<p style="text-align:justify">রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জুয়েলারি মার্কেটের সামনে ক্রাচে ভর করে প্রতিদিন ভিক্ষার হাত পাতেন মমিনুল ইসলাম। এই টাকা দিয়ে চলে তাঁর সংসার ও মামলার খরচ। তিনি ভিক্ষুক ছিলেন না। নিয়তি তাঁকে ভিক্ষুকে পরিণত করেছে।</p> <p style="text-align:justify">মমিনুল জানালেন, একসময় তিনি গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি করতেন। সেখান থেকে টাকা জমিয়ে ২০১৮ সালে একটি প্রাইভেট কার কেনেন। ২০২২ সালের ৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার জন্য দুজন যাত্রী তাঁর গাড়ি ভাড়া করে। ব্যাকডালা খুলে তাদের কার্টন রেখে মমিনুল গাড়ি চালাতে থাকেন।</p> <p style="text-align:justify">সিদ্ধিরগঞ্জে আসার পর র‌্যাবের টহল টিম গাড়িটি থামায়। তারা ব্যাকডালা থেকে দুটি কার্টন বের করে পায় ফেনসিডিলের বোতল। ওই সময় মমিনুল র‌্যাবের কাছে কাকুতি-মিনতি করে জানায়, যাত্রীর এই কার্টন তিনিই রেখেছেন। অন্য দুজনের সঙ্গে তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাবের করা মাদক মামলায় দুই যাত্রীসহ তাঁকেও আসামি করা হয়।</p> <p style="text-align:justify">আটককৃত গাড়ি ও আসামিদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় জমা দেয় র‌্যাব। কিন্তু গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর বিকেলে অনেক গাড়ির সঙ্গে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা চত্বরে সেই গাড়িটিও পুড়ে যায়। আবারও উঠে দাঁড়ানোর স্বপ্নে ধাক্কা খেলেন মমিনুল। </p> <p style="text-align:justify">এদিকে মমিনুল আগে থেকেই পিএলআইডি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর রোগ আরো বেড়ে যায়। কোমরে এত ব্যথা হয় যে তিনি দাঁড়াতেই পারেন না। পাঁচ মাস ছয় দিন কারাগারে থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে দেখতে পান তাঁর স্ত্রীও তাঁকে ফেলে চলে গেছে। দুটি মেয়েকে রেখে যায় তাঁর কাছে। ফলে চোখের সামনে অন্য কোনো পথ খোলা না থাকায় ভিক্ষায় নামেন মমিনুল।</p> <p style="text-align:justify">মমিনুল জানান, শুরুতে খুব লজ্জা লাগত। রোজগার করা মানুষ কী করে মানুষের সামনে হাত পাতে? কিন্তু অসুস্থতা, মামলার খরচ, বাসা ভাড়াসহ নানা খরচের চিন্তা তাঁকে লজ্জা ভাঙতে সাহায্য করে। এখন মমিনুল প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পান। এই দিয়েই চলছে তাঁর চিকিৎসা, মামলা ও সংসার খরচ।</p> <p style="text-align:justify">মমিনুল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আটকের সময় র‌্যাবকে যাত্রীরাও বলেছে, আমি তাদের গ্রুপের লোক না। কিন্তু র‌্যাব কোনো কথাই শোনেনি। এই একটি মামলা আমার জীবন ও সংসার ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। আমি গরিব মানুষ, এর বিচার আমি কার কাছে চাইব?’</p> <p style="text-align:justify">মমিনুল জানালেন, কিছু দিন আগে তাঁর স্ত্রী এসে দুই মেয়েকেও নিয়ে গেছে। তাঁর স্ত্রী আরেকজনকে বিয়েও করেছে। ফলে তিনি এখন একা। তিনি কোমর ব্যথার কারণে বসতে পারেন না। ক্রাচে ভর করে মাসে মাসে আদালতে হাজিরা দিতে যেতে হয়। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসক দেখিয়েছিলেন, তাঁরা বলেছেন, অপারেশন করতে ছয় লাখ টাকা খরচ হবে। কিন্তু এই টাকা তিনি  কোথা  থেকে জোগাড় করবেন?</p> <p style="text-align:justify">এ পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার টাকা জমাতে পেরেছেন মমিনুল। ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করানোর জন্য পাসপোর্ট করতে দিয়েছেন। তিনি গত বুধবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যদি গিয়ে দেখি এই টাকায় চিকিৎসা করা যাচ্ছে না, তাহলে একটি কিডনি বিক্রি করে দিমু।’ তার পরই কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘এ ছাড়া আর কোনো সম্পদ তো আমার নেই। কোমরের ব্যথা আর সইতে পারছি না।’</p>