এতটাই রাজনৈতিক দাবিতে পরিণত হয়েছে যে সরকার প্রধানকে দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়ে নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরের সাধারণ মানুষ রক্ত, জীবন দান, আবু সাঈদের দুই হাত তুলে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। এই যে কোটি কোটি নির্দলীয় মানুষের প্রতি রাজনৈতিক মনষ্কতা তৈরি করে, এটাই হচ্ছে রাজনৈতিক সাহিত্যের কাজ। শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন ছাত্রদলের নেতা এবং একজন রাজনৈতিক কর্মী হয়ে সাহিত্য নিয়ে যে চর্চা করছেন সেটি একটি উদাহরণ।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সাঁঝবেলা উপন্যাসের লেখক শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী, কুলাউড়ার সাবেক এমপি নওয়াব আলী আব্বাছ খান, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন, রাজনীতিবিদ তৈমুল হোসেন খান বিপুল, সিলেট এমসি কলেজের অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন বাবলু, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ড. আব্দুর রকিব ও আয়েশা আক্তার।
আরো বক্তব্য দেন রাজনীতিবিদ রেদোয়ান খান, বদরুজ্জামান সজল, মইনুল ইসলাম শামীম, সুফিয়ান আহমেদ, সাংবাদিক এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, স্বপন কুমার দেব রতন, প্রভাষক সিপার আহমদ, লেখক অপূর্ব শর্মা, ওয়াহিদ মুরাদ, কবি মোস্তফা মহসিন, সংগঠক শফিক মিয়া আফিয়ান, ব্যবসায়ী শেলুর রহমান, সংস্কৃতিকর্মী নির্মাল্য মিত্র সুমন, কদরুল হক মারুফ, বিপুল চক্রবর্তী, লেখক ও কবি মোস্তফা মহসীন, কামরুল হাসান, নুরুল ইসলাম ইমন, সিরাজুল আলম জুবেল, আব্দুল খালিক, লেখকের বোন তাহেরা চৌধুরী বীনা, সাংবাদিক মোক্তাদির হোসেন ও নাজমুল বারী সোহেল প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিরা রাজনীতিবিদ শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপনের নতুন উপন্যাস ‘সাঁঝবেলা’-এর প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন।
সাঁঝবেলা গ্রন্থটিতে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের পটভূমিসহ সামাজিক রাজনৈতিক বিষয়সমূহ স্থান পেয়েছে। পাশাপাশি বইটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উৎসর্গ করা হয়েছে।