গাজীপুরে ইসরায়েলবিরোধী মিছিল থেকে হামলা-ভাঙচুর, গ্রেপ্তার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর
শেয়ার
গাজীপুরে ইসরায়েলবিরোধী মিছিল থেকে হামলা-ভাঙচুর, গ্রেপ্তার ৩
সংগৃহীত ছবি

ইসরায়েলি আগ্রাসানবিরোধী মিছিল থেকে বিভিন্ন কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে কোনাবাড়ী থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন নেত্রকোনা জেলার মদন থানার তেঁতুলিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে মো. হানিফ (১৯), সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা থানার বিষ্ণুপুর গ্রামের বিনদ দাসের ছেলে মনজিৎ দাস (২৫) এবং ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানার বাড়ইতলা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে মো. জাহিদ হাসান (২০)।

তারা সবাই গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী থানার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন। দেশকে অস্থিতিশীল ও বহির্বিশ্বে দেশকে হেয় প্রতিপ্রন্ন করতে এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

 

আরো পড়ুন
স্লোগান দিয়ে নববর্ষের মঞ্চ ভাঙচুর

স্লোগান দিয়ে নববর্ষের মঞ্চ ভাঙচুর

 

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) মো. রবিউল ইসলাম জানান, শনিবার রাতে কোনাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

রবিবার তাদের মহানগর আদালতে পাঠানো হলে বিচারক জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী মিছিল থেকে কোনাবাড়ী এলাকার কয়েকটি পোশাক কারখানা ও বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতকারীরা।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

চাটমোহরে সড়কের পাশে পড়ে ছিল শিশুর মরদেহ

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
শেয়ার
চাটমোহরে সড়কের পাশে পড়ে ছিল শিশুর মরদেহ
সংগৃহীত ছবি

পাবনার চাটমোহরে সড়কের পাশ থেকে মাথা থেঁতলানো অবস্থায় সালমান হোসেন (৮) নামের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

আজ রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে উপজেলার ছাইকোলা ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ওই শিশুর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। শিশুটি একই উপজেলার চরনবীণ গ্রামের সাবের মন্ডলের ছেলে।

আরো পড়ুন

চাটমোহরে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল বৃদ্ধের

চাটমোহরে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল বৃদ্ধের

 

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সালমান কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সে তার বাবার বাড়ি থেকে ছাইকোলা ব্রিজ সংলগ্ন দাদির বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে বের হয়। সন্ধ্যায় স্থানীয় একটি চা স্টলে চা খেয়ে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করছিল সে। পরে আজ রবিবার ভোরে স্থানীয় মুসল্লিরা স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে মশারি দিয়ে ঢেকে রাখা মাড়াই করা ভুট্টার ওপর সালমানের মাথা থেঁতলানো লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

স্থানীয়দের জানান, রাতে হয়ত ওই মশারি দিয়ে ঢাকা ওই ভুট্টার ওপর ঘুমিয়ে পড়েছিল সালমান। ওই রাস্তা দিয়ে কোনো যানবাহন যাওয়ার সময় তাকে চাপা দেয়। এতেই তার মৃত্যু।

আরো পড়ুন

গঙ্গাচড়ায় কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড ঘরবাড়ি

গঙ্গাচড়ায় কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড ঘরবাড়ি

 

চাটমোহর থানার ওসি মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘ছেলেটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল এবং রাস্তার পাশে মাঝে মাঝেই ঘুমাত বলে তার বাবা-মা জানিয়েছেন। রাতের বেলায় কোনো যানবাহন তাকে চাপা দিয়ে থাকতে পারে। মরদেহ হাসপাতালে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করায় এবং স্বজনদের কোনো অভিযোগ না থাকায় সালমানের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’

মন্তব্য

চাটমোহরে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল বৃদ্ধের

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি
শেয়ার
চাটমোহরে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল বৃদ্ধের
ছবি: কালের কণ্ঠ

