নিজ পরিবারের ৫ জনকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে ভাতা তুলছেন নারী ইউপি সদস্য

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
শেয়ার
নিজ পরিবারের ৫ জনকে প্রতিবন্ধী সাজিয়ে ভাতা তুলছেন নারী ইউপি সদস্য
সংগৃহীত ছবি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে প্রতারণার মাধ্যমে নিজ পরিবারের পাঁচজনের নামে নিয়মিত ভাতা তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলার শ্যামপুর  ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের নারী ইউপি সদস্য মাকসুদা বেগমসহ স্বামী আব্দুল করিম, দুই মেয়ে মাসুমা আক্তার, তাসলিমা আক্তার ছেলে মাসুম বিল্লাহর নামে প্রতিবন্ধী ভাতা তুলছেন। তাদের নাম প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় পাওয়া গেছে। তারা সবাই সুস্থ-সবল মানুষ।

আরো পড়ুন
আন্দোলনে গুলির নির্দেশ, প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা সাইফুল গ্রেপ্তার

আন্দোলনে গুলির নির্দেশ, প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা সাইফুল গ্রেপ্তার

 

স্থানীয়রা জানান, ইউপি  সদস্য মাকসুদার পরিবারের ৫ সদস্যর মধ্যে কেউই প্রতিবন্ধী নয়। সবাই সুস্থ-সবল মানুষ। একজন মেম্বার হয়ে সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন, এর বিচার হওয়া দরকার। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত প্রতিবন্ধীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউপি সদস্য মাকসুদা বেগম নিজে হাসপাতাল ও সমাজসেবা অফিসের বিশেষ একটা চক্রকে ম্যানেজ করে জালিয়াতির মাধ্যমে সুস্থ মানুষদের নামে প্রতিবন্ধী মেডিক্যাল সনদ সংগ্রহ করেন। পরে সমাজসেবা অফিস থেকে প্রতিবন্ধী পরিচয়পত্র নিয়ে তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় যোগ করেন।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মাকসুদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক দূরে আছি, কাজে ব্যস্ত আছি।

আপনার সঙ্গে পরে কথা বলছি।’

আরো পড়ুন
নিয়ম না মেনে ফেরিঘাট ইজারা দেওয়ার অভিযোগ, মুখোমুখি বিএনপির দুই পক্ষ

নিয়ম না মেনে ফেরিঘাট ইজারা দেওয়ার অভিযোগ, মুখোমুখি বিএনপির দুই পক্ষ

 

শ্যামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমি আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানলাম। সমাজসেবা অফিসার এবং ইউএনওর সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন  বলেন, ‘অনিয়ম  হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

শিবগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবন্ধী মেডিক্যাল সনদ ও ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিবন্ধী যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে তালিকা আমাদের কাছে জমা দেওয়া হয়।

আমরা শুধু এটা বাস্তবায়ন করি। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজাহার আলী বলেন, ‘একজন ইউপি সদস্য হয়ে এ রকম কোনো অনিয়মের সঙ্গে জড়িত হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জের ৬৭ খাল এখন নিশ্চিহ্ন

    ৯ খাল নর্দমা, বিপন্ন ৮ খাল কেনাবেচা হয়েছে ৭ খাল
রাসেল আহমেদ, রূপগঞ্জ
রাসেল আহমেদ, রূপগঞ্জ
শেয়ার
প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণগঞ্জের ৬৭ খাল এখন নিশ্চিহ্ন
ছবি: কালের কণ্ঠ

বলা হয়ে থাকে প্রাচ্যের ডান্ডি নারায়ণঞ্জ। প্রাচ্যের ডান্ডি হওয়ার পেছনে নারায়ণগঞ্জের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও পরিবেশই প্রধান কারণ। খাল-নদের কারণে বাণিজ্যের বসতি গড়ে ওঠে এই নারায়ণগঞ্জে। খালগুলো দিয়ে অনায়াসে মালামাল আনা-নেওয়া করা যেত।

কালের বিবর্তনে নারায়ণগঞ্জের সব উপজেলার খালগুলো নানা কারণে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক খালের চিহ্ন পর্যন্ত নেই। ইতিহাসের পাতা থেকে উধাও। বেশ কিছু খাল দখলদাররা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে।
দু’চারটা যা আছে তা-ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। 

.

