কিশোরগঞ্জের শিয়ালের কামড়ে মো. আরাফ নামে ১৯ মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। নিহত আরাফ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নের তের হাসিয়া গ্রামের মো. লিংকনের ছেলে।
জানা যায়, বুধবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের সাথে ইফতার করে আরাফ। ইফতার শেষে পরিবারের সদস্য অন্য কাজে ব্যস্ত হলে এক ফাঁকে ঘর থেকে উঠানে চলে আসে।
এ সময় উঠান থেকে একটি শিয়াল আরাফকে গলায় কামড় দিয়ে নিয়ে যায়। ঘন্টাখানেক পর বাড়ির পাশে জঙ্গল থেকে আরাফের মরদেহ উদ্ধার করে।
আরো পড়ুন
আলু-পেঁয়াজ একসঙ্গে রাখলে কী ক্ষতি
আরাফের দাদা লালু মিয়া বলেন, ইফতার শেষে ঘর থেকে বের হয়ে উঠানে খেলাধুলা করছিল আরাফ। হঠাৎ করে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না।
বাড়ির আশপাশে সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজির পর এলাকার মসজিদে মাইকিং করা হয়। এ সময় একজন লোক খাইরুল ইসলামের জঙ্গলে বাচ্চাসহ একটি শিয়ালকে দেখতে পেয়ে সামনে যেতেই শিয়াল চলে যায়। পরে তার ডাক চিৎকারে আমরা সকলেই গিয়ে দেখি আরাফের গলায় কামড়ের দাগ। বুকের মধ্যে পায়ের নকের দাগ। তাড়াতাড়ি করে গ্রামের একটি ফার্মেসিতে নিয়ে গেলে আরাফকে মৃত ঘোষণা করেন।
আরাফের বাবা লিংকন বলেন, সন্ধ্যায় আমি স্ত্রী সন্তানকে নিয়ে বাসায় ইফতার করি। ইফতার শেষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বাড়ির লোকজন আরাফকে খুঁজতে আমার দোকানে যায়। দোকান থেকে এসে আমার ছেলের মরদেহ দেখতে পাই।
শিশুর বাড়ির স্বজনরা জানিয়েছে, সবাই যখন শিশুর খোঁজে ঝোপের ভেতর ঢুকে তখন শিয়ালটিকে পালিয়ে যেতে দেখে তারা।কয়েকদিন ধরে সন্ধ্যার পর বিভিন্ন বাসাবাড়ির পাশে ও রাস্তায় শিয়ালের আনাগোনা বেড়ে গেছে। বিষয়টিকে তারা স্বাভাবিক বলেই মনে করেছিলেন।এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শিয়াল আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ছোট শিশুদের নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে অভিভাবকরা।
কিশোরগঞ্জ বন সংরক্ষণ কার্যালয়ের সহকারী বন সংরক্ষক এএফজি মোস্তফা বলেন, জীববৈচিত্র ও পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বনজঙ্গল ধ্বংসের কারণে বন্য প্রাণীদের খাবার ও আবসস্থল প্রায় নেই বললেই চলে। এ কারণে শিয়াল, মেছোবাঘ, সাপসহ বিভিন্ন প্রাণী লোকালয়ে চলে আসছে। মানুষও এগুলোকে গণহারে হত্যা করছে। বন্যপ্রাণীগুলো খাবার পাচ্ছে না। ফলে এগুলোর আচরণও স্বাভাবিক থাকছে না। প্রকৃতপক্ষে বেশিরভাগ বন্যপ্রাণী ভিতু স্বভাবের। এখন এরাই লোকালয়ে ঢুকে মানুষকে কামড়াচ্ছে, পোষাপ্রাণী বিশেষ করে মোরগ-মুরগি, ছাগল, গরুর বাছুর ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ঘরের খাবার পর্যন্ত চুরি করছে তারা। বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ বাসস্থান নিরাপদ করা গেলে প্রাণীদের অস্বাভাবিক আচরণ কমে যাবে।