<p>আজ জীবনের ৫৫ বছর পূর্ণ করলেন সংগীতশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। বিশেষ এই দিনের প্রথম প্রহরে একমাত্র কন্যা দেশ ছেড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে। বিষাদে ভরা মন নিয়ে গান, রাজনীতি ও অন্যান্য বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন সুদীপ কুমার দীপের সঙ্গে।</p> <p><strong>জন্মদিনের শুভেচ্ছা। বিশেষ এই দিন নিয়ে নিশ্চয়ই দারুণ কিছু পরিকল্পনা আছে?</strong><br /> ধন্যবাদ। তবে এবারের জন্মদিনটা আমার কাছে খুব বেদনার। একমাত্র মেয়ে ফারিয়া ইসলাম খান সপরিবারে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছে গতকাল (মঙ্গলবার) দিবাগত রাত ২টার ফ্লাইটে। দশ দিন ধরে ওর সঙ্গে ওর বাসাতেই ছিলাম। মা-মেয়ে খুব কেঁদেছি। নাতি-নাতনিকে আর চাইলেও দেখতে পাব না। এটা অনেক কষ্টের। জীবনে প্রথমবার এমন কোনো জন্মদিন আমার জীবনে এলো। আমার একটা অনলাইন স্কুল আছে। প্রতি বছর সেখানখার ছাত্ররা আমার জন্য ফুল ও কেক নিয়ে আসে। এবার আগে থেকেই তাদের বারণ করে দিয়েছি। কারো সঙ্গে দেখা করার মতো মানসিক অবস্থা নেই। আসলে প্রিয়জন দূরে গেলে কোনো কিছুই ভালো লাগে না।</p> <p><strong>বাংলাদেশের তুমুল জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী আপনি। গত এক দশক গানে অনেকটাই অনিয়মিত ছিলেন। এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে?</strong><br /> কারণ তো আছেই। ২০১৪ সাল থেকে ধীরে ধীরে আমার ব্যস্ততা কমতে শুরু করল। ২০১৮ সাল থেকে আমি অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ হয়ে গেলাম। কোনো স্টেজ প্রগ্রামে ডাকা হতো না আমাকে। প্লেব্যাকের প্রস্তাবও পেতাম না। নির্মাতা-প্রযোজকরা বলতেন, আমাকে দিয়ে গাওয়ালে নাকি সেন্সর ছাড়পত্র পেতে সমস্যা হবে! বেতার-টেলিভিশনগুলোও কালো তালিকাভুক্ত করল আমাকে। সত্যি বলতে, কেন আমি কাজ পাচ্ছি না, কেউ কোনো দিন কারণটা আমাকে বলেননি। এমনও হয়েছে, আগের দিন পর্যন্ত স্টেজ প্রগ্রাম চূড়ান্ত, আমি প্রস্তুতি নিয়েছি। হঠাৎ রাতে ফোন এলো আয়োজকদের কাছ থেকে। বলা হলো, যিনি প্রধান অতিথি তিনি নাকি আমার ব্যাপারে ‘না’ করেছেন।</p> <p><strong>রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেই শিল্পীদের এভাবে কালো তালিকাভুক্ত করার রেওয়াজ এখানে। এমনটা কি হওয়া উচিত?</strong><br /> একদম না। কত রাত যে নীরবে কেঁদেছি! মাইক্রোফোন আমার কাছে অক্সিজেনের মতো। সেই অক্সিজেন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, জীবিত অবস্থায় আমাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। চার দশক ধরে গান করছি। এমন খুব কম দিনই গেছে, যেদিন গান রেকর্ডিং বা স্টেজ শো করিনি। অথচ সেই আমি গান থেকেই মাইনাস হয়ে গেলাম। আমার মতো আরো যাঁদের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে, এক কথায় অন্যায় হয়েছে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে, নাগরিক হিসেবে একেকজন একেকটা দলের আদর্শকে পছন্দ করবে, সমর্থন করবে এটাই স্বাভাবিক। এতে অন্যায়টা কোথায়? অথচ সেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটা ধ্বংস করে উল্টো শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায়, তারা নিশ্চয়ই সব ক্ষেত্রে সংস্কার আনবে। আমাদের এই শিল্প-সংস্কৃতির দিকটাও তারা মাথায় রাখবে। ভবিষ্যতে আর কোনো শিল্পী যেন কালো তালিকাভুক্ত না হন।