<p>নাটকের নিয়মিত অভিনয়শিল্পী। শুটিংয়ের জন্য শিডিউল দেওয়া ছিল। সেটা পিছিয়ে তাসনুভা তিশা ছুটলেন বন্যাকবলিত নোয়াখালীতে। প্রান্তিক পর্যায়ে গিয়ে অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করেছেন এ অভিনেত্রী। শনিবার ঢাকায় ফিরেই যোগ দিয়েছেন শুটিংয়ে। মানবিক তিশার ত্রাণ-সফরের গল্প শুনেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p><strong>কোন এলাকায় গিয়েছিলেন আপনারা? </strong><br /> উদ্যোগটা ছিল আরশের (অভিনেতা আরশ খান)। আমরা ২২ আগস্ট সকালে গিয়েছিলাম নোয়াখালীতে। সেখানকার মাইজদী থেকে একেবারে প্রত্যন্ত এলাকায় গিয়ে সহযোগিতা করেছি। ওসব এলাকায় কেউ যায়নি। মাইজদী থেকে পিকআপে, হেঁটে, নৌকায় যেতে প্রায় তিন-চার ঘণ্টার মতো লেগেছিল। সঙ্গে দক্ষ মাঝিও ছিল না, টিমের স্বেচ্ছাসেবীরাই নৌকা চালিয়েছে। গতকাল (২৪ আগস্ট) ফিরেছি ঢাকায়।</p> <p><strong>সেখানকার পরিস্থিতি কেমন দেখলেন?</strong><br /> আমাদের বাড়ি শরীয়তপুর। কখনো বন্যা দেখিনি, শুধু মায়ের মুখে শুনেছি। এবার যা দেখেছি, তা নিয়ে আসলে বলার কিছু নেই। বিশেষ করে বাচ্চাদের দেখে খারাপ লেগেছে। আমার নিজেরও বাচ্চা আছে। খাবারের জন্য অনেক রাতেও পানি ডিঙিয়ে ছুটে এসেছিল বাচ্চারা। খুব খারাপ লেগেছিল।</p> <p><strong>সশরীরে যাওয়ার ভাবনা মাথায় এসেছিল কিভাবে? ঢাকায় থেকে পরোক্ষভাবেও তো সহযোগিতা করতে পারতেন...</strong><br /> প্রথমত, কেউ আমাকে নিতে চায়নি। অনেক অনুরোধ করে গিয়েছিলাম। ২২ আগস্ট ভোরে যখন ওরা রওনা দিচ্ছিল, তখন একপ্রকার জোর করেই গিয়েছি। আমি মেয়ে, তার ওপর সাঁতার জানি না—এসব কারণে নিতে চাচ্ছিল না। ২০২২-এর বন্যায় আমি কোরবানি না দিয়ে সে টাকা সহায়তা দিয়েছিলাম। এবারের বন্যা অনেক ভয়াবহ। একটা ব্যাপার হয়তো খেয়াল করেছেন, আমি কোনো ছবি তুলিনি, ভিডিও করিনি। উদ্দেশ্য ছিল সহযোগিতা করা। আমি ছোট মানুষ, সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। এটা না করলে শান্তিতে ঘুমাতে পারতাম না, শান্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারতাম না।</p> <p><strong>ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে প্রচুর ত্রাণ সহায়তা যাচ্ছে। আবার বন্যার্ত এলাকা থেকে এমন খবরও শোনা যাচ্ছে, অনেকে ত্রাণ পাচ্ছেন না। একটু অব্যবস্থাপনা হচ্ছে কি? </strong><br /> অনেক। একটা উদাহরণ দিই, একজন আমাকে জানালেন, ফেনীতে একটা ভবনে ১৫-২০ জন আটকে আছে। আমি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। ওখানে সামিরা খান মাহির (অভিনত্রী) টিম কাজ করছে। মাহিকে কল দিয়ে বিষয়টা জানাই। কিন্তু ওরা সেখানে গিয়ে দেখে কেউ নেই! যোগাযোগ ও ব্যবস্থাপনায় এ রকম কিছু অসামঞ্জস্যতা আছে। আবার অনেকে ভুলভাল জায়গায় অনুদান দিচ্ছে। এই সংকটকালে অনেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা মাত্র কয়েক ঘণ্টার পরিকল্পনায় গিয়েছিলাম। ওখানে থাকা-খাওয়ার ব্যয়ও নিজেরাই বহন করেছি। এমনকি আমরাও মুড়ি-গুড় খেয়ে থেকেছি। মাঠ পর্যায়ে গিয়ে বুঝেছি, আরো কিছু প্রস্তুতি প্রয়োজন ছিল। যেমন হ্যান্ডমাইক জরুরি, মুখে বলে বেশি দূর আওয়াজ পৌঁছানো যায় না। নৌকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না।