ফলে নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে। পরিবেশ ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান খাল উদ্ধারে মহাপরিকল্পনার উদ্যোগ নিলেও নারায়ণগঞ্জের খালগুলো উদ্ধারে কোনো গতি নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় রয়েছে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্বে।

কিন্তু এখনো অবধি খাল উদ্ধারে বড় সাফল্য দেখাতে পারেননি তারা।

উপজেলাগুলোর তথ্যমতে, জেলার রূপগঞ্জেই রয়েছে ৩১টি খাল। আড়াইহাজারা উপজেলায় ২২টি, সোনারগাঁয়ে ১৩টি, বন্দরে ৯টি, সিদ্ধিরগঞ্জে ৬টি, ফতুল্লায় ৭টি ও শহরে ৩টি খাল রয়েছে। আগে বেশিরভাগ খালের প্রস্থ ছিল ১৫০ ফুটেরও বেশি। এগুলো বৃষ্টির পানি ধারণ ও নিষ্কাশনে ব্যবহার হতো।

স্বাধীনতার পর মাত্র পাঁচ যুগের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জের খাল বিলুপ্ত হয়েছে। যেগুলো রয়েছে তার বেশিরভাগই সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। ভূমি অফিসের কাছে নেই দখলকারীদের কোনো তালিকা। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো কিছু উচ্ছেদ অভিযান চলে। তবে তদারকির অভাবে উচ্ছেদের কয়েক মাস পরেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় এসব খাল। 

পরিবেশবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কিছু মানুষ মুনাফার চিন্তায় খালগুলো ভরাট করে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনছে। বিদ্যমান খালের অস্তিত্বও আজ হুমকির মুখে। কালের পরিক্রমায় খালের অস্তিত্ব শুধু বিলুপ্তিই হয়নি, সেখানে গড়ে উঠেছে বিশাল বিশাল দালানকোঠা।

খালের ইতিহাস অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাস্তা তৈরি করে ধ্বংস করা হয়েছে। বেশ কিছু খাল কাগজকলমে থাকলেও এগুলোর চিহ্নমাত্রও নেই। এক সময় নারায়ণগঞ্জে ৯১টি খাল সচল ছিল। শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ও বালু নদীর সঙ্গে সংযুক্ত ছিল ওই খালগুলো। নৌকা, স্টিমার চলতো সেসব নদীখালে। সেসময় নৌপথে মালামাল পরিবহণ ও বাণিজ্যিক প্রসার ঘটে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপ ছিল তখন নারায়ণগঞ্জ। প্রবাহমান নদী ও খালের সুবিধাই মুঘলদের বন্দর প্রতিষ্ঠা করতে উৎসাহিত করে। রাজপ্রাসাদ, দুর্গ রক্ষাসহ রণকৌশল করপোরেশন গড়ে তোলা হয় খালগুলোকে কেন্দ্র করে। 

.

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী খালের সংখ্যা ৬৭টি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৯১টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও তার সবই মৃতপ্রায়। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি খালগুলো উদ্ধারে কোনো অভিযান হয়নি। 

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন খাল সম্পর্কে ৫৭ পৃষ্ঠার এক বিশদ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। খাল হারিয়ে যাওয়ার সব তথ্য রয়েছে ওই প্রতিবেদনে। নদী কমিশনেরও একই প্রশ্ন-এত খাল হারাল কোথায়? ৩০-৩২ বছর আগেও রূপগঞ্জের প্রান্তসীমায় স্রোতবাহী যেসব খালে পণ্যবাহী বড় বড় নৌকার আনাগোনা ছিল, সে খালগুলো এখন দুই-আড়াই ফুট চওড়া ড্রেনের আকার ধারণ করেছে। 