পাবনার চাটমোহরে ট্রেনে কাটা পড়ে ছগির প্রামাণিক (৭০) নামের এক বৃদ্ধের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। আজ রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৮টায় চাটমোহর স্টেশনের ১ কিমি পূর্বে জগতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত বৃদ্ধ ছগির প্রামাণিক উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের জগতলা পূর্বপাড়া গ্রামের মৃত খোরজান প্রামাণিকের ছেলে।

আরো পড়ুন
প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জের ৬৭ খাল এখন নিশ্চিহ্ন

প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জের ৬৭ খাল এখন নিশ্চিহ্ন

 

স্থানীয়রা জানান, নিহত বৃদ্ধ ছগির প্রামাণিক দীর্ঘদিন যাবৎ শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন।

প্রতিদিন সকালে তিনি বাড়ির পাশের রেললাইন দিয়ে হাঁটতেন। আজ রবিবার সকালে রেললাইনের ওপর দিয়ে হাঁটার মুহূর্তে রাজশাহী থেকে ঢাকা গামী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

স্থানীয়  ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ফরহাদ হোসেন মানিক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মন্তব্য

গঙ্গাচড়ায় কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড ঘরবাড়ি

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
শেয়ার
গঙ্গাচড়ায় কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড ঘরবাড়ি
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় কালবৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড ঘর-বাড়ি। ছবি : কালের কণ্ঠ

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় কালবৈশাখী ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে কয়েক শ কাঁচা-পাকা ঘরবাড়িসহ গাছপালা ও বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। এতে উপজেলার ৯ ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গতকাল শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। কালবৈশাখী ঝড়টি প্রায় ৩০ মিনিট স্থায়ী হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ঝড়ে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ঘরবাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছপালা, ধান, ভুট্টা নষ্ট হওয়ার পাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত উপজেলায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ।

আরো পড়ুন
প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জের ৬৭ খাল এখন নিশ্চিহ্ন

প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জের ৬৭ খাল এখন নিশ্চিহ্ন

 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ১০টার দিকে পশ্চিম দিক থেকে হঠাৎ করে কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। উপজেলার গঙ্গাচড়া, কোলকোন্দ, বড়বিল, মর্ণেয়া, গজঘণ্টা, আলমবিদিতর, লক্ষীটারী ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম এলাকায় ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কোলকোন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের ভ্যানচালক নুরজামান বলেন, ‘বাবা কি আর কইম? দুইটা ঘর দুই ঘরেই চাল উড়ি গেইছে। এখন খোলা আকাশের নিচোত আছি।

এই বাড়ি ঘর কেমনে ঠিক করিম। কেমনে চলিম?’

মর্ণেয়া ইউনিয়নের তালপট্টি এলাকার বাসিন্দা আজিবর বলেন, ‘ঝড়ে আমার  ঘর ভেঙে গেছে। ধান ও সবজি ক্ষেতের বেশ ক্ষতি হয়েছে।’

আরো পড়ুন
কাশ্মীর ইস্যুতে আদনান সামিকে বয়কটের ডাক

কাশ্মীর ইস্যুতে আদনান সামিকে বয়কটের ডাক

 

নোহালী ইউনিয়নের বালাপাড়া এলাকার মজিবর রহমান বলেন, ‘আমার ৪টা ঘর। চারটাই পরে গেছে।

এই চওয়াছোট নিয়া কেমনে থাকব? ভুট্টার ক্ষেতও নুইয়ে পড়ছে।

লক্ষীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ‘হঠাৎ ঝড়ে আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে পড়ে রাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘ঝড়ে গাছপালার কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ধান ও ভুট্টাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির কিছুটা ক্ষতি হলেও ফসলের বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি।’

রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ এর আওতাধীন গঙ্গাচড়া জোনাল অফিসের ডিজিএম আইযুব আলী বলেন, ‘কালবৈশাখী ঝড়ে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে। অনেক জায়গায় বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেছে। রাত ১০টা থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করতে রাত থেকেই কাজ চলছে।’

