<p>একজন দাঁড়িওয়ালা লোক। দেখলে মাতাল টাইপের মনে হবে। ব্যালান্স কম। কখনো টিভি দেখছেন, আবার কখনো ডাইনিংয়ে গিয়ে খাবার আনছেন। কিছুক্ষণ পরপর হাতে থাকা ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন। সময় দেখে কখনো সোফায় শুয়ে পড়ছেন, আবার কিছুক্ষণ পর উঠছেন। এবার উঠে দোতলার একটি রুমে চলে যান। সেখানে পায়চারি করেন, অ্যাপ্রন পরেন। এরপর বিছানার নিচে পড়ে থাকা অজ্ঞান এক ছেলেকে তুলে টেবিলের ওপর শুইয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর একটি ইলেকট্রিক করাত দিয়ে ছেলেটিকে কেটে টুকরো টুকরো করেন। তারপর সেই টুকরো একটি বাক্সে ভরে নিচে নামিয়ে আনেন।</p> <p>এই পুরো ঘটনাটি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিল এক মেয়ে। সে তার বন্ধুকে উদ্ধারের জন্য সেই বাড়িতে এসেছিল। দোতলার আরেকটি রুমে মেয়েটির বন্ধুকে বেঁধে রাখা হয়েছে।</p> <p>এটি ইন্দোনেশিয়ার একটি হরর-থ্রিলার সিনেমার গল্প। সিনেমাটির নাম ‘মনস্টার’। পুরো সিনেমায় মাত্র দুটি সংলাপ—ছেলেটি একবার মেয়েটিকে নাম ধরে ডাকে এবং মেয়েটিও একবার ছেলেটিকে। এর বাইরে আর কোনো সংলাপ নেই। কিন্তু এই সংলাপহীনতা গল্পের সাসপেন্স, আতঙ্ক আর ভয়ংকর পরিবেশে কোনো প্রভাব ফেলেনি।</p> <p>লোকটি যখন ছেলেটিকে করাত দিয়ে কাটছিল, তার চোখ-মুখ দেখে মনে হচ্ছিল যেন তিনি একটি কেক কাটছেন। রক্তের দৃশ্য তাকে এতটুকুও কাতর বা দুর্বল করেনি, যা সিনেমাটিকে আরও ভয়ংকর করে তুলেছে।</p> <p><strong>গল্পের শুরু</strong></p> <p>সিনেমার গল্প শুরু হয় দুজন বন্ধুকে নিয়ে—একজন ১২-১৩ বছরের মেয়ে এলানা এবং ১০-১২ বছরের ছেলে রবিন। তারা ভালো বন্ধু। মেয়েটির সাইকেলের পেছনে বসে রবিন স্কুলে যায়, ললিপপ খায়, ঘুরে বেড়ায়। গেমের দোকানে গিয়ে তারা ভিডিও গেম খেলে।</p> <p>একদিন গেম খেলা শেষে মেয়েটি বাইরে এসে দেখে রবিন নেই। খুঁজতে গিয়ে দেখে একটি প্রাইভেট কারের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন একজন লোক। লোকটির চেহারা ভয়ংকর। হঠাৎ লোকটি এগিয়ে এসে মেয়েটির হাত-মুখ বেঁধে গাড়ির পেছনের ডেকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলে। সেখানে আগে থেকেই হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় রবিন ছিল।</p> <p>লোকটি তাদের একটি নির্জন বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর মেয়েটিকে গাড়ির ডেকে আটকে রেখে ছেলেটিকে দোতলার একটি রুমে বন্দি করে। এলানা ডেক থেকে বেরিয়ে নিজেকে মুক্ত করার চেষ্টা করে। তবে বন্ধুর কথা ভেবে সে বাড়ি থেকে পালায় না বরং রবিনকে উদ্ধার করার জন্য সেখানে থেকে যায়।</p> <p><strong>সিনেমার উত্তেজনা</strong></p> <p>সিনেমায় মাত্র চারটি প্রধান চরিত্র—এলানা, রবিন, জ্যাক (অপহরণকারী), এবং তার স্ত্রী মুর্নি। কিশোরী এলানা তার বন্ধুকে উদ্ধারের জন্য নিজের জীবন বাজি রাখে। একসময় জ্যাক যখন সোফায় ঘুমিয়ে পড়েন, এলানা আস্তে করে কর্নার টেবিল থেকে চাবি নিতে যায়। ঠিক তখনই জ্যাক তাকে ধরে ফেলে।</p> <p>তীব্র উত্তেজনার মধ্যে এলানা ডাইনিং রুমে দৌড়ে যায় এবং একটি ছুরি হাতে নেয়। ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে জ্যাকের বুকের মধ্যে ছুরিটি ঢুকে যায়। মাতাল জ্যাক মেঝেতে পড়ে যান। এলানা দেখে, জ্যাক আর বেঁচে নেই।</p> <p>ঠিক সেই মুহূর্তে জ্যাকের স্ত্রী মুর্নি বাসায় ফিরে আসেন। এখন এলানা কী করবে? এক বিপদ থেকে মুক্তি পেয়ে সে আরেক বিপদে পড়ে যায়।</p> <p><strong>সিনেমার বিশেষত্ব</strong></p> <p>এলানার সাহস এবং বুদ্ধিমত্তা তাকে সেই ভয়ংকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে পুলিশ সময়মতো পৌঁছে, যা তাকে বাঁচিয়ে দেয়। এলানা তো সহজেই ডেক থেকে পালিয়ে নিজের জীবন বাঁচাতে পারত, কিন্তু বন্ধুর প্রতি গভীর মায়া এবং দায়িত্ববোধ তাকে থামতে দেয়নি। সে তার বন্ধুকে বিপদের মুখে ফেলে চলে যেতে পারেনি। বন্ধুর জন্য নিজের জীবন বাজি রাখার এমন নিঃস্বার্থ উদাহরণ সত্যিই বিরল।</p> <p>‘মনস্টার’ সিনেমাটি আমেরিকান হরর-থ্রিলার ‘দ্য বয় বিহাইন্ড দ্য ডোর’ এর রিমেক। তবে ইন্দোনেশিয়ান পরিচালক রাকো প্রিজান্তো এটিকে নতুন আঙ্গিকে নির্মাণ করেছেন, যেখানে সংলাপ একেবারেই নেই। সিনেমার শুরুতেই দর্শকদের সতর্ক করা হয়, যাতে তারা না ভাবেন টিভির কোনো ত্রুটি হয়েছে।</p> <p>এই সিনেমাটি ভয়, সাসপেন্স এবং বন্ধুত্বের এক অসাধারণ উদাহরণ। সংলাপ ছাড়াই একটি গল্প এতটা প্রাণবন্ত হতে পারে, তা ‘মনস্টার’ দেখলেই বোঝা যায়।</p>