এমনকি সরকারি ওই দপ্তরে বহু খোঁজাখুঁজি করেও খালগুলোর নথি পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশেই প্রভাবশালী মহল বছরের পর বছর ধরে খাল দখলের মচ্ছব চালিয়ে আসছে। আভিযানিক কর্মকর্তাদের কেউ কেউ উচ্ছেদের পরিবর্তে নিজেদের পকেট ভারী করার দিকেই বেশি উৎসাহী থাকেন। প্রভাবশালী দখলবাজদের সঙ্গে গোপন লেনদেন সম্পন্ন হলে মাঝপথেই আটকে যায় উচ্ছেদের অভিযান। ফলে তাদের কব্জা থেকে খালগুলো মুক্ত করাও আর সম্ভব হয় না। 

রূপগঞ্জের টাটকী খাল
রূপগঞ্জের লক্ষ্মী খ্যাত টাটকীর খাল এখন স্থানীয়দের কাছে প্রাণঘাতক হিসেবে পরিচিত। এক সময় এ খালটি ছিল রূপগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের অন্যতম মাধ্যম। এ খালটি এখন অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে আবর্জনা আর রঙের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। টাটকীর খাল ছিল মাছের প্রাণকেন্দ্র, সেই সঙ্গে ছিল কৃষকদের সেচকাজের উৎসস্থল। এ কারণে ১৯৮৪ সালে এ খালকে উৎস করে ৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে অগ্রণী সেচ প্রকল্প চালু করা হয়।

শীতলক্ষ্যা নদী থেকে এ খালের মাধ্যমে পানি এনে স্থানীয় প্রায় দেড় হাজার একর জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হয়। রূপগঞ্জের মধ্য দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ দিকে বয়ে যাওয়া টাটকীর খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ কিলোমিটার। এ খালের দু’ধারে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠান, দোকান-পাটের ময়লা-বর্জ্য, জীবজন্তুর মৃত দেহসহ বিভিন্ন আবর্জনা প্রতিদিন এ খালটিতে ফেলা হয়। 

.

কথিত আছে ১০০ বছরেরও অধিক সময়কাল আগে তৎকালীন জমিদার রামরতন ব্যানার্জি নদীপথে এ এলাকার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা এবং এলাকার শ্রীবৃদ্ধির লক্ষ্যে রূপগঞ্জের তারাব থেকে যাত্রামুড়া পর্যন্ত খনন করেন, যা টাটকীর খাল নামে পরিচিত। ১৯০৫ সালে খালটি সোনারগাঁয়ের আমগাঁওয়ের ৩ কিলোমিটার পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। এ খালটি দিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে লঞ্চ, পালতোলা ও মালবাহী নৌকা যাতায়াত করত। মারফত আলী বলেন, এ খাল দিয়ে বড় বড় নৌকা চলতো। এখন সব দখল হয়ে গেছে।'

কাশিপুর-ভোলাইল খাল
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার কাশিপুর-ভোলাইল সরকারি খালটি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের দখল আর দূষণ দেখে আর বোঝার কোনো উপায় নেই এটি খাল নাকি ড্রেনের সুয়ারেজ লাইন। খালটি দখলের জন্য স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রতিযোগিতা করছেন। তাল মিলিয়ে খাল দখল করছেন। এমনকি শিল্প-কারখানার মালিকরা খাল দখল করে বিশাল আকারে দেয়াল নির্মাণ করে নিজেদের দখলে নিয়ে যায়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাশিপুর দেওয়ানবাড়ী-ভোলাইল খালটিতে বসতবাড়ির আবর্জনা আর শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে খালের পানি দূষিত হয়ে গেছে। এই খাল দিয়ে একসময় চলাচল করতো মালবাহী বড় বড় নৌযান, পাওয়া যেতো সুস্বাদু মাছ। এখন স্থানীয়দের দখলদারিত্বে হারিয়ে গেছে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী কাশিপুর, ভোলাইল, দেওয়ানবাড়ির খাল। স্থানীয় আওলাদ হোসেন, জুম্মন মিয়া বলেন, য'খন প্রাচ্যের ডান্ডি ছিল নারায়ণগঞ্জ তখন দেশের বিভিন্ন স্থান হতে শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত টানাবাজার, মন্ডলপাড়া, বাবুরাইল খাল দিয়ে কাশীপুরে মালবাহী বৃহৎ নৌযানের যাতায়াত ছিল। ছোট-বড় দোকান, সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্লাবের নামে খাল দখল হয়ে গড়ে উঠেছে শতশত অবৈধ স্থাপনা।'