আরো পড়ুন
হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ নিয়ে বারিধারা জোনের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশ নিয়ে বারিধারা জোনের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

 

রংপুর আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই সময়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০ মিলিমিটার। বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮ নটিক্যাল মাইল। বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তবে রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সেই তথ্য পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য

প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জের ৬৭ খাল এখন নিশ্চিহ্ন

    ৯ খাল নর্দমা, বিপন্ন ৮ খাল কেনাবেচা হয়েছে ৭ খাল
রাসেল আহমেদ, রূপগঞ্জ
রাসেল আহমেদ, রূপগঞ্জ
শেয়ার
প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জের ৬৭ খাল এখন নিশ্চিহ্ন
ছবি: কালের কণ্ঠ

বলা হয়ে থাকে প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণঞ্জ। প্রাচ্যের ডান্ডি হওয়ার পেছনে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পরিবেশই প্রধান কারণ। খাল-নদের কারণে বাণিজ্যের বসতি গড়ে ওঠে এই নারায়ণগঞ্জে। খালগুলো দিয়ে অনায়াসে মালামাল আনা-নেওয়া করা যেত।

কালের বিবর্তনে নারায়ণগঞ্জের সব উপজেলার খালগুলো নানা কারণে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক খালের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। ইতিহাসের পাতা থেকে উধাও। বেশ কিছু খাল দখলদাররা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে।
দু’চারটা যা আছে তা-ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। 

.

ফলে নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। পরিবেশ ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান খাল উদ্ধারে মহাপরিকল্পনার উদ্যোগ নিলেও নারায়ণগঞ্জের খালগুলো উদ্ধারে কোনো গতি নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় রয়েছে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে।

কিন্তু এখনো অবধি খাল উদ্ধারে বড় সাফল্য দেখাতে পারেননি তারা।

উপজেলাগুলোর তথ্যমতে, জেলার রূপগঞ্জেই রয়েছে ৩১টি খাল। আড়াইহাজারা উপজেলায় ২২টি, সোনারগাঁয়ে ১৩টি, বন্দরে ৯টি, সিদ্ধিরগঞ্জে ৬টি, ফতুল্লায় ৭টি ও শহরে ৩টি খাল রয়েছে। আগে বেশিরভাগ খালের প্রস্থ ছিল ১৫০ ফুটেরও বেশি। এগুলো বৃষ্টির পানি ধারণ ও নিষ্কাশনে ব্যবহার হতো।

স্বাধীনতার পর মাত্র পাঁচ যুগের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জের খাল বিলুপ্ত হয়েছে। যেগুলো রয়েছে তার বেশিরভাগই সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। ভূমি অফিসের কাছে নেই দখলকারীদের কোনো তালিকা। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু উচ্ছেদ অভিযান চলে। তবে তদারকির অভাবে উচ্ছেদের কয়েক মাস পরেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় এসব খাল। 

পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু মানুষ মুনাফার চিন্তায় খালগুলো ভরাট করে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে। বিদ্যমান খালের অস্তিত্বও আজ হুমকির মুখে। কালের পরিক্রমায় খালের অস্তিত্ব শুধু বিলুপ্তিই হয়নি, সেখানে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল দালানকোঠা।

খালের ইতিহাস অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাস্তা তৈরি করে ধ্বংস করা হয়েছে। বেশ কিছু খাল কাগজকলমে থাকলেও এগুলোর চিহ্নমাত্রও নেই। এক সময় নারায়ণগঞ্জে ৯১টি খাল সচল ছিল। শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ও বালু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল ওই খালগুলো। নৌকা, স্টিমার চলতো সেসব নদীখালে। সেসময় নৌপথে মালামাল পরিবহণ ও বাণিজ্যিক প্রসার ঘটে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপ ছিল তখন নারায়ণগঞ্জ। প্রবাহমান নদী ও খালের সুবিধাই মুঘলদের বন্দর প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত করে। রাজপ্রাসাদ, দুর্গ রক্ষাসহ রণকৌশল করপোরেশন গড়ে তোলা হয় খালগুলোকে কেন্দ্র করে। 

.

