<p>রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড এলাকার ইসিএস কম্পিউটার সিটির (মাল্টিপ্ল্যান সেন্টার) সামনে দুই ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।</p> <p>কমিটি নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব, পানি ও ইন্টারনেট সরবরাহ, পার্কিং ও ফুটপাত দখলের চেষ্টা ও চাঁদাবাজিতে বাধা দেওয়ায় এই দুই নেতার ওপর হামলা চালানো হতে পারে বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।</p> <p>এদের মধ্যে এহতেসামুল হক (৪২) নামে একজনের অবস্থা গুরুতর। তিনি বর্তমানে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত অপর ব্যক্তি হলেন- ওয়াহিদুল হাসান দীপু। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। পুলিশ ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া গেছে।</p> <p>জানা গেছে, এহতেসামুলকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর একটি ভিডিও গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।</p> <p>এর আগে গত শুক্রবার গভীর রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঘটনায় ওয়াহিদুল হাসান বাদী হয়ে শনিবার রাতে মামলা করেছেন।</p> <p>ভুক্তভোগীদের স্বজনরা বলছেন, এলিফ্যান্ট রোড কম্পিউটার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আহত ওয়াহিদুল। এ ছাড়া  এহতেসামুল হক মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের ব্যবসায়ী মালিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক।</p> <p>এদিকে হামলার প্রতিবাদ ও জড়িতদের বিচার দাবিতে শনিবার দুপুরে এলিফ্যান্ট রোডে তারা বিক্ষোভ করেছেন। ব্যবসায়ীদের দাবি, হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।</p> <p>ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, অন্তত ৫ জন মিলে মাল্টিপ্ল্যান মার্কেটের সামনে এহতেসামুলকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করছে। আরো অন্তত ৭ জন পাশে দাঁড়িয়ে আছে। চাপাতির আঘাতে এহতেসামুল রাস্তায় পড়ে যান। এরপরও তার ওপর কোপ চালানো হয়। তিনি উঠার চেষ্টা করতে থাকেন।</p> <p>একপর্যায়ে তিনি সড়কে শুয়ে পড়েন। এরপরও তাকে আঘাত করতে থাকে দুর্বৃত্তরা। আবারও তিনি উঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।</p> <p>ফুটেজে আরো দেখা যায়, হামলার সময় সড়কে পথচারী এবং গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়। সেখানকার সবাই মুখোশ পরা ছিল। তবে হামলাকারীদের ঠেকাতে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। এরপর দেড় থেকে দুই মিনিট পর হামলাকারীরা সটকে পড়ে।</p> <p>জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার তারিক লতিফ বলেন, ঘটনার তদন্ত চলছে। সিসিটিভি ক্যামেরার কয়েকটি ফুটেজ পেয়ে যাচাই চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, এতে দেখা গেছে, হামলায় অন্তত ১২ জন অংশ নিয়েছে। তাদের মধ্যে দুজনকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হামলায় জড়িত বাকিদেরও শনাক্তের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।</p> <p>তিনটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, হামলার পেছনে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব আছে কিনা, মার্কেট সমিতি এবং চাঁদাবাজির কোনো বিষয় আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।</p> <p>জানতে চাইলে ওয়াহিদুল হাসান জানান, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার পর তিনি ও এহতেসামুল মার্কেট থেকে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার উদ্দেশে বের হন। এ সময় নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠার জন্য বেজমেন্টে নামেন ওয়াহিদুল। এহতেসামুল মার্কেটের প্রধান ফটক দিয়ে বের হন।</p> <p>বেজমেন্ট থেকে গাড়ি নিয়ে র‍্যাম্পে উঠতেই দেখি জানিয়ে ওয়াহিদুল বলেন,‌ মার্কেটের সামনে এহতেসামুলকে দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি কোপাচ্ছে। এরই মধ্যে আমার গাড়িতেও হামলা করে তারা। জানালার গ্লাস ভেঙে আমার পায়ে দুটি আঘাত করে। তখন আমার চালক গাড়ি থেকে নেমে পালিয়ে যায়। আমিও দৌড় দিয়ে বেজমেন্টে নেমে সিঁড়ি দিয়ে মার্কেটের মধ্যে ঢুকে পড়ি।’</p> <p>ওয়াহিদুল জানান, এহতেসামুলকে রক্তাক্ত অবস্থায় সড়ক থেকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যান মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের দুই নিরাপত্তাকর্মী। তার হাঁটুর হাড় ও হাতের হাড় কেটে গেছে। শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্ষত হয়ে আছে। পায়ের শিরা কেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এহতেসামুলের বাসা জিগাতলায়।</p> <p>আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ী তৌফিক এহসান ও তার লোকজন নির্বাচন ছাড়াই গত ১৫ বছর ধরে মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারের ব্যবসায়ী মালিক সমিতি দখল করে রেখেছিল জানিয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, তৌফিক ছিলেন সভাপতি। তারা মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করতেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যবসায়ীরা কমিটির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। তখন তৌফিকসহ তার লোকজন পালিয়ে যায়। এরপর ১৩ আগস্ট নতুন করে ১৩ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলামকে। ওয়াহিদুল জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ও এহতেসামুল যুগ্ম আহ্বায়ক।<br /> ব্যবসায়ী মালিক সমিতির আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম বলেন, যারা মার্কেট সমিতি দখল করে রেখেছিল ১৫ বছর ধরে, তারা সমিতির কোটি কোটি টাকা লুট করেছে। লুটের প্রমাণ মুছে ফেলতে তারা পালানোর সময় সমিতির সব কাগজপত্র নিয়ে গেছে।</p> <p>এ ছাড়া ৫ আগস্টের পর মার্কেটের সামনে কেউ কেউ ফুটপাত দখলের চেষ্টা করে। এতে বর্তমান কমিটির নেতারা বাধা দেন। মার্কেটে খাবার পানি ও ইন্টারনেট সরবরাহ এবং পার্কিং দখল নিয়েও ওয়াহিদুল ও এহতেসামুলকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এসব কারণে তাদের ওপর হামলা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।</p>