<p>ইন্ডিয়ান পপ আইকন এবং নিজের এক আলাদা কন্ঠস্বরের জন্য জনপ্রিয় গায়িকা ঊষা উত্থুপের স্বামী জনি চাকো উত্থুপ মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। সোমবার ( ৮ জুলাই) তার মৃত্যুর খবর আসে। </p> <p>অনেকেই হয়তো জানেন না, জনি চাকো ঊষার দ্বিতীয় স্বামী। প্রথম স্বামী রামুর সঙ্গে বিবাহিত থাকা অবস্থায় ঊষার জীবনে আসেন চাকো। ঊষা তার ভালোবাসার কথা সরাসরি জানান প্রথম স্বামী রামুকে। এরপর নিজের পরিবার, প্রথম স্বামীর পরিবার, সমাজের সব বাধা উপেক্ষা করে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ঊষা-জনি চাকো। দুজনের গল্প অনেকটা সিনেমার মতোই। </p> <p>দক্ষিণী কন্যা ঊষার কলকাতার প্রতি প্রেম শুরু থেকেই ছিল গভীর। আর এই শহরই তাকে তার স্বামীর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছিল। বিকাশ কুমার ঝা’র ২০২২ সালের বই ‘দ্য কুইন অফ ইন্ডিয়ান পপ: দ্য অথরাইজড বায়োগ্রাফি অফ ঊষা উত্থুপ’ থেকে জানা যায় ঊষার জীবনে সেই প্রেমের গল্প।</p> <p>১৯৬৯ সালে কলকাতার এক নাইটক্লাবে আলাপ হয়েছিল ঊষা ও জনির। যদিও তখন ঊষা উত্থুপ ছিলেন বিবাহিত। তার প্রথম স্বামীর নাম ছিল রামু আইয়ার। সেসময় কলকাতার ওই নাইটক্লাবে গান গাওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিলেন ঊষা। তার সঙ্গে কলকাতায় এসেছিলেন প্রথম স্বামী রামু আইয়ার। তিনিও যেতেন স্ত্রীর সঙ্গে। এদিকে সেই নাইটক্লাবেই ‘হার্প অ্যালবার্টের আ টেস্ট অফ হানি’ গানটি গাওয়ার সময়ই ঊষা প্রথমবার কাছের এক টেবিলে জনিকে দেখেছিলেন।</p> <figure class="image"><img alt="4" height="281" src="https://images.hindustantimes.com/img/2024/07/09/550x309/Usha-Uthup-with-her-family_1720491305471_1720491330881.jpg" width="500" /> <figcaption><sub><em>স্বামী জনি চাকো ও পরিবারের সঙ্গে ঊষা উত্থুপ</em></sub></figcaption> </figure> <p>সেদিনের সেই বৃষ্টিভেজা সন্ধেয় জনি ও রামু দুজনেই কাছাকাছি টেবিলে বসে ঊষার গান শুনছিলেন। তারই মাঝে আলাপ হয় রামু ও জনির। ঊষা অবশ্য সেদিন খুশি হয়েছিলেন, এটা ভেবে যে স্বামী রামু একজন সঙ্গী পেয়েছেন, একা একা না বসে যাঁর সঙ্গে তিনি এবার সময় কাটাতে পারবেন। এর পরদিন ঊষার স্বামী রামুকে সেই বারে আমন্ত্রণ জানান জনি। ঊষা অবশ্য শুনে খুশিই হয়েছিলেন। এরপর ঊষা যখন গান গাইছেন তখন হঠাৎ দেখলেন টেবিল থেকে রামু উধাও, বসে রয়েছেন শুধু জনি।</p> <p>শোয়ের পরে, জনি ঊষার কাছে গিয়ে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। ঊষাও রাজি হয়েছিলেন, যদিও সংক্ষিপ্ত যাত্রায় দুজন একে অপরের সাথে কথা বলেননি। এরপর বাড়ি পৌঁছে ঊষা যখন কড়া নাড়লেন তখন দরজা খোলেন রামু। যদিও সেসময় রামু ঊষার পাশে জনিকে দেখে বিন্দুমাত্র খুশি হননি। রামু বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে জনি সাহেব! এবার আপনি যেতে পারেন। ঊষা রামুর অস্বস্তি বুঝতে পারেননি। যদিও ঊষা তখনও বোঝেননি তার স্বামীর কী হয়েছে! রামু আইয়ার এমনিতে খুব শান্ত, তবে সেদিন কেন রেগে জনির মুখের উপর তিনি দরজা বন্ধ করে দিলেন তা ঊষা বুঝতে পারেননি।</p> <p>ঊষা পরে স্বামীর (রামু) অস্থিরতা দেখে জিগ্গেস করেন তার কী হয়েছে? এরপরই রাগে চিৎকার করতে শুরু করেন রামু। বলেন, ‘আজ বিকেলে জনি উথুপ আমাকে কি বলেছেন জানো? জনি বলেছেন, ‘আমি ঊষার অনুভূতির কথা জনি না, তবে আমি আপনার স্ত্রীর প্রেমে পড়েছি।’ কথাটা বলতে বলতে রামু রাগে কাঁপছিলেন। ঊষা তখন বলেন, ’ঠিক আছে, তিনি আপনাকে একথা বলেছেন, তাতে কী হয়েছে? ও আমাকে কিছু বলেনি।’ রামু ফের প্রশ্ন করেন, ‘কিন্তু জনি যা বলল, এটা কি সত্যি? তার জন্য কি তোমারও একই অনুভূতি আছে?’ রামুর কণ্ঠে বিরক্তি। এরপরই ঊষা সব ভয় সরিয়ে জবাব দেন, ‘হ্যাঁ!’</p> <p>তবে রামু আইয়ার ঊষার এই স্বীকারোক্তি ভালোভাবে নেননি। রেগে গিয়ে তিনি দেয়ালে একটা প্লেট ছুঁড়ে মারেন। ঊষা সেদিন সারারাত কেঁদেছিলেন। পরে ধীরে ধীরে রামুর সঙ্গে ঊষার দূরত্ব বাড়তে থাকে এবং এমনকি রামু তার সঙ্গে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এদিকে নিয়মিত দেখা হতে থাকে ঊষা ও জনির। ঊষা তখন ভাবেন যে তার পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবন হতাশায় পূর্ণ। তাই তিনি ধীরে ধীরে রামুর সঙ্গে বিবাহ-বন্ধন চুকিয়ে দিয়ে জনি চাকোকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। এরপর দীর্ঘ ৫০ বছর সুখী দাম্পত্য জীবন কাটিয়েছেন দুজন।</p> <p>অবশেষে সেই বন্ধন ছিন্ন হলো জনির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। সোমবার (৮ জুলাই) না ফেরার দেশে পাড়ি জমান জনি। ঊষা উত্থুপের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে জনি কলকাতাতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। জানা গেছে, তিনি তার বাড়িতে টিভি দেখার সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তখন ঊষা তার অফিসে ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।</p>