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী খালের সংখ্যা ৬৭টি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৯১টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও তার সবই মৃতপ্রায়। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি খালগুলো উদ্ধারে কোনো অভিযান হয়নি। 

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন খাল সম্পর্কে ৫৭ পৃষ্ঠার এক বিশদ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। খাল হারিয়ে যাওয়ার সব তথ্য রয়েছে ওই প্রতিবেদনে। নদী কমিশনেরও একই প্রশ্ন-এত খাল হারাল কোথায়? ৩০-৩২ বছর আগেও রূপগঞ্জের প্রান্তসীমায় স্রোতবাহী যেসব খালে পণ্যবাহী বড় বড় নৌকার আনাগোনা ছিল, সে খালগুলো এখন দুই-আড়াই ফুট চওড়া ড্রেনের আকার ধারণ করেছে। 

এমনকি সরকারি ওই দপ্তরে বহু খোঁজাখুঁজি করেও খালগুলোর নথি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেই প্রভাবশালী মহল বছরের পর বছর ধরে খাল দখলের মচ্ছব চালিয়ে আসছে। আভিযানিক কর্মকর্তাদের কেউ কেউ উচ্ছেদের পরিবর্তে নিজেদের পকেট ভারী করার দিকেই বেশি উৎসাহী থাকেন। প্রভাবশালী দখলবাজদের সঙ্গে গোপন লেনদেন সম্পন্ন হলে মাঝপথেই আটকে যায় উচ্ছেদের অভিযান। ফলে তাদের কব্জা থেকে খালগুলো মুক্ত করাও আর সম্ভব হয় না। 

রূপগঞ্জের টাটকী খাল
রূপগঞ্জের লক্ষ্মী খ্যাত টাটকীর খাল এখন স্থানীয়দের কাছে প্রাণঘাতক হিসেবে পরিচিত। এক সময় এ খালটি ছিল রূপগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের অন্যতম মাধ্যম। এ খালটি এখন অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে আবর্জনা আর রঙের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। টাটকীর খাল ছিল মাছের প্রাণকেন্দ্র, সেই সঙ্গে ছিল কৃষকদের সেচকাজের উৎসস্থল। এ কারণে ১৯৮৪ সালে এ খালকে উৎস করে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে অগ্রণী সেচ প্রকল্প চালু করা হয়।

শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এ খালের মাধ্যমে পানি এনে স্থানীয় প্রায় দেড় হাজার একর জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হয়। রূপগঞ্জের মধ্য দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ দিকে বয়ে যাওয়া টাটকীর খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। এ খালের দু’ধারে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠান, দোকান-পাটের ময়লা-বর্জ্য, জীবজন্তুর মৃত দেহসহ বিভিন্ন আবর্জনা প্রতিদিন এ খালটিতে ফেলা হয়। 

.

কথিত আছে ১০০ বছরেরও অধিক সময়কাল আগে তৎকালীন জমিদার রামরতন ব্যানার্জি নদীপথে এ এলাকার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা এবং এলাকার শ্রীবৃদ্ধির লক্ষ্যে রূপগঞ্জের তারাব থেকে যাত্রামুড়া পর্যন্ত খনন করেন, যা টাটকীর খাল নামে পরিচিত। ১৯০৫ সালে খালটি সোনারগাঁয়ের আমগাঁওয়ের ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এ খালটি দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে লঞ্চ, পালতোলা ও মালবাহী নৌকা যাতায়াত করত। মারফত আলী বলেন, এ খাল দিয়ে বড় বড় নৌকা চলতো। এখন সব দখল হয়ে গেছে।'

