<p>রান্না কি শুধুই নারীর কাজ, নাকি পুরুষেরও সমান দায়িত্ব রয়েছে? আমাদের সমাজে রান্নার দায়িত্ব বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রান্না তো কোনো নির্দিষ্ট লিঙ্গের জন্য বাধ্যতামূলক কাজ নয় বরং এটি একটি মৌলিক দক্ষতা, যা যেকোনো মানুষ শিখতে পারে। যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রান্নার কাজের ধারণাতেও এসেছে পরিবর্তন। এখন প্রশ্ন ওঠে, রান্না আসলে কার করা উচিত?</p> <p><strong>রান্নার প্রয়োজনীয়তা এবং সুবিধা</strong></p> <p>রান্না একটি মৌলিক জীবন দক্ষতা, যা খাদ্য প্রস্তুত এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো মানুষ, নারী বা পুরুষ, রান্নার দক্ষতা আয়ত্ত করলে নিজের এবং পরিবারের খাদ্য চাহিদা মেটানো সহজ হয়। তা ছাড়া রান্না করতে জানার মধ্যে রয়েছে আত্মনির্ভরশীলতার শিক্ষা। কারো ওপর নির্ভর না করে নিজের খাবার নিজে তৈরি করতে পারা একদিকে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে, অন্যদিকে পারিবারিক সম্পর্কেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।</p> <p><strong>ঐতিহ্যবাহী দৃষ্টিভঙ্গি</strong></p> <p>আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিতে রান্নার কাজকে মূলত নারীদের জন্য নির্ধারিত কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। পুরুষদের ওপর সাধারণত বাইরের কাজ এবং আয়ের দায়িত্ব চাপানো হয়েছে। ফলে পরিবার ও সমাজে একটি ভ্রান্ত ধারণা গড়ে উঠেছে যে রান্না শুধু নারীদেরই কাজ। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে পুরুষরা রান্নার দায়িত্ব নিতে শুরু করেছেন, যা পারিবারিক সমতার ভিত্তিকে শক্তিশালী করছে।</p> <p><strong>আধুনিক সমাজ ও পরিবর্তনশীল ভূমিকা</strong></p> <p>বর্তমানে অনেক পুরুষ রান্নাকে নিজের দক্ষতার অংশ হিসেবে দেখছেন। বিশেষত চাকরিজীবী নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে রান্নার কাজ ভাগাভাগি করা একটি সময়োপযোগী ও সুষ্ঠু সমাধান। এতে দুজনই তাদের কর্মজীবন এবং পারিবারিক জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন। রান্না শিখে নিজের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মাধ্যমে পুরুষরা সম্পর্কের প্রতি আরো গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে পারেন এবং পরিবারের প্রতিটি সদস্যই সমান মর্যাদা ও মূল্যায়ন পায়।</p> <p><strong>রান্না নিয়ে সমাজের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি</strong></p> <p>আধুনিক সময়ের রান্না আর শুধুই প্রয়োজন নয়; এটি একটি শিল্প ও সৃজনশীলতার মাধ্যমও হয়ে উঠেছে। অনেক পুরুষ রান্না করে নিজেদের সৃজনশীলতার প্রকাশ ঘটান এবং রান্নায় নিজেদের দক্ষতা অর্জন করে থাকেন। পেশাদার রাঁধুনি বা শেফদের মধ্যে অনেক পুরুষই বর্তমানে সফলতার সঙ্গে রান্নার জগতে অবস্থান করছেন, যা প্রমাণ করে যে রান্নার কাজ শুধু নারীর জন্য সীমাবদ্ধ নয়।</p> <p><strong>রান্নার দায়িত্ব ভাগাভাগির সুবিধা</strong></p> <p>একটি পরিবারের মধ্যে রান্নার কাজ ভাগাভাগি করলে পারিবারিক স্নেহ ও বন্ধন আরো দৃঢ় হয়। কাজ ভাগাভাগির মাধ্যমে নারীরা যেমন কিছুটা বিশ্রাম নিতে পারেন, তেমনি পুরুষদেরও বাড়তি সময় পরিবারের সঙ্গী হয়ে কাটানোর সুযোগ তৈরি হয়। পরিবারে সমতা ও সম্মান বজায় রাখতে রান্নার কাজ ভাগাভাগির প্রক্রিয়া অত্যন্ত কার্যকর।</p> <p><strong>সঠিক উত্তর : রান্না সবার জন্য</strong></p> <p>রান্না করা কারো একক দায়িত্ব নয়, এটি একটি সম্মিলিত দায়িত্ব। নারী বা পুরুষ, উভয়েরই রান্না শেখা উচিত এবং সময়-সুযোগমতো এই কাজ ভাগাভাগি করা উচিত। পারিবারিক দায়িত্ব ভাগাভাগির মাধ্যমে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্পর্ক উন্নত হয়। রান্না শেখার মাধ্যমে নারী ও পুরুষ উভয়েই হতে পারেন আরো দায়িত্বশীল ও আত্মনির্ভরশীল।</p> <p>অতএব রান্না করার কোনো বাধ্যতামূলক লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন থাকা উচিত নয়। বরং পরিবারে উভয়েই রান্নার দায়িত্ব নেওয়া একটি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, যা সম্পর্ককে আরো দৃঢ় ও সমতার ভিত্তিতে গড়ে তোলে।</p>