সোনারগাঁওয়ের পঙ্খিরাজ খাল
নারায়ণগঞ্জ সোনারগাঁ উপজেলার ঐতিহাসিক পঙ্খিরাজ খালটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে খালটি এখন সরু নালায় রূপ নিয়েছে। এক সময় খালটি পুরো সোনারগাঁ পৌরসভার পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ ছিল। বর্তমানে খালটির বিভিন্ন স্থানে ভরাট ও দখলের কারণে খালটিতে পানি প্রবাহ নেই বললেই চলে। সোনারগাঁয়ে মেঘনা নদীর শাখা মেনিখালীর সঙ্গে এ খালের সরাসরি সংযোগ ছিল। খালটি উদ্ধবগঞ্জ এলাকার ভট্টপুর দিয়ে ঐতিহাসিক পানাম নগরে প্রবেশ করেছে। এক সময় এ খাল দিয়েই দেশী-বিদেশী বণিকরা পানাম নগরে যাতায়াত করত। 

ভট্টপুর গ্রামের করিম শেখ বলেন, 'এ খাল দিয়ে আমাদের ব্যবসায়িক মালামাল আনা নেয়া করতাম। নৌকায় মানুষ পারাপার হতো এ খালটি দিয়ে। প্রভাবশালীরা খালটি প্রায় দখল করে নিয়েছে। তার সঙ্গে সঙ্গে ময়লা ফেলে ভরাট করছে।' 

স্থানীয় বাসিন্দা কেরামত আলী বলেন, 'পঙ্খিরাজ খালটি অনেক পুরনো, খালটিকে ঘিরে অনেক ইতিহাস রয়েছে। খালটি পুনরুদ্ধারের জন্য উর্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি এবং মানববন্ধন করেছি। কিন্তু প্রশাসন খালটি উদ্ধারে চোখে পড়ার মতো কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আমরা হতাশ।'

সোনারগাঁও উপজেলার শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী আরেকটি বেহাকৈর খাল। উপজেলার কাঁচপুর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রাম থেকে শুরু হয়ে সাদিপুর ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খালটি বিস্তৃত। খালটির প্রায় পুরোটাই দখল হয়ে গেছে। 

.

পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, 'মহামান্য হাইকোর্ট নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে ঘোষণা করেছেন। অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে খালবিল।' 

যা বলছে প্রশাসন
রূপগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল আলম বলেন, 'খাল দখলের অভিযোগ পেয়েছি। আমরা তালিকা তৈরি করে অভিযান পরিচালনা করব।'

নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক রাশেদ মাহমুদ বলেন, 'দূষণ রোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। খাল উদ্ধারের দায়িত্বতো আমাদের নেই।'

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, 'আমরা শীঘ্রই অভিযানে নামব।'

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, 'খাল দখলের অনেক অভিযোগ আছে। ইতোমধ্যে বন্দরের একটি খাল দখলমুক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে শহর ও উপজেলার খালগুলো অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করা হবে।'

মন্তব্য

পাঠাগারে নাস্তিকতা ছড়ানোর অভিযোগ, ৫ বস্তা বই ইউএনও’র কাছে জমা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
শেয়ার
পাঠাগারে নাস্তিকতা ছড়ানোর অভিযোগ, ৫ বস্তা বই ইউএনও’র কাছে জমা
সংগৃহীত ছবি

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে একটি পাঠাগার থেকে নেওয়া পাঁচ শতাধিক বই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছে একদল যুবক। তাদের দাবি, পাঠাগারের বইগুলো নাস্তিকতা ছড়াচ্ছে। এসব বই পড়ে যুবসমাজ ধর্মবিরোধী হয়ে উঠছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার অভয়ারণ্য পাঠাগারে ঘটনাটি ঘটে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিন মাহমুদ শনিবার জানান, কারো অনুমতি ছাড়া বইগুলো পাঠাগার থেকে যুবকেরা নিয়ে এসেছেন। উভয়পক্ষকে নিয়ে রবিবার বিকেলে সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বৈঠক হবে। 

তিনি আরো জানান, ঘটনার খবর পাওয়ার পরপরই তিনি ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পাঠাগার পরিদর্শন করেছেন। উভয়পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।

পরদিনই বৈঠকের কথা ছিল। কিন্তু দুইপক্ষের সময় না মেলার কারণে বসা হয়নি।

অভয়ারণ্য পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক দূর্জয় চন্দ্র ঘোষ দাবি করেন, ২০১৫ সালে অভয়ারণ্য পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা দেড় শতাধিক।

গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে একদল যুবক পাঠাগারে এসে বই বস্তায় ভর্তি করেন। তারা বলেন এখানে কোনো পাঠাগার থাকতে দেবেন না। বই পুড়িয়ে ফেলবেন। এ সময় ধনবাড়ী থানার একজন কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হলে তারা বইগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দেন। 

তিনি আরো দাবি করেন, বইগুলোর কোনোটিই ধর্মবিরোধী নয়।

এখানে জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক বরেন্দ্র লেখকের লেখা বই রয়েছে।

আরো পড়ুন
আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি ছাড়া সংহতি বজায় সম্ভব নয়

আন্তধর্মীয় সম্প্রীতি ছাড়া সংহতি বজায় সম্ভব নয়

 

পাঠাগার থেকে বই নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নেতৃত্ব দেন খেলাফত যুব মজলিস ধনবাড়ী শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী রিশাদ। তার সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ জন যুবক ছিলেন। গোলাম রব্বানী রিশাদের দাবি, অভয়ারণ্য পাঠাগার যারা পরিচালনা করেন, তারা নাস্তিক। ইসলাম, হিন্দুসহ সব ধর্মের বিরোধী। গত বুধবার এই পাঠাগারের সদস্য আশিক নোমান ফেসবুকে ধর্মবিরোধী একটি পোস্ট দেয়। আমরা আশিক নোমানকে ডেকে কথা বলি। সে তার ভুল বুঝতে পারে। তার কাছ থেকে জানতে পারি, সে ওই পাঠাগারের সঙ্গে জড়িত হয়ে ধর্মবিরোধী হয়ে উঠেছে। এ জন্য গত বৃহস্পতিবার আমরা ওই পাঠাগারে গিয়ে যে বইগুলো ধর্মবিরোধী মনে হয়েছে, তা নিয়ে এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছি।

মন্তব্য

সাবেক প্রতিমন্ত্রীর দখল করা ‘তালুকদারি’ কেড়ে নিচ্ছে এলাকাবাসী

রফিকুল ইসলাম, বরিশাল
রফিকুল ইসলাম, বরিশাল
শেয়ার
সাবেক প্রতিমন্ত্রীর দখল করা ‘তালুকদারি’ কেড়ে নিচ্ছে এলাকাবাসী
ছবি: কালের কণ্ঠ

পটুয়াখালীর কলাপাড়া (খেপুপাড়া) থানা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন এ কে এম ইসমাইল তালুকদার। সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটার আশপাশে তার পারিবারিক অনেক কৃষিজমি ছিল। সংগঠনের হাল ধরতে গিয়ে কৃষক বাবার রেখে যাওয়া সেই জমি ইসমাইল তালুকদার একটু একটু করে সব বিক্রি করেছেন। শেষমেষ নিজের ভিটেবাড়ির বড় একটা অংশও বিক্রি করেছিলেন।

একটা সময় তিনি প্রায় নি:স্ব হয়ে পড়েন।

ঠিক তখনই পরিবারের হাল ধরতে তার ছেলে মো. মাহবুবুর রহমান ওরফে মাহবুব তালুকদার বিদেশে পাড়ি জমান। আশির দশকের শেষভাবে কলাপাড়ায় ফিরে পরিবারের পাশাপাশি হাল ধরেন আওয়ামী লীগের। পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

তখন থেকেই বাবার বিক্রি করা জমি উদ্ধারে তিনি দখল মিশনে নামেন। সেই মিশনের পাশাপাশি অনেকের জমিই তিনি জবরদখল করেন। এভাবে তিনি জমি দখল করে নামের সঙ্গে মিল রেখে কলাপাড়ায় ‘তালুকদারি’ গড়ে তোলেন।

দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থাকায় তিনবারের সংসদ সদস্য হয়েও তিনি পরপর অনুষ্টিত দুটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হন।

তাঁর আপন ফুপাত ভাই মো. মহিববুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পান। তাকেও প্রতিন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। ফলে মাহবুব তালুকদার রাজনীতিতে কোনঠাসা হয়ে পড়েন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মাহবুবের দখল করা সেই ‘তালুকদারি’ এলাকাবাসি কেড়ে নিতে শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে জমির কয়েকজন মালিক মামলাও করেছেন।

রাজনীতিতে উত্থান যেভাবে

মাহবুব তালুকদার ১৯৯০ সালে কলাপাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করে হেরে যান। কিন্তু ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে তিনি দলের মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন। ২০১৪ সালেও তিনি কথিত ‘বিনা ভোটে’র নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার সংসদ সদস্য হয়েছেন।

কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগের কারণে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পাননি। একই কারণে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তাঁর আপন ফুপাত ভাই মো. মহিববুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পান। তাকেও প্রতিন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও মাহবুব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে দলীয় মনোনীত প্রার্থী মো. মহিববুর রহমানের কাছে হেরে যান।

গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবারসহ মাহবুব আত্মগোপনে চলে যান। এই সময়ের মধ্যে তার বিরুদ্ধে হত্যা, বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা দায়ের হয়। একইসঙ্গে জমি দখল করে তার গড়ে তোলা তালুকদারি বেদখল হতে শুরু করে। এতে মানষিকভাবে তিনি বিচলিত হয়ে পড়েন। ঢাকার একটি হাসপাতালে প্রায় এক মাস ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতবছরের ২২ সেপ্টেম্বর তিনি মারা যান।

‘তালুকদারি’ উদ্ধারের নামে দখলবাজি

কলাপাড়া পৌর শহরের কুমারপট্রি এলাকায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী মাহবুব তালুকদারের দ্বিতল ভবন। লাগোয়া পশ্চিম পাশের সাড়ে ৪ শতাংশ জমি ১৯৭৭ সালের ১৪ জুন ইসমাইল তালুকদার বিক্রি করেন। জমি নিয়ে সেখানেই মো. খলিলুর রহমান ওরফে চুন্নু মিয়ার বসবাস করছিলেন। তিনি এক সময় উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ছিলেন। 

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মাহবুব তালুকদার পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর কতিপয় সন্ত্রাসীরা মাহবুব তালুকদারের নির্দেশে অস্ত্রের মুখে চুন্নু মিয়ার বসতবাড়ি দখল করে। দখলের ৮ দিন পর ১০ সেপ্টেম্বর রাতে ওই জমি মাহবুব জোরপূর্বক লিখে নেন। এই ঘটনার প্রায় ১৬ বছর পর মাহবুব তালুকদার, তাঁর ছোট ভাই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মো. হাবিবুর রহমানসহ ২৭ জনের নামে চুন্নু মিয়া গতবছরের ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেছেন।

চুন্নু মিয়া বলেন, আমার বসত ভিটা থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর শোকে-কষ্টে আমার স্ত্রী মাজেদা বেগম ২০১৭ সালের ২১ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোর্টে বিচারক থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে। মামলার এক আসামি গ্রেপ্তার হলেও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মো. হাবিবুর রহমানসহ অপর আসামি পলাতক রয়েছেন।

 মাহবুব তালুকদারের আরেক প্রতিবেশী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান। মাহবুরের বাবার কাছ থেকে সোয়া ৬ শতাংশ জমি তারা কিনেন। সেখানে টিন-কাঠের তৈরি বড় ঘর ছিল। জমির পিছনের অংশে আরেকটি ঘর ছিল। দেখাশোনার সেখানে একজন কেয়ারটেকার থাকতেন। প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন মাহবুব পুরো জমিটি জোড়পূর্বক দখল করেন। সীমানা প্রাচীর দিয়ে নিজের জমির সঙ্গে যুক্ত করেছেন।

অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান বলেন, 'সাবেক প্রতিন্ত্রীর আমার বাড়িসহ পাশের আরেকটি বাড়ি দখল করেন। পরবর্তীতে তিনি দখলকৃত জমির দলিল সম্পাদন করে দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু আমি জমির দলিল দেয়নি। দখল হওয়া জমি ফিরে পেতে আইনী প্রক্রিয়া শুরু করেছি।'

খেপুপাড়া কো-অপারেটিভ সাপ্লাই এন্ড সেল সোসাইটি লিমিটেডের সভাপতি বিশ্বাস শফিকুর রহমান টুলু বলেন, 'মাহবুব তালুকদারের ভবনের পাশেই শতবর্ষী সোসাইটির অয়েল মিল ছিল। সেই মিলের অন্তত ৫ শতাংশ জমি তিনি প্রচীর দিয়ে দখল করেছেন। সেই ঘটনায় থানায় সাধারন ডায়েরি করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। সেই জমি উদ্ধারের জন্য সম্প্রতি সোসাইটি আইনী প্রক্রিয়া শুরু করেছে।'

মাদ্রাসার জমি দখল
কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া মৌজায় ১৪ একর ২ শতাংশ জমি জাল জালিয়াতি করে দখলে রেখেছেন মাহবুব তালুকদার। পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার জলিশা-জাটরা হাসানিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা এ জমির মালিক ছিল। ১৯৬৩ সালে এই জমি মাদ্রাসার নামে কবলা করে দেন কলাপাড়া পৌর শহরের বাসিন্দা মোজাম্মেল হক মুন্সীর পরিবার।

প্রায় ৪৭ বছর পর ২০০৯ সালে এ জমির দখল হারায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন মাদ্রাসার ৮ একর জমি মাহবুব নিজের নামে লিখে নেন। ২০০৯ সালের ১০ জুলাই এই দলিল সম্পাদিত হয়। মাহবুবের ভাগনি জামাই আবু সালেহ, কলাপাড়া ভূমি অফিসের তৎকালীন নাজির রফিকুল ইসলাম এবং টিয়াখালী এলাকার গাজী আব্বাস উদ্দিন বাচ্চু বাকি জমি তাঁদের নামে ভুয়া দলিল দিয়ে দখল করেন।

কলাপাড়া পৌর বিএনপির সাধারন সম্পাদক মুসা তাওহীদ নাননু মুন্সী বলেন, মাদ্রাসায় দানকৃত জমির প্রায় ৬ একর পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহন করে। তার বিপরীতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা দিয়েছিল। কিন্তু উচ্চ আদালতে মামলার কারনে সেই টাকা উত্তোলন করা সম্ভব হয়নি। তবে অপর জমি সম্প্রতি মাদ্রাসা দখলে নিয়েছে।

মাহবুব পরিবার যা বলছেন
মাহবুব তালুকদারের ছোটবোন সুরাইয়া বেগম কালের কণ্ঠকে মুঠোফোনে বলেন, তার ভাইয়ের বেশকিছু জমি ৫ আগষ্টের পর দখল হয়েছে। আরো কিছু জমি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে জমিজমার বিষয়টি তার ভাই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবঃ) মো. হাবিবুর রহমান ভালো বলতে পারবেন। তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে তিনি আর ফোন ধরছেন না।

মো.হাবিবুর রহমানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তাকে খুর্তে বার্তা পাঠালেও তিনি তাতে সাড়া দেননি। মাহবুব তালুকদারের স্ত্রী প্রীতি রহমানের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তারা সবাই ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে সুরাইয়া বেগম কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।

মন্তব্য
কুমিল্লা

বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে পৃথক সংঘর্ষে আহত ২১

লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
শেয়ার
বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে পৃথক সংঘর্ষে আহত ২১
সংগৃহীত ছবি

কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জে বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। শনিবার (২৬ এপ্রিল) লাকসাম উপজেলার আজগরা এবং মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও ও নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নে পৃথক এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে লাকসামের আজগরা হাজি আলতাফ আলী হাই স্কুল ও কলেজ মাঠে উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠন উপলক্ষে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলকে ঘিরে কেন্দ্রীয় বিএনপির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম (চৈতী কালাম) ও সাবেক সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) আনোরুল আজিমের অনুসারীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়।

এক পর্যায়ে দুপক্ষের অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এ সময় উভয়পক্ষের অনুসারী স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের অন্তত ৬ নেতাকর্মী আহত হন। আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সংঘর্ষের মাঝেই ওয়ার্ড কমিটি ঘোষণা হয়।
 

লাকসাম উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহ আলম জানান, শনিবার আজগরা স্কুল ও কলেজ মাঠে বিএনপির ওয়ার্ড কমিটি গঠন উপলক্ষে কাউন্সিল চলছিল। ঠিক তখন বাহিরে প্রার্থীর সমর্থন নিয়ে স্থানীয় যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও সামান্য হাতাহাতি হয়। পরে দায়িত্বশীলদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। তবে এতে কাউন্সিলে কোনো সমস্যা হয়নি।

অন্যদিকে একইদিন সকালে মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠন উপলক্ষে আয়োজিত কাউন্সিলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন গুরুতর আহত হন। সংঘর্ষে আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বর্তমানে বাইশগাঁও ও আশপাশের এলাকার দলের উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, শনিবার সকালে মনোহরগঞ্জের বাইশগাঁও ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠন উপলক্ষে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়।

কাউন্সিলে সভাপতি পদে বিএনপি নেতা সুলতান আহমেদ এবং হোসাইন মোহাম্মদ হেলাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোট প্রদান ও সমর্থন নিয়ে সুলতান ও হেলালের অনুসারীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। দফায় দফায় সংঘর্ষে সুলতানের অনুসারী এক কর্মী এবং হেলালের অনুসারী তিন কর্মী গুরুতর আহত হন।

বাইশগাঁও ইউনিয়ন যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি সুমন পাটোয়ারী বলেন, কমিটি ঘোষণা শেষে হঠাৎ সুলতান ও হেলালের অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষে চার নেতাকর্মী আহত হন। নিজেদের মধ্যে এমন সংঘর্ষ, হানাহানি অত্যন্ত দুঃখজনক।

অপরদিকে একই উপজেলার নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের কান্দি স্কুল মাঠে ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কাউন্সিলেও আবুল কালাম ও আনোরুল আজিমের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রায় ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মো. হারুনুর রশিদ জানান, শনিবার সকালে স্থানীয় কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটি গঠন উপলক্ষে কাউন্সিল অনুষ্ঠান শুরু হয়। হঠাৎ দু'গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে জেলার নেতৃবৃন্দ কমিটি ঘোষণা না করে কাউন্সিল অসমাপ্ত রেখেই স্থান ত্যাগ করেন।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