<p>চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংগীতশিল্পী সৈয়দ অমির ‘মাতাল’ গানের ভিডিওতে ভিন্ন লুকে হাজির হয়ে প্রশংসা কুড়িয়ে ছিলেন জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা আঁচল আঁখি। গানটি প্রকাশ্যে আসতেই দর্শক লুফে নেয়। ১০ মাসে গানটির ভিউ ২০ মিলিয়ন। এরপর এই জুটিকে আরও বেশকিছু গান-ভিডিওতে দেখা যায়। বাস্তব জীবনেও জীবনসঙ্গী এই জুটি। আর তাদের সুখী দাম্পত্য নজর লাগার মতোই। প্রেম, সংসার, অভিনয়ে দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছেন আঁচল-অমি জুটি। তাদের পথচলার গল্প তুলে ধরেছেন কামরুল ইসলাম।</p> <p>গল্পটার শুরু হয় ২০২০ সালের শেষ দিকে। তখন পৃথিবীজুড়ে মহামারি করোনা। সেই বিবর্ণ, দুর্বিষহ সময় কাকতালীয়ভাবে এক করে দিয়েছে আঁচল-অমিকে। গায়ক অমি তার ‘ও জান রে’ গানের ভিডিওতে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেন আঁচলকে। সিনেমার জনপ্রিয় নায়িকা আঁচল। মিউজিক ভিডিও করবেন—ঘুণাক্ষরেও এমনটা ভাবেননি। অথচ কাজটি তো করলেনই, এর কিছু দিন পর সেই অমির সঙ্গে জীবনটাও নেন বেঁধে!</p> <p>আঁচল বলেন, ‘আমি মিউজিক ভিডিও করতাম না। যদিও কোনো কাজই ছোট না, তবে আমি চলচ্চিত্র নিয়েই স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলাম। অমি আমাকে নানাভাবে বোঝায়, গল্পনির্ভর ভিডিও, সেখানে সিনেমার নায়িকাই দরকার। এ ছাড়া শুটিংয়ের পুরো টিমও সিনেমার। পরে গানটি শুনে আমার খুব ভালো লাগে। তবু কাজটি করতে আগ্রহ পাইনি। তাই বড় অঙ্কের পারিশ্রমিক চেয়েছিলাম। কারণ মিউজিক ভিডিওতে এত বাজেট থাকে না। মজার ব্যাপার হলো, আমি যে পারিশ্রমিক চেয়েছি, তাতেই রাজি হয়েছিল অমি। ওর এমন প্রবল আগ্রহ দেখেই কাজটি করেছিলাম।’</p> <p>গানচিত্রটি প্রকাশের আগে মুঠোফোনে দেখেছিলেন আঁচল। তার মতে, এমন নির্মাণ তার অভিনীত কোনো সিনেমার গানেও দেখতে পাননি। মুগ্ধতা নিয়ে তাই অমিকে ধন্যবাদ জানান। দুজনের আলাপ বাড়ে, সেটা গড়ায় বিয়েতে। প্রস্তাবটাও আসে অমির পক্ষ থেকে। প্রেম নয়, সোজা বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন গায়ক। প্রথমে অবাক হয়েছিলেন আঁচল, পরে দুই পরিবারের সম্মতিতেই এগিয়েছে বাকি পথ।</p> <p>একসময় চলচ্চিত্রে ব্যস্ত সময় পার করলেও সাম্প্রতিক সময়ে রুপালি পর্দায় প্রায় অনুপস্থিত। যে কয়টা কাজ করেছেন, সিংহ ভাগই স্বামী অমির সঙ্গে। অমির গানে, অমির সঙ্গেই অভিনয়। আবার এসব গান প্রযোজনাও করছেন তারা নিজেরা। একদম ফ্যামিলি প্রোডাকশন। তাদের যৌথ গানগুলো সাড়াও পায় বিপুল। এই যেমন ৩০ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছে ‘দুই চাক্কার সাইকেল’। এরই মধ্যে গানটির ভিউ ছাড়িয়েছে ২৩ লাখ। গতকাল সন্ধ্যার তথ্য অনুসারে, ইউটিউবে মিউজিক ট্রেন্ডিংয়ে (বাংলাদেশ) রয়েছে শীর্ষে।</p> <p>আঁচল বলেন, “আমরা একসঙ্গে অনেক গান করেছি, এমন নয়। খুব স্পেশাল গানগুলো ও আমাকে নিয়ে করে। যেগুলো একদম রোমান্টিক, এ রকম তিন-চারটি গান করেছি। তবে কিছু দিন আগে মালয়েশিয়ায় গিয়ে আটটি গানের শুটিং করেছি। এর মধ্যে প্রথম গান হিসেবে ‘দুই চাক্কার সাইকেল’ প্রকাশ করা হয়েছে। আরো সাতটি গান আসবে।”</p> <p>ঘরের মানুষের সঙ্গে বাইরে গিয়ে ক্যামেরার সামনে অভিনয়, ব্যতিক্রম এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন আঁচল-অমি। অভিনেত্রীর ভাষ্য, ‘এটা অন্য রকম ভালোলাগার অনুভূতি। হাজব্যান্ড কিংবা সহশিল্পী, কোনো কিছুতেই ওর জড়তা নেই। প্রথমদিকে ও অভিনয়ে একটু কাঁচা ছিল, আমি শিখিয়ে দিয়েছি। ওর নিজেরও শেখার আগ্রহ ছিল। ও নাচ পারত না, আর আমি নৃত্য শেখা মেয়ে। তো আমি ওকে সাহস দিয়েছি, নাচের অনুশীলন করিয়েছি। বাসায় আমরা একসঙ্গে প্র্যাকটিস করতাম। এখন ওর ড্যান্সও খুব পারফেক্ট হয়। যখন ওর সঙ্গে শুটিং করি, কোনো ঘনিষ্ঠ দৃশ্য করি, তখন সেটা বাস্তবিকভাবেই অনুভব করি। অন্য শিল্পীদের সঙ্গে তো অভিনয় করে এক্সপ্রেশন ফুটিয়ে তুলতে হয়। তবে এখানে অভিনয় করা লাগে না, অটোম্যাটিক হয়ে যায়।’</p> <p>এই পারিবারিক কাজে পরস্পরের পরিবার থেকেও মেলে ইতিবাচক সমর্থন। যদিও অমির মায়ের মৃত্যুর পর শ্বশুরবাড়ির আমেজ পাননি আঁচল। এ নিয়ে তার মন খারাপ হয় বটে। তবু আগলে নেন অমি। মিলেমিশে জীবনের অঙ্কটা কষে চলেছেন তারা। ঘরোয়া জীবনের চিত্রটা জানিয়ে আঁচল বলেন, ‘ঘরের কথা কী বলব! ও পুরো বাচ্চাদের মতো। ছোট্ট বাচ্চারা যেমন নানা আবদার করে, এটা দাও, ওটা দাও। এ রকম বাচ্চাসুলভ আচরণ করে। আর প্রত্যেকটা কাজে আমাকে সহযোগিতা করে। সকালে ঘুম থেকে কখনোই আমাকে ডাকে না। বেশির ভাগ সময় ও আগে ওঠে নিজেই নাশতা তৈরি করে, পরে আমাকে ডাকে। ঘর ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে রান্না, সবেতেই সহযোগিতা করে। ওর রান্নাও বেশ মজা, বিশেষ করে মুরগি দারুণ রান্না করে। সব মিলে আমি সংসারজীবনে আসলেই অনেক সুখী।’ </p> <p>প্রশ্ন তো আরো আছে। সিনেমার ব্যস্ত নায়িকা এখন এমন ঘরোয়া প্রকল্পে সীমাবদ্ধ হয়ে গেলেন কেন? এর উত্তরে দুটি বিষয় জানিয়েছেন আঁচল। প্রথমত, যেসব ছবির প্রস্তাব আসে, সেগুলো তার পছন্দ হয় না। মানহীন ছবি করে সমালোচনা কুড়াতে রাজি নন তিনি। অন্য কারণ রাজনীতি। আঁচলের ভাষ্য, ‘২০১০ সালে অভিষেকের কয়েক বছরের মধ্যেই আমি জনপ্রিয় নায়কদের সঙ্গে ছবি করে ফেললাম, বেশ কয়েকটা ভালো ভালো ছবি হয়ে গেল। কিন্তু তখন সিনেমার রাজনীতি বুঝতাম না। এখনকার বোধ-বুদ্ধি যদি তখন থাকত, তাহলে আমার ক্যারিয়ারে অনেক ছবি থাকত। বড় অনেক ছবিতে যুক্ত হওয়ার পরও আমাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কেন বাদ দিত, তা নিয়েও মাথা ঘামাতাম না। অন্তরালের কারণ যদি বুঝতাম, তাহলে আজকের পরিস্থিতিতে কখনো আসতে হতো না।’ </p> <p>করোনা মহামারির পর প্রায় ১০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন আঁচল। দুর্ভাগ্যক্রমে একটিও মুক্তি পায়নি! তিনি মনে করেন, এর মধ্যেও রয়েছে ফিল্ম পলিটিকস। এফডিসির সংগঠন নিয়ে দলাদলির কারণে বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পায়নি। আবার শাপলা মিডিয়ার তিনটি ছবি করেছেন, সে প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে এখন ঝুলছে অঘোষিত তালা। এখনো প্রায়ই ডাক আসে সিনেমার। তবে পছন্দসই গল্প পান না বলে ফিরিয়ে দেন আঁচল। আগ্রহ এখনো অটুট, সিনেমায় কিংবা ওটিটিতে ভালো কাজ পেলে অবশ্যই করবেন।</p>