</p> <p><strong>শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন আপনি। সে সময় আপনার পরিবারও বিপদে ছিল। ঘটনাটা জানতে চাই...</strong><br /> ১৯ জুলাই বনশ্রীতে অনেক মানুষ হতাহত হয়েছিল। আহত কিছু মানুষকে রিকশায় তুলে দিয়েছিল আমার ভাই। সেটার ফুটেজ দেখে তারা ভেবেছিল আমার ভাইও আন্দোলনকারী। সেদিন রাত সোয়া ১২টার দিকে আমাদের বাসায় চারজন ব্যক্তি আসে, একজনের পরনে ইউনিফরম, বাকি তিনজন সিভিল পোশাকে। আমার ভাইকে নিয়ে যায়। পুরো রাত আমার বাবা থানায় ছিলেন। পরে ভাইয়ের নামে অনেক বানানো অভিযোগ দিয়ে চার্জশিট তৈরি করেছিল। রিমান্ডেও নিতে চেয়েছিল। তখন আব্বু তাদের ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কোনোমতে রিমান্ডে নেওয়া থেকে বাঁচিয়েছিলেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর রাতে আমার ভাই বাসায় ফেরে। পুরো পরিবার আতঙ্কে ছিল। এ কারণে আমি রাজপথে গিয়ে সম্পৃক্ত হতে পারিনি।</p> <p><strong>আন্দোলন কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ—শিল্পীরা এখন সম্মিলিতভাবে সাধারণ মানুষের পাশে এগিয়ে আসছেন। এটাকে কিভাবে দেখছেন?</strong><br /> আগে মানুষ। মানব ধর্মের চেয়ে বড় কিছু নেই। ফেসবুকে পোস্ট দিলেও আমার একটা কোট থাকে, বি কাইন্ড। শিল্পীদের মন নরম, তাঁরা আবেগপ্রবণ। আগে হয়তো এ রকম সম্মিলিত অংশগ্রহণ দেখা যায়নি। শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিয়েছে, ছোট বাচ্চারা রাস্তায় নেমে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছে। যার মধ্যে ন্যূনতম মানবিকতাবোধ আছে, তার পক্ষে আর বসে থাকা সম্ভব ছিল না। সেই আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে এই বন্যায়ও। এক হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ওখান থেকেই এসেছে।</p> <p><strong>অভিনয় প্রসঙ্গে আসি। কী নিয়ে ব্যস্ত আজকাল?    </strong><br /> শনিবার ঢাকায় ফিরেই একটি নাটকের শুটিংয়ে যোগ দিয়েছি। নাম চূড়ান্ত হয়নি। বাপ্পী খানের পরিচালনায় এতে আমার সহশিল্পী আরশ খান। এখন শুধু নাটকেই কাজ করছি। ওটিটির অনেক প্রস্তাব আসে। ভালো গল্প হলে কাজ করবো।</p> <p><strong>নিজেকে শুধু নাটকেই সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছেন? </strong><br /> তা নয়, সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ। ওটিটিতে বাজেট-অ্যারেঞ্জমেন্ট বেশি থাকে। নাটকে সীমাবদ্ধতা আছে বটে। তবে অভিনয়ের জায়গায় আমি ছাড় দিই না। চরিত্র অনুযায়ী শতভাগ পারফরম্যান্স দিই। তা ছাড়া নাটক করে আমার সংসার চলে, এটা আমার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জায়গা।</p> <p><strong>আরশ খানের সঙ্গে বেশ দেখা যাচ্ছে আপনাকে। আপনাদের অনস্ক্রিন আর অফস্ক্রিন কেমিস্ট্রি কেমন?</strong><br /> (হাসতে হাসতে) মজার প্রশ্ন। পর্দায় আমাদের যেমন দেখা যায়, বাস্তবে ঠিক তার উল্টো। সারাক্ষণ আমাদের ঝগড়া লেগে থাকে। পর্দায় হয়তো সেটা বোঝা যায় না। আরশ পারফরমার হিসেবে দুর্দান্ত। মানুষ হিসেবে অবশ্যই ভালো। কিন্তু তার সঙ্গে বনিবনা কম হয়। যে যার অপছন্দের বিষয়গুলো দূরে রেখে কাজ করি। অনেক ঝগড়া হয় সেটে। আমি তো ঝগড়া করতে পারি না, কান্না করে ফেলি। সেই কান্না থামিয়ে আবার রোমান্টিক দৃশ্যের শুটিং করি! এ রকম আরকি বিষয়টা।</p>