ঘরের আড়ার সঙ্গে গাছ ঝুলিয়ে টমেটো সংরক্ষণ করছেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের কৃষক নুরু মিয়া। মৌসুম শেষে বেশি দামে বিক্রির আশায় এভাবে টমেটো সংরক্ষণ করেন তিনি।
বুধবার (১৯ মার্চ) সকালে মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়নের শিমুলাটিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, নুরুর বাড়ির সামনে ১০ শতাংশ ফসলি জমি রয়েছে। ওই জমিতে বিভিন্ন শাকসবজি চাষাবাদ করে তিনি।
যা আয় হয় তা দিয়ে বৃদ্ধ মা-বাবা ও স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলেন নুরু।
নুরু মিয়া জানান, প্রতিবছরের মতো তিনি নিজের জমিতে বিউটিফুল-২ জাতের টমেটো চাষ করেন। ফলন পেয়েছেন ভালো। তবে দাম খুবই কম ছিল।
সর্বোচ্চ ১০ টাকা কেজি দরে পাইকারদের কাছে প্রায় শত মণ টমেটো বিক্রি করেছেন তিনি। বাকি প্রায় ৪০ মন রেখেছেন।
তিনি আরো জানান, কাঁচা-পাকা টমেটো নিজের কৌশলে কোনো রকম বিষ বা রাসায়নিক ছাড়াই সংরক্ষণ করছেন নুরু। এতে মৌসুমে যা লাভ হয়েছে তার কয়েক গুণ বেশি লাভ করবেন তিনি।
তিনি জানান, জানুয়ারি থেকে ক্ষেত থেকেই পাকা টমেটো বিক্রি করেন তিনি। এখন ক্ষেত থেকে উঠিয়ে টমেটো গাছ ঘরের আড়ার বা অন্য জায়গায় লটকিয়ে রেখে সংরক্ষণ করছেন তিনি। এভাবে কমপক্ষে ছয়মাস থাকবে। তখন ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা যাবে।
এভাবে টমেটো সংরক্ষণের গোপন কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে নুরু হেসে বলেন, ‘আমি মূর্খ মানুষ।
প্রায় ৮ বছর ধরে এভাবেই সংরক্ষণ করছি। কোনো রকম পদ্ধতি ছাড়াই। আমার টমেটো সম্পূর্ণ বিষমুক্ত এবং মজাদার।’
জানা গেছে, নান্দাইলে এ বছর প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের টমেটো আবাদ করা হয়েছে। ফলন হয়েছে এক হাজার ৪২৫ মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে ফলন পাওয়া গেছে সাড়ে ২৮ মেট্রিক টন। এ বছর ব্যাপক ফলন হওয়ায় ক্রেতারা লাভবান হলেও বিক্রেতা আছেন বেকায়দায়। উৎপাদিত ব্যয় মিটিয়ে খুব একটা লাভ করতে পারেননি তারা।
এলাকায় টমেটোর সংরক্ষণাগার বা হিমাগার না থাকায় সুবিধা মতো সময়ে টমেটো বিক্রি করা যায় না। প্রতি বছর উৎপাদিত টমেটোর বড় অংশ পচে নষ্ট হয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন চাষিরা।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাঈমা সুলতানা জানান, এভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা সত্যিই প্রশংসনীয়। উপজেলাগুলোতে হিমাগার না থাকায় কৃষকরা উৎপাদিত টমেটো সংরক্ষণ করতে পারেন না। এতে ক্ষতির মুখে পড়ে টমেটো চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন তারা।
নুরু মিয়াকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, নুরু মিয়ার এই পদ্ধতিতে অন্যরাও টমেটো সংরক্ষণ করতে পারে।