<p><em>অভিনয় ও উপস্থাপনা—দুই মাধ্যমে দ্যুতি ছড়িয়েছেন মৌটুসী বিশ্বাস। একসময় পর্দায় নিয়মিত ছিলেন। অনেক দিন হলো তাঁকে অভিনয়ে দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। গত সপ্তাহে ব্র্যাকের একটি প্রচারণামূলক ভিডিওতে দেখা মিলল অভিনেত্রীর।</em></p> <p> </p> <p><strong>শুনলাম অভিনয় ছেড়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন?</strong></p> <p>হ্যাঁ, ব্র্যাকের একটি ট্যুরিজম প্রজেক্টে কনসালটেন্ট হিসেবে কাজ করছি এক বছর ধরে। প্রজেক্টের নাম অতিথি। বাংলাদেশে ভ্রমণ বলতে আমরা বুঝি, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত দেখে আসা, সুন্দরবন আর সিলেটের চা বাগান ঘুরে আসা। সেদিক থেকে রাজশাহী একেবারে উপেক্ষিত। ‘অতিথি’র মূল উদ্যোক্তা ব্র্যাকের আসিফ সালেহ ভাই একদিন ডেকে আমাকে এ প্রজেক্টে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেন। বিস্তারিত শুনে খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। ভ্রমণ নিয়ে এর আগে ক্যামেরার সামনে কাজ করেছি, পেছনে কাজের সুযোগ হয়নি। এখানে অনেক গবেষণা, নতুন নতুন বিষয় জানার সুযোগ আছে। তাই যুক্ত হওয়া।</p> <p> </p> <p><strong>‘অতিথি’তে আপনারা আসলে কী করছেন?</strong></p> <p>রাজশাহীতে ব্র্যাক লার্নিং সেন্টার বা বিএলসিতে ‘অতিথি’র থাকার জায়গা আছে। সেখান থেকে ভ্রমণপিপাসুদের আমরা মিউজিয়াম, বিশ্ববিদ্যালয়, রাজবাড়িতে যেমন নিয়ে যাচ্ছি, তেমনি সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর কাছেও নিয়ে যাচ্ছি। প্লাস্টিকের কারণে মৃিশল্প হুমকির মুখে।সেটাকে মানুষের সামনে তুলে ধরছি। রাজশাহীর আঞ্চলিক, ঐতিহ্যবাহী খাবারের ব্যবস্থা রাখছি। অতিথিরা শুধু রাজশাহী শহরে এসে পৌঁছাবেন, সেখান থেকে আমাদের টিম তাঁদের রিসিভ করবেন এবং থাকা-খাওয়া, প্রফেশনাল গাইড দিয়ে পুরো রাজশাহী ঘুরে দেখাবে। গাইডের জন্য আমরা স্থানীয় শিক্ষার্থীদের পার্ট-টাইম চাকরির ব্যবস্থা করেছি। রাজশাহী দিয়ে এই প্রজেক্ট শুরু হলো। এই বিভাগের সব জেলা কাভারের পর অন্যান্য বিভাগেও যাব।</p> <p> </p> <p><strong>‘অতিথি’র কনসালট্যান্সি ছাড়া আর কিছু করছেন?</strong></p> <p>১০ মাস আগে বাবাকে হারিয়েছি। তিনি শিক্ষক ছিলেন। অবসর গ্রহণের পর গ্রামে [খুলনা] ফিরে গিয়ে কৃষিকাজে যুক্ত হয়েছিলেন। তিনি চলে যাওয়ার পর সে দায়িত্ব আমি নিয়েছি। বলতে পারেন, তাঁর লেগেসি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। এর মাঝেই আমি বাবাকে খুঁজে পাই। বাবা চাইতেন, আমি চাকরি করি। ব্র্যাকের সঙ্গে কাজটি শুরুর পর বাবাকে সেভাবে বলিনি। ভেবেছিলাম, ঠিকঠাক গুছিয়ে নিয়ে পরে জানাব। তার আগেই বাবা চলে গেলেন। এত বড় একটা প্রজেক্ট করলাম, বিশাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হলো, সেটা যদি বাবা দেখতেন, কী যে খুশি হতেন! বাবা যখন চাইলেন, তখন চাকরি করলাম না। যখন করলাম, বাবা দেখতে পারলেন না।</p> <p> </p> <p><strong>অভিনয় প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন! সিনিয়রদের অনেকে তো এই ওটিটির সময়ে নতুনভাবে জ্বলে উঠছেন...</strong></p> <p>আমি তো সব সময় এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করি। অভিনয়শিল্পী হিসেবে যদি নতুন কিছুর সঙ্গে যুক্ত হতে না পারি, তাহলে কী লাভ! গতানুগতিক কাজের অনেক সুযোগ ছিল, আমি কখনো সেই সহজ রাস্তায় হাঁটিনি। যে কাজগুলো আসে, হয় গতানুগতিক, না হয় আমার কাছে আসার পর কাজটি আর চূড়ান্ত হয় না। এ রকম কয়েকবার ঘটার পর বোঝার চেষ্টা করেছি, ওটিটিতে আসলে কী চায়! বুঝলাম, কোন কনটেন্ট কাকে দিয়ে বিক্রি করানো যাবে! নাসির উদ্দিন খান অভিনয় আগে থেকেই করতেন। তবে ওটিটির সুবাদে তিনি জ্বলে উঠেছেন। যেমন সুযোগ পেয়েছেন, তেমন ফাটিয়ে অভিনয় করেছেন। কিন্তু সবার সঙ্গে তো ব্যাটে-বলে এমনটা হচ্ছে না। তো মনে হয়েছে, আশা নিয়ে বসে থেকে লাভ নেই। যদি ডাক আসে, আসবে; না এলেও সমস্যা নেই। জীবনটা অনেক বড়। শিল্প শুধু অভিনয় না, অনেক কাজে আছে। রাজশাহীতে ভ্রমণের প্রজেক্টে আমি ঢেলে কাজ করেছি। অনেক ক্রিয়েটিভ কাজ করেছি। ভাগ্যিস অভিনয় থেকে আমার মন উঠে গিয়েছিল। সেই সুবাদে এ রকম একটা সুযোগ পেয়েছি। অভিনয় একেবারেই মিস করি না আমি।</p> <p> </p> <p><strong>অভিনয়ে তাহলে সর্বশেষ কী করলেন?</strong></p> <p>গেল মাসেই ‘অতিথি’ প্রজেক্টের একটি অডিও ভিজ্যুয়াল করলাম। একজন পর্যটকের ভূমিকায় আছি। সংগীতায়োজন করেছেন ইমন চৌধুরী। ‘অতিথি’ প্রজেক্টের মূল বিষয়ই হলো আন্তরিকতা। ৩ নভেম্বর অডিও ভিজ্যুয়ালটি প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি। আমার ক্যারিয়ারে মনে হয় আর কোনো টিভিসি দিয়ে এ রকম সাড়া পাইনি। এখন নতুন নতুন টিভিসির প্রস্তাব আসছে, তবে স্ক্রিপ্ট পড়ে ভালো না লাগায় ফিরিয়ে দিচ্ছি।</p> <p> </p>