</p> <p><strong>নতুন করে গান নিয়ে কিছু ভাবছেন?</strong><br /> ১৬ আগস্ট থেকে বেতারে আবার আমার গান বাজতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকেও ফোন দিয়েছিলেন গান রেকর্ডের জন্য। নতুন চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকের প্রস্তাবও পেয়েছি। তবে ফারিয়া (মেয়ে) দেশের বাইরে চলে যাবে বলে অন্য কিছু নিয়ে এখন ভাবতে চাইনি। আশা করছি, খুব শিগগির আবার গানের সব মাধ্যমেই ফিরব। চলচ্চিত্র, রেডিও, টেলিভিশন ও অ্যালবামের গানে আবার আমাকে নিয়মিত পাওয়া যাবে।</p> <p><strong>সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই প্রজন্মের একটা বড় অংশ আপনার অনুসারী। অনেকে আপনাকে ‘চাঁদ মা’ বলেও ডাকে। তাদের জন্য আজকের দিনে আপনার বার্তা কী?</strong><br /> তাদের বলব, কেউ প্রতিশোধপরায়ণ হইয়ো না। প্রকৃতিই সঠিক বিচারক। সে-ই একদিন না একদিন বিচার করবে। তোমাদের কাছে আমি মিথ্যাচারমুক্ত বাংলাদেশ চাই। তোমরা আগামীর ভবিষ্যৎ। তোমাদের হাতেই জন্ম নেবে আমাদের দেখা স্বপ্নের বাংলাদেশ।</p> <p><strong>২০১৮ সালে বিএনপির হয়ে নির্বাচন করেছিলেন। পরে আবার রাজনীতিবিমুখও হয়েছিলেন। এবার কি রাজনীতিতে ফিরবেন?</strong><br /> জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়া। আমাকে গ্রামের বাড়ি যেতে দেওয়া হয়নি। দাদা-নানার কবর জিয়ারত করতে দেওয়া হয়নি। প্রশাসনের দ্বারস্থ হলে আমাকে জানানো হলো, নিরাপত্তার জন্যই নাকি আমাকে গ্রামে যেতে দেওয়া হচ্ছে না! অথচ আমার প্রচার-প্রচারণায় যাঁরা কাজ করেছিলেন, তাঁরা জানিয়েছিলেন ভিন্ন কথা। সেই নির্বাচনে আমার পোস্টার ছেঁড়া হয়েছে, লাগাতে দেওয়া হয়নি ব্যানার। প্রচারণার সময় কর্মীর কাছ থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে বেধড়ক মেরেছে। এসব এখনো মনে হলে আঁতকে উঠি। বুদ্ধি হওয়ার পর এমন নির্বাচন আমি দেখিনি। ভোটের আগের দিন সন্ধ্যায় খবর পেলাম, ভোট দেওয়া শেষ। ভোট তো পরের দিন, আগের দিন সন্ধ্যায় সেটা কারা সেরে ফেলল?</p> <p>৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে এলাকার মানুষ ফোন করছেন। আমাকে তাঁরা তাগিদ দিচ্ছেন এলাকায় যাওয়ার। আমি তাঁদের সম্মান দিয়েই বলেছি, আমি যাব। তবে তার আগে আমাকে কথা দিতে হবে, কোনো হানাহানি, হিংসা-বিদ্বেষের সঙ্গে জড়ানো যাবে না। তাঁরা আমার কথা মেনে নিয়েছেন। এখন দল (বিএনপি) থেকে যদি নির্দেশনা পাই তাহলে গণসংযোগ শুরু করব। অবশ্য ভোটের এখনো দেরি আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনুক। ভোটের সুস্থ পরিবেশ ফিরে আসুক। এলাকার মানুষ এবং দল যদি চায় আমি অবশ্যই রাজনীতিতে ফিরব।</p>