<p>শুধু পেশার খাতিরে নয়, শিল্পটাকে মনের ভেতরে নিবিড়ভাবে ধারণ করেন কাজী নওশাবা আহমেদ। এর ছাপ তার অভিনয় ও ব্যক্তিগত জীবনে স্পষ্ট। বর্তমানে পালন করছেন ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্যের দায়িত্ব। দাপ্তরিক কাজ ও অভিনয় প্রসঙ্গে তার সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম</p> <p><strong>অভিনয়, পরিবার, সামাজিক কাজ, আবার সার্টিফিকেশন বোর্ড, সব মিলিয়ে খুব ব্যস্ত সময় যাচ্ছে নিশ্চয়ই?</strong></p> <p>অভিনয়ে গত পাঁচ-ছয় মাসে আমি কোনো কাজ করিনি। একটি ফটোশুট করেছি শুধু। এর বাইরে ফিল্ম সার্টিফিকেশন বোর্ড, শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টি বোর্ড আর পাপেট থিয়েটার—এসব নিয়ে ব্যস্ত আছি।</p> <p><strong>দাপ্তরিক কাজের অভিজ্ঞতা কি ছিল আগে?</strong></p> <p>আমি সব সময় নিজের মতো থাকা মানুষ। এটা নতুন অভিজ্ঞতা। বড় কথা হলো, আমি বোদ্ধা নই, চলচ্চিত্রপ্রেমী। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও শুধু চলচ্চিত্র করব বলেই শোবিজ ছাড়তে পারিনি। এখন দায়িত্বের জায়গা থেকে প্রতিদিন ছবি দেখছি, অনেক কিছু শিখছি। বিভিন্ন বিষয় ভালো করে বোঝার চেষ্টা করছি। প্রস্তাব আসার পর একটু দ্বিধায় ছিলাম, করব কি না। পরে ভাবলাম, দেশের জন্য রাজপথেও কখনো ভয় পাইনি। সুতরাং চলচ্চিত্রের ভালোর জন্য ক্ষুদ্র কিছুও যদি করতে পারি, সেটাই আমার জন্য শান্তির।</p> <p><strong>ছবি দেখতে গিয়ে কিছুদিন আগে একটু অস্বস্তির মধ্যেও পড়েছেন...</strong></p> <p>ওই ছবিগুলো বেশ আগের, ২০০৬ সালের। আগে থেকেই নিষিদ্ধ ছিল। তবু আমরা দেখেছি, কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পরে বুঝলাম, যথেষ্ট যুক্তিসংগত কারণেই নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আমরা অবশ্যই স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। তাই বলে যাচ্ছেতাই তো করা যায় না। সিনেমা হলো সবচেয়ে বড় শক্তিশালী মাধ্যম। সেটার প্রতি সম্মানবোধ তো থাকতে হবে।</p> <p><strong>সার্টিফিকেশন বোর্ড হয়েছে বটে, কিন্তু সেটার পূর্ণাঙ্গ বিধিমালা এখনো হয়নি। এদিকটায় কোনো অগ্রগতি হলো?</strong></p> <p>বর্তমানে আমাদের কোনো সংসদ নেই। সার্টিফিকেশনের গেজেট অনেক আগেই পাস হয়েছে, কিন্তু বিধিমালা নেই। সেটার জন্য সংসদ থাকা জরুরি। তবু আমরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে বিভিন্ন পরামর্শ-প্রস্তাব দিচ্ছি। অর্থাৎ কাজটা চলছে। আগে সপ্তাহে তিন দিন ছবি দেখতাম, এখন চার-পাঁচ দিনও ছবি দেখছি, বৈঠকে বসছি। আমাদের এখনকার অগ্রাধিকার হলো, ছবি যেন নিয়মিত মুক্তি পায়। প্রেক্ষাগৃহগুলো যাতে সচল থাকে। ইন্ডাস্ট্রির চাকা ঘুরতে দিতে হবে।</p> <p><strong>সার্টিফিকেশন বোর্ডে আপনি কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলো সম্পর্কে বলুন...</strong></p> <p>লাইটম্যান থেকে শুরু করে পরিচালক, বিশাল টিম কাজ করে ছবিতে। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই জানি, শিল্পী-কুশলীরা পারিশ্রমিক পাননি, কিন্তু ছবি মুক্তি পেয়ে গেছে। পারিশ্রমিক নিয়ে টালবাহানা করা, এটা নতুন কিছু নয়, সবাই জানে। একটা শ্রেণির পারিশ্রমিক হয়ে যাওয়ার পর অন্যদের রীতিমতো ধরনা দিতে হয়, ‘ভাই কবে পেমেন্ট পাব!’ একটা ইন্ডাস্ট্রিতে তো এটা চলতে পারে না। যেহেতু রাষ্ট্র আমাকে সুযোগ দিয়েছে, সুতরাং যারা এ রকম বঞ্চনার শিকার হন, আমি কেন তাদের কথা বলব না? শিল্পের প্রতি আমাদের আত্মার টান আছে, তা সত্য। কিন্তু এটা তো আমাদের পেশাও। আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছি মাদক বা ধূমপান বিষয়ে। আমাদের ছবিতে ধূমপান কিংবা মদ্যপানের দৃশ্যে ছোট করে নিচে সতর্কবার্তা লেখা ওঠে, যেটা কেউ পড়েও না। ভারতে যেমন অক্ষয় কুমারের মতো অধূমপায়ী তারকাকে দিয়ে একটি প্রচারণামূলক ভিডিও বানানো হয়েছে, সেটা ছবির শুরুতে, মাঝে চালানো হয়; আমরাও এ রকম কিছু করতে পারি কি না। এ ছাড়া ছবির দৃশ্যে যেন প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো হয়। এ ক্ষেত্রে শিল্প নির্দেশকদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বোঝানো, তারা যেন এদিকটায় সচেতন হন। একটি বালতি বা মগ দেখানোর প্রয়োজন হলে, সেটা যেন প্লাস্টিকের না হয়। কেউ বাজারে যাচ্ছে, প্লাস্টিকের ব্যাগ যেন না দেখানো হয়। এতে আমাদের ছবির ভাবমূর্তি বিশ্বদরবারে আরো উজ্জ্বল হবে। আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছি প্রাণী বিষয়ে। হলিউডে যেমন একটি সংস্থা আছে, তারা সার্টিফিকেশন দেয় যে এ ছবিতে কোনো প্রাণীর ক্ষতি করা হয়নি। তখনই শুধু ওই ছবি মুক্তির অনুমতি পায়। আরো অনেক দেশে, ইন্ডাস্ট্রিতে এ রকম সংস্থা আছে। আমাদের এখানেও যেন এ রকম একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়। বোর্ডের অন্য সদস্যরাও এসব প্রস্তাবে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।</p> <p><strong>‘পেট কাটা ষ’র পর এর দ্বিতীয় মৌসুম ‘২ ষ’-তেও অভিনয় করলেন। অভিজ্ঞতা কেমন?</strong></p> <p>আমার মা, কাছের বন্ধুরা আমাকে ভূতনি বলে ডাকে! কারণ চাঁদনি রাতে আমি সারা রাত বসে থাকি, জ্যোত্স্না উপভোগ করি। যখন সিসিমপুরে ইকরি চরিত্র করতাম, সেটাও তো একরকম বাচ্চা ভূত। সেই বাচ্চা ভূত এখন বড় হয়ে গেছে আর কি। তবে আমি খুব নিরীহ ভূত। আমি ভৌতিক কনটেন্ট একদমই দেখি না। মেয়ের সঙ্গে বেশি ছবি দেখা হয়, ফলে এখন এনিমেটেড ছবি বেশি দেখি। আর আমার ব্যক্তিগত পছন্দ ক্লাসিক ছবি। আর ‘পেট কাটা ষ’ নিয়ে বললে, নুহাশ হুমায়ূন [নির্মাতা] হরর কনটেন্ট একদম ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে। ওর লেখনী, নির্দেশনা অসাধারণ। দর্শককে খোঁচা দিয়ে ভয় দেখায় না সে। ওর লেখা পড়লে, নির্মাণ দেখলে এমনিতেই শিরদাঁড়া ঠাণ্ডা হয়ে যাবে। বয়সের তুলনায় হি ইজ ভেরি ন্যাচারাল। অভিনেত্রী হিসেবে আমি খুবই আনন্দিত যে কেউ আমাকে এভাবে এক্সপ্লোর করল। ২০১৮ সালের পর থেকে আমি সেভাবে সুযোগ পাইনি। আমার প্রতিভা শুধু থিয়েটারেই একটু মেলে ধরতে পেরেছি, বড় বড় চরিত্র পেয়েছি। তবে পর্দায় আমার উপস্থিতি একদমই কম, এটা আপনারা সবাই জানেন। নুহাশ যখন আমাকে কাজটির প্রস্তাব দেয়, আমি খুব আনন্দিত হয়েছি। কারণ এ গল্পটা আমাকে ঘিরে। অভিনয়ের অনেক জায়গা দিয়েছে। অনেক দিন পর স্ক্রিনে দীর্ঘ সময় থাকার সুযোগ পেয়েছি। এ জন্য নুহাশের প্রতি কৃতজ্ঞ।</p>