কাশিপুর-ভোলাইল খাল
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশিপুর-ভোলাইল সরকারি খালটি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দখল আর দূষণ দেখে আর বোঝার কোনো উপায় নেই এটি খাল নাকি ড্রেনের সুয়ারেজ লাইন। খালটি দখলের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিযোগিতা করছেন। তাল মিলিয়ে খাল দখল করছেন। এমনকি শিল্প-কারখানার মালিকরা খাল দখল করে বিশাল আকারে দেয়াল নির্মাণ করে নিজেদের দখলে নিয়ে যায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাশিপুর দেওয়ানবাড়ী-ভোলাইল খালটিতে বসতবাড়ির আবর্জনা আর শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে খালের পানি দূষিত হয়ে গেছে। এই খাল দিয়ে একসময় চলাচল করতো মালবাহী বড় বড় নৌযান, পাওয়া যেতো সুস্বাদু মাছ। এখন স্থানীয়দের দখলদারিত্বে হারিয়ে গেছে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী কাশিপুর, ভোলাইল, দেওয়ানবাড়ির খাল। স্থানীয় আওলাদ হোসেন, জুম্মন মিয়া বলেন, য'খন প্রাচ্যের ডান্ডি ছিল নারায়ণগঞ্জ তখন দেশের বিভিন্ন স্থান হতে শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত টানাবাজার, মন্ডলপাড়া, বাবুরাইল খাল দিয়ে কাশীপুরে মালবাহী বৃহৎ নৌযানের যাতায়াত ছিল। ছোট-বড় দোকান, সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্লাবের নামে খাল দখল হয়ে গড়ে উঠেছে শতশত অবৈধ স্থাপনা।'

সোনারগাঁওয়ের পঙ্খিরাজ খাল
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ উপজেলার ঐতিহাসিক পঙ্খিরাজ খালটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে খালটি এখন সরু নালায় রূপ নিয়েছে। এক সময় খালটি পুরো সোনারগাঁ পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ছিল। বর্তমানে খালটির বিভিন্ন স্থানে ভরাট ও দখলের কারণে খালটিতে পানি প্রবাহ নেই বললেই চলে। সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদীর শাখা মেনিখালীর সঙ্গে এ খালের সরাসরি সংযোগ ছিল। খালটি উদ্ধবগঞ্জ এলাকার ভট্টপুর দিয়ে ঐতিহাসিক পানাম নগরে প্রবেশ করেছে। এক সময় এ খাল দিয়েই দেশী-বিদেশী বণিকরা পানাম নগরে যাতায়াত করত। 

ভট্টপুর গ্রামের করিম শেখ বলেন, 'এ খাল দিয়ে আমাদের ব্যবসায়িক মালামাল আনা নেয়া করতাম। নৌকায় মানুষ পারাপার হতো এ খালটি দিয়ে। প্রভাবশালীরা খালটি প্রায় দখল করে নিয়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে ময়লা ফেলে ভরাট করছে।' 

স্থানীয় বাসিন্দা কেরামত আলী বলেন, 'পঙ্খিরাজ খালটি অনেক পুরনো, খালটিকে ঘিরে অনেক ইতিহাস রয়েছে। খালটি পুনরুদ্ধারের জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি এবং মানববন্ধন করেছি। কিন্তু প্রশাসন খালটি উদ্ধারে চোখে পড়ার মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আমরা হতাশ।'

সোনারগাঁও উপজেলার শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী আরেকটি বেহাকৈর খাল। উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রাম থেকে শুরু হয়ে সাদিপুর ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খালটি বিস্তৃত। খালটির প্রায় পুরোটাই দখল হয়ে গেছে। 

.

পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, 'মহামান্য হাইকোর্ট নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে খালবিল।' 

যা বলছে প্রশাসন
রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল আলম বলেন, 'খাল দখলের অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তালিকা তৈরি করে অভিযান পরিচালনা করব।'

নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাশেদ মাহমুদ বলেন, 'দূষণ রোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। খাল উদ্ধারের দায়িত্বতো আমাদের নেই।'

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা শীঘ্রই অভিযানে নামব।'

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, 'খাল দখলের অনেক অভিযোগ আছে। ইতোমধ্যে বন্দরের একটি খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে শহর ও উপজেলার খালগুলো অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হবে।'

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