<p>আজ মধ্যরাতে হইচইয়ে মুক্তি পাবে অনম বিশ্বাসের সিরিজ ‘রঙিলা কিতাব’। এতে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরীমনি। কিঙ্কর আহসানের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত সিরিজটির আদ্যোপান্ত জানাচ্ছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p>কিঙ্কর আহসানের দ্বিতীয় উপন্যাস ‘রঙিলা কিতাব’। প্রকাশিত হয় ২০১৫ সালে। তবে ওই সময় খুব একটা আলোড়ন তৈরি করতে পারেনি। পরে লেখকের ‘মধ্যবিত্ত’, ‘রাজতন্ত্র’, ‘বিবিয়ানা’ উপন্যাসগুলো জনপ্রিয় হওয়ায় ‘রঙিলা কিতাব’-এর আবেদনও বাড়ে। বছর দুই-তিন আগে উপন্যাসটি হাতে নেন অনম বিশ্বাস। যিনি নিজেও লেখেন ভালো, নির্মাণেও অনবদ্য। ‘আয়নাবাজি’র চিত্রনাট্য কিংবা ‘দেবী’র মতো চলচ্চিত্র নির্মাণ করে সেটা বুঝিয়েছেন। ‘রঙিলা কিতাব’-এর কয়েকটি অধ্যায় পড়ার পরই তাঁর মাথায় উঁকি দেয়, গল্পটাকে পর্দায় আনলে কেমন হয়! বছরখানেক আগে আসে ঘোষণা।</p> <p>ফেসবুকে অনম বিশ্বাসের সঙ্গে একটি ছবি পোস্ট করে পরীমনি জানালেন, প্রথমবারের মতো ওয়েব সিরিজে অভিনয় করতে চলেছেন। নাম ‘রঙিলা কিতাব’। ব্যস, এর পর থেকে দর্শকের অপেক্ষা, কবে মুক্তি পাবে সিরিজটি। সেই অপেক্ষাও ফুরাল।</p> <p>উপন্যাস থেকে সিরিজ নির্মাণের নেপথ্যের কারণ জানিয়ে অনম বলেন, “মূল কারণ উপন্যাসটির উপাদানগুলো। গ্যাংস্টার থ্রিলার কনটেন্ট দেখতে আমার ভালো লাগে। সেই জায়গা থেকেই মনে হতো, ঠিকঠাক গল্প পেলে আমিও এমন কনটেন্ট বানাব। ‘রঙিলা কিতাব’-এর কয়েকটা চ্যাপ্টার পড়ার পরই মনে হয়েছিল, গল্পটা পর্দায় আনতে পারলে দারুণ হবে। পরে কিঙ্কর আহসানের সঙ্গে আলাপ হয় এবং চিত্রনাট্যের কাজ গুছিয়ে ধাপে ধাপে কাজটা সম্পন্ন করি।”</p> <p>কিন্তু যে গল্প অনেকেই পড়েছে, গল্পের চরিত্র, টুইস্ট সবই জানা—সেটা আবার পর্দায় দেখবে কেন? নির্মাতার ভাষ্য, ‘নির্মাণের আগেই ভেবে রেখেছি, সিরিজে গ্যাংস্টার গল্পের চেয়ে প্রদীপ ও সুপ্তির [গল্পের প্রধান চরিত্র] প্রেমের বিষয়টাকে প্রাধান্য দেব। মূল উপন্যাসে এটা একটা সাব প্লট, তবে সিরিজে এটাই মূল প্লট। সেই জায়গা থেকে প্রদীপ ও সুপ্তির রসায়ন আরো বিস্তারিত বর্ণনা করেছি। বিশেষ করে সুপ্তির চরিত্র নিজেদের মতো করে উপস্থাপন করেছি, যেটা উপন্যাস থেকে কিছুটা আলাদা। বইয়ের পাতা থেকে চরিত্রগুলো কিভাবে রক্ত-মাংসের মানুষে রূপ নিয়েছে, সেটা দেখার জন্য হলেও সিরিজটি দেখতে পারে দর্শক। তা ছাড়া প্রিয় বই থেকে কোনো কনটেন্ট নির্মিত হলে সেটা দেখার আলাদা আনন্দ আছে।’ </p> <p>২৯ অক্টোবর ‘রঙিলা কিতাব’-এর ট্রেলার প্রকাশিত হয়। সেখানে সুপ্তি চরিত্রে পরীমনিকে দেখে অবাক হয়েছে অনেকে। এমন চরিত্রে, পরিণত অভিনয়ে এর আগে তাঁকে দেখা যায়নি। সুতরাং এটুকু বলাই যায়, পরীকে কাস্ট করার সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তেই নিয়েছেন নির্মাতা। তবু অনম বিশ্বাসের মুখেই এর ব্যাখ্যা শোনা যাক, ‘আমার মনে হয়, পরীমনি নিজের ইচ্ছায় চলে। সুপ্তি এমন একটা চরিত্র, যাকে বাইরের দিক থেকে নরম মনের মানুষ মনে হলেও ভেতরে মানসিক শক্তি প্রবল। মনে হয়েছে, ব্যক্তি পরীমনির ভেতরেও সেটা আছে এবং স্বাভাবিকভাবে তা স্ক্রিনেও ফুটে উঠবে। এ জন্যই তাকে কাস্ট করা। আরেকটা ব্যাপার হলো, গল্পে সুপ্তিকে অন্তঃসত্ত্বারূপে দেখা যায়। তো এমন একজন অভিনেত্রীকে নিতে চেয়েছি, যে নিজে মাতৃত্বের অভিজ্ঞতা পেয়েছে। তাহলে খুব ন্যাচারালি চরিত্রের বিষয়গুলো তার মধ্যে চলে আসবে। সিরিজটির কাজ শুরুর কিছুদিন আগেই মা হয়েছে পরীমনি। তো এই দুটি দিক বিবেচনা করে পরীমনিকে নিয়েছি। আর পরীমনি যেহেতু চলচ্চিত্রের গ্লামারাস নায়িকা, তাকে ওয়েব সিরিজে এ রকম ক্যারেক্টার আর্টিস্ট হিসেবে দেখাও দর্শকের জন্য ইন্টারেস্টিং। আগেও সে গল্প-চরিত্রনির্ভর কাজ করেছে। তবে আমার মনে হয়, পরীমনির এতটা ন্যাচারাল অ্যাক্টিং এর আগে দেখেনি দর্শক।’</p> <p>সিরিজের নায়ক বা প্রধান চরিত্র—প্রদীপ। এ চরিত্রে আছেন মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। বেশ কিছুদিন ধরে তিনি আড়ালে! ট্রেলার প্রকাশের অনুষ্ঠানেও তাঁর দর্শন মেলেনি। অভিনেতা জানালেন, তিনি রয়েছেন শুটিংয়ে, ঢাকা থেকে অনেকটা দূরে। যেখানে ইন্টারনেটের সমস্যা তো বটে, মোবাইল নেটওয়ার্কও ঝিরঝির। সেখান থেকেই ইমরান নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন এভাবে, ‘অভিজ্ঞতা খুবই ভালো। অনম বিশ্বাস একজন শান্ত, বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ। তাঁর লেখা, চিত্রনাট্য খুব সুন্দর। শুটিংয়ে দৃশ্যগুলো সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেন। এ ছাড়া পুরো টিম এত সুন্দর আর গোছানো। ফ্যান্টাস্টিক একটা জার্নি। আমার সহশিল্পী পরীমনি, সে-ও খুবই সুন্দর, ন্যাচারাল। সিরিজটির জন্য আমাকে অ্যাকশন প্রশিক্ষণ দিয়েছেন সাগর ভাই, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। সিনেমাটোগ্রাফার তানভীর হাসানও ভীষণ ভালো কাজ করেছেন।’</p> <p>২০০৯ সালে ‘সুপার হিরো সুপার হিরোইন’ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় রানারআপ হয়ে শোবিজে আসেন মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। আয়োজনের নামানুসারে সিনেমার নায়ক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইমরান হাঁটলেন ভিন্ন পথে। বলেন, ‘আমার কাছে গল্প ও চরিত্রই গুরুত্বপূর্ণ। সুপার হিরো সুপার হিরোইন প্রতিযোগিতার জন্য নাচ, ফাইট সবই করতে হয়েছিল। ওখান থেকে বের হওয়ার পর বেশ কয়েকটি ছবি নিয়ে কথা হয়। কিন্তু সেগুলোর গল্প গতানুগতিক, নতুনত্ব না থাকায় আমি করিনি। আর নায়ক ব্যাপারটা নিয়ে আমার ভিন্ন ভাবনা। দেখুন, প্রত্যেক মানুষ তার জীবনের নায়ক। এখন যদি একজন রিকশাচালকের জীবন নিয়ে গল্প হয়, সেটার নায়ক কিন্তু ওই রিকশাচালকই। ফলে নায়কের নির্দিষ্ট সংজ্ঞা বলা যাবে না। আমি মনে করি, সব অভিনেতা চাইলে নায়ক হতে পারবেন, কিন্তু সব নায়ক চাইলেই অভিনেতা হতে পারবেন না।’</p> <p>‘রঙিলা কিতাব’-এ ফাইট করতে হয়েছে ইমরানকে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য করা কতটা চ্যালেঞ্জিং ছিল? অভিনেতার জবাব, ‘যদিও আমার আগে থেকেই মারামারির চর্চা ছিল। তবে বেশির ভাগ শুটিংয়ের মতো এখানেও আমি আহত হয়েছি। একটি দৃশ্যে আমি গুলিবিদ্ধ হই। আমাদের দেশে এখনো গুলির দৃশ্যের যে অ্যারেঞ্জমেন্ট, তা খুবই বাজে। গুলিটা আমার বাম কানের কাছেই লেগেছিল, কিন্তু বিকট আওয়াজে আমার কানে তালা পড়ে গেছে! এখনো সেটার ব্যথা রয়ে গেছে। ডাক্তার দেখিয়েছি, আরো কিছুদিন লাগবে ঠিক হতে।’</p> <p>অভিনেতা হিসেবে ইমরান নিজেকে একাধিকবার প্রমাণ করেছেন, প্রশংসাও কুড়িয়েছেন দেদার। আবার দর্শক হিসেবেও সক্রিয়। তাই সহশিল্পী পরীমনির প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, “পরীমনির কাজ আগেও দেখেছি। সেই ‘রক্ত’ থেকে ‘স্বপ্নজাল’, ‘গুণিন’সহ বেশ কিছু কাজ দেখেছি। বরাবরই তাঁকে প্রতিভাবান মনে হয়েছে। তাঁকে দিয়ে ভালো কিছু করানো সম্ভব। ‘রঙিলা কিতাব’-এর শুটিংয়ের সময় যেসব দৃশ্যে তিনি ছিলেন না, সেখানে তাঁর অভাব অনুভব করেছি। কারণ তিনি এত সুন্দর অভিনয় করেছেন, সেটার বিপরীতে আমার রি-অ্যাকশন দিতে সুবিধা হতো।” </p> <p>২০২২-এর আগস্টে মা হন পরীমনি। এর মাস তিনেক পরই ‘রঙিলা কিতাব’-এর প্রস্তাব পান তিনি। সিরিজটিতে যুক্ত হওয়া এবং পর্দার সুপ্তি হয়ে ওঠার জার্নি নিয়ে পরী বলেন, ‘চরিত্রটা নিয়ে যখন কথা হয়, তখন মনে হয়েছিল, সুপ্তি দেখতে আসলে আমার মতোই। কিন্তু পুণ্যর [অভিনেত্রীর ছেলে] কারণে আমি তখন শুটিংয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। এ জন্য নির্মাতা ও হইচই টিম প্রায় এক বছর অপেক্ষা করেছে। কারণ নির্মাতার মাথায় ঢুকে গেছে, আমাকেই করবেন পর্দার সুপ্তি। তাঁদের আগ্রহ-অপেক্ষা দেখে আমি ভরসা করেছি। মা হওয়ার পর একটু ওজন কমিয়েছি, তবে চরিত্রের জন্য পুনরায় ওজন বাড়াতে হয়েছিল। চরিত্রটা আমি নিজের মধ্যে ধারণ করেছিলাম।’</p>