আমি স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের মধ্যে তিরিশের ঘরে থাকা নারী দেখেছি, আবার তার চাইতে অনেকটা কম বয়সী রোগীও পেয়েছি। আমার অভিজ্ঞতায় সবচেয়ে কম বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর বয়স ছিল ১৭ বছর।
সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি ২০ জন নারীর মধ্যে অন্তত একজন স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। এই হার অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে নতুন স্তন ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছরের হিসেবে ৩২ লাখেরও বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা।
ভারতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোগীদের বয়সসীমার ক্ষেত্রেও পরিবর্তন দেখা গিয়েছে। আগে ভারতে ৪০-৫০ বা তার বেশি বয়সের নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঘটনা রিপোর্ট করা হলেও, ৪০-এর কম বয়সের নারীদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
অ্যাপোলো রিসার্চ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেড় লাখ ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে দেখেছে, কমবয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে । অ্যাপোলোর স্ক্রিনিং থেকে জানা গিয়েছে, আক্রান্ত ২৫ শতাংশের বয়স ৩৯ বছর বা তারও কম।
দিল্লির অ্যাপেলো হসপিটালের সার্জিক্যাল অনকোলজিস্ট রোকেয়া আহমেদ মীর বলেছেন, ভারতে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার গত পাঁচ বছরে বেশ বেড়েছে এবং এটা উদ্বেগজনক বিষয়।
আরো পড়ুন
রেড কার্পেটে ‘ভুল’ ইংরেজি বলায় শ্রাবন্তীকে কটাক্ষ!
কম বয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে একাধিক কারণ থাকতে পারে।
ক্যান্সার গবেষক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'অনকোলিঙ্ক ইন্ডিয়া'র প্রতিষ্ঠাতা ড. অমিত কান্তি সরকার বলেন, খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, শারীরিক পরিশ্রম কমে যাওয়ার কারণে ওবেসিটি, ধূমপান, পরিবেশ দূষণের মতো একাধিক ফ্যাক্টর এই প্রবণতা বাড়িয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি জেনেটিক ফ্যাক্টর তো আছেই।
জীবনযাত্রাকে একটা বড় ফ্যাক্টর বলে উল্লেখ করেছেন ডা. রোকেয়া আহমেদ মীর বলেন, জাঙ্কফুড নির্ভর ডায়েট, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, ধূমপানের মতো ফ্যাক্টর যা ব্রেস্ট ক্যান্সারসহ অন্যান্য অনেক ধরনের রোগ এবং ক্যান্সারের প্রবণতাকে বাড়িয়ে দেয়।
অন্যদিকে, ডা. প্রভাকর বলেন, আগে মনে করা হতো স্তন ক্যান্সারের ঘটনা শহরে বেশি দেখা যায়। কিন্তু এখন তা নয়। যেমন উত্তরাখণ্ডের গ্রামেও কমবয়সীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার লক্ষ্য করা গিয়েছে।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই রোগ দ্রুত শনাক্ত হওয়া দরকার। ডা. গৌতম মুখার্জী বলেন, আর্লি ডিটেকশন খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে একাধিক ফ্যাক্টর থাকে। রোগের ধরন এবং স্টেজের ওপর নির্ভর করে কী চিকিৎসা হবে, কতদিন লাগতে পারে এবং সম্ভাব্য আউটকাম কী হতে পারে, তা বলা যেতে পারে।
আরো পড়ুন
বিচ্ছেদের পরও ছায়াসঙ্গী সুস্মিতার প্রাক্তন!
কিন্তু চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অনেক ক্ষেত্রেই ব্রেস্ট ক্যান্সার যতদিনে শনাক্ত হয়, ততদিনে ক্যান্সার অ্যাডভান্স স্টেজে চলে যায়।
ডা. চতুর্বেদী বলেন, আমরা সব সময় মেয়েদের এই বিষয়ে সচেতন করার চেষ্টা করি যে, স্তনে কোনোরকম অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কিন্তু অনেক সময়ই মেয়েরা দেরি করে ফেলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, স্তনের আকারের পরিবর্তন, স্তন বা বগলে ব্যথাহীন পিণ্ড, স্তনের ত্বকের পরিবর্তন, স্তনবৃন্ত থেকে নিঃসরণ ইত্যাদি ক্যান্সারের উপসর্গ হতে পারে।
আরো পড়ুন
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে যা বললেন ফখরুল
এ কারণে সচেতনতা বৃদ্ধি, সেল্ফ এগজামিনেশন, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, অবহেলা না করা মতো খুঁটিনাটি বিষয় এই রোগ মোকাবিলার ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া জীবনযাত্রার পরিবর্তন, নিয়মিত শরীরচর্চা, সুষম আহার অনেক রোগের সম্ভাবনাই কমিয়ে দিতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু একইসঙ্গে তারা জানিয়েছেন, রোগ ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ক্ষেত্রেই আগে চিকিৎসা শুরু হলে অ্যাডভান্স স্টেজের জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।