<p style="text-align:justify">শিল্পকলা একাডেমি ঘিরে বছরজুড়ে সরব থাকে রাজধানীর শিল্পচর্চা। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে গত ১৬ জুলাই থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে বন্ধ রয়েছে সংস্কৃতিচর্চার সব ধরনের কর্মকাণ্ড। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কিছু দাপ্তরিক কাজও বন্ধ রয়েছে। ফলে ওই দিন থেকে বাতিল হতে শুরু করে পূর্বনির্ধারিত সব সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নাটকের মঞ্চায়ন।</p> <p style="text-align:justify">এরপর ১৯ জুলাই কারফিউ জারি হলে সেখানে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এখনো সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়নি। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন নাট্যকর্মীরা। শিল্পীরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় ছাড়া এর আগে বা পরে এত দীর্ঘ সময় মঞ্চের আলোর বাইরে থাকেননি তাঁরা।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="শিল্পকলা একাডেমিতে স্বাভাবিক কাজ বন্ধ দেড় মাস" height="224" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/06-09-2024/6666.jpg" style="float:left" width="346" />রাজধানীতে নাটক মঞ্চায়ন ও মহড়ার বিকল্পহীন স্থান জাতীয় নাট্যশালা। শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় সেটিও বন্ধ রয়েছে। জাতীয় নাট্যশালার তিনটি মিলনায়তন নাটক মঞ্চায়নের উপযোগী করে তৈরি। এর বাইরে রয়েছে মহড়া ও সেমিনার কক্ষ।</p> <p style="text-align:justify">এসব কারণে নাট্যকর্মীদের প্রথম পছন্দ জাতীয় নাট্যশালার তিনটি মঞ্চ। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে জাতীয় জাদুঘরে ‘সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে প্রত্যাশা’ শীর্ষক মতবিনিময়সভার আয়োজন করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">এতে অংশ নেন অভিনয়শিল্পী, কণ্ঠশিল্পী, কবি-সাহিত্যিক, প্রকাশক, শিল্প সমালোচক, সাংবাদিকসহ সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষ। এ সময় তাঁরা শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ফের শুরু করার দাবি জানান। সভায় নাটকের দল বটতলার সিইও কাজী রোকসানা রুমা বলেন, দুর্বৃত্তদের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলা ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সংস্কার করতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">শিল্প-সংস্কৃতিচর্চার স্রোতধারা গতিশীল করতে দ্রুত শিল্পকলা একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে হবে। শিল্পকলা একাডেমিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শুরু করা এবং নাট্যচর্চার ভবিষ্যৎ রূপরেখা নির্ধারণে থিয়েটারকর্মীদের উন্মুক্ত মতবিনিময়সভার ডাক দিয়েছে ‘বিক্ষুব্ধ থিয়েটারকর্মীগণ’। মতবিনিময়ে অংশ নিতে সারা দেশের থিয়েটারকর্মীদের আহ্বান জানানো হয়েছে। আগামী শনিবার সন্ধ্যায় বেইলী রোডের বাংলাদেশ মহিলা সমিতি মিলনায়তনে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।</p> <p style="text-align:justify">গত ১৬ জুলাই জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল প্রাচ্যনাটের ‘অচলায়তন’ এবং দেশ নাটকের ‘নিত্যপুরাণ’ নাটক দুটি। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে প্রদর্শনী বাতিল করতে হয়। পরবর্তী দিনগুলোতেও একইভাবে সব কটি নাটকের প্রদর্শনী বাতিল করা হয়। নাট্যকেন্দ্রের ‘পুণ্যাহ’, থিয়েটার ৫২-র নাটক ‘নননপুরের মেলায় একজন কমলাসুন্দরী ও একটি বাঘ আসে’, থিয়েটারের ‘লাভ লেটারস’, ম্যাড থেটারের ‘অ্যানা ফ্র্যাঙ্ক’-এর মঞ্চায়ন বাতিল করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এবং সরকার পতনের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেসব নাটকের প্রদর্শনী ও নাট্যোৎসব বাতিল করতে হয়েছে সেগুলো ফের মঞ্চে আনা যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ মঞ্চ বন্ধ।</p> <p style="text-align:justify">একই কারণে মহড়া শেষ হলেও মঞ্চে আনা যায়নি ঢাকা থিয়েটারের ‘রঙমহলা’ নাটক। মঞ্চায়িত হওয়ার অপেক্ষায় আছে মেঘদূত নাট্য সম্প্রদায়ের ‘আব্রাহাম লিংকন’, থিয়েটার আর্ট ইউনিটের ‘বলয়’, ‘উনসত্তরের সত্তর’সহ কয়েকটি প্রযোজনা। ১৯ জুলাই একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শাস্ত্রীয় সংগীত ও নৃত্যানুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। সেটিও স্থগিত করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্রোতধারাকে সচল রাখে শিল্পকলা একাডেমি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত ১২ আগস্ট একাডেমির টানা সাতবারের মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী পদত্যাগ করেন। বর্তমানে প্রশাসনিক কার্যক্রমের বাইরে একাডেমিতে কার্যত অন্য কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চলছে না।</p> <p style="text-align:justify">স্থবিরতা কাটিয়ে কবে নাগাদ সংস্কৃতিচর্চার কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে, জানতে চাইলে একাডেমির সচিব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ কালের কণ্ঠকে জানান, একাডেমিতে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে। ফলে কবে নাগাদ সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। বর্তমানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসছে তাঁরা তাই পালন করছেন। </p> <p style="text-align:justify">কবে নাগাদ একাডেমির সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শুরু হবে, সে বিষয়ে জানাতে পারেনি মন্ত্রণালয়ও। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ কালের কণ্ঠকে জানান, শিল্পকলা একাডেমির সংস্কৃতিচর্চা পুনরায় গতিশীল করতে এখন পর্যন্ত সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। সেগুনবাগিচার একাডেমি প্রাঙ্গণে সেনাবাহিনীর ক্যাম্প থাকায় আপাতত সেখানে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালু করা যাচ্ছে